Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

৩১ আগস্ট, ২০২৩ ০৮:৩০ পূর্বাহ্ণ

দক্ষ মানবসম্পদ কেন প্রয়োজন

গতিতে জীবন আর স্থিতিতে মরণ। যার জীবনে গতি আছে তার জীবনে উন্নয়ন আছে। যার জীবনে গতি নেই তার জীবনে উন্নয়ন নেই। গতিশীল জীবন মানেই ব্যস্ততা, কর্মমুখরতা, সফলতা, সৃষ্টি এবং এগিয়ে যাওয়া। অপরদিকে গতিহীন জীবন মানে ব্যর্থতা, স্থবিরতা, ধ্বংস, হতাশা এবং হারিয়ে যাওয়া। সুতরাং প্রতিযোগিতার এই বিশ্বে টিকে থাকতে হলে এবং সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হলে জীবনে গতি লাগবেই। গতি থাকলেই উন্নয়ন হবে, উন্নয়ন আসবে। আর গতি না থাকলে উন্নয়ন হবে না। দক্ষ জনশক্তিতে সমৃদ্ধ দেশ উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যায়। অপরদিকে দক্ষ জনশক্তির অভাবে দেশ উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ে। উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন দক্ষতা, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, পরিশ্রম, দূরদর্শিতা এবং কাজের প্রতি একাগ্রতা। আর এই উন্নয়নকে যদি টেকসই করতে হয় এবং দীর্ঘমেয়াদে এগিয়ে নিতে হয় তাহলে দক্ষ মানব সম্পদ অপরিহার্য।
এ পৃথিবীতে আজ যত উন্নয়ন তার সবই মানুষেরই অবদান। মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমেই জীবন আজ এত উন্নত, সহজ, সুন্দর এবং সাবলীল। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে পৃথিবী আজ উন্নয়নের এ পর্যায়ে এসেছে। কৃষিকাজের মাধ্যমে মানুষেরা উৎপাদন করছে শত ধরনের খাদ্য, যাতে কোটি কোটি মানুষের মুখে অন্ন জুটাচ্ছে। মানুষেরা তৈরি করেছে সড়ক, মহাসড়ক, সেতু এবং রেলপথ। যানবাহন হিসাবে তৈরি করেছে হরেক রকম গাড়ি, লঞ্চ, ট্রেন এবং বিমান, যার মাধ্যমে মানুষ অতি অল্প সময়েই পাড়ি দিচ্ছে হাজার মাইল দূরের পথ। মানুষেরাই তৈরি করেছে বিদ্যুৎ, মোবাইল, টেলিভিশন, ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশন, কম্পিউটারসহ হাজারো উপকরণ- যা মানুষের জীবনকে সহজ এবং উন্নত করছে। রোগ নির্ণয় এবং নির্মূলের জন্য আজকের পৃথিবীতে বিদ্যমান হাজারো ঔষধ, চিকিৎসা সেবা এবং হাসপাতাল সবই মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং উন্নয়নের প্রতিফল। পরিধানের জন্য হরেক রকম দৃষ্টি নন্দন কাপড় মানুষেরই তৈরি। চোখের চশমা, হাতের ঘড়ি আর পায়ের জুতা মানুষেরই তৈরি। মানুষেরাই শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। মানুষেরাই তৈরি করেছে লেখার জন্য কাগজ, ছাপানোর জন্য প্রিন্টিং মেশিন। বিনোদনের জন্য গড়ে তুলেছে দৃষ্টি নন্দন পার্ক এবং চিড়িয়াখানা। বসবাসের জন্য সুরম্য অট্টালিকা মানুষের হাতেই নির্মিত। চীনের প্রাচীর, ভারতের তাজমহল আর মিশরের পিরামিড, সবই মানুষের দক্ষতায় সৃষ্টি। নিত্য প্রয়োজনীয় শত ধরনের পণ্য মানুষেই তৈরি করছে। এসব উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও মানুষের হাতেই তৈরি। মহাকাশে পাঠানো ডজন ডজন স্যাটেলাইট এবং এদের কার্যক্রম বিজ্ঞানীদের দক্ষতারই অবদান। সুতরাং মানুষ হচ্ছে সৃষ্টি এবং উন্নয়নের কারিগর। মানুষের মাঝে অফুরন্ত সম্ভাবনা এবং শক্তি লুকিয়ে আছে। এ সম্ভাবনা এবং শক্তিকে বিকশিত করতে হবে।
মানুষই যন্ত্রের চালক। স্বাভাবিকভাবেই মানুষই উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। কারণ মানুষই একটি মেশিন তৈরি করেছে এবং মানুষই আবার সেই মেশিন পরিচালনা করছে। সুতরাং মানুষের দক্ষতা ছাড়া মেশিনটি তৈরি যেমন সম্ভব নয়, ঠিক তেমনি মানুষের দক্ষতা ছাড়া মেশিনটির সঠিক অপারেশনও সম্ভব নয়। মানুষই কম্পিউটার তৈরি করেছে এবং অপারেট করছে। মানুষের দক্ষতা ছাড়া কম্পিউটার তৈরি, পরিচালনা এবং এর থেকে যথাযথ আউটপুট পাওয়া সম্ভব নয়। একইভাবে মানুষই বিমান তৈরি করেছে, এটি পরিচালনা করছে এবং এর মাধ্যমে আকশে পথে আটলান্টিক পাড়ি দিচ্ছে। মানুষের দক্ষতা ছাড়া বিমান তৈরি এবং পরিচালনা সম্ভব নয়। অদক্ষ পাইলট বিমানটির নিরাপদ পরিচালনায় শুধু যে অক্ষম তা নয়, বরং তার অদক্ষতায় বিমানটি দুর্ঘটনায় পতিত হয় এবং মানুষের প্রানহানি ঘটে। এক্ষেত্রে পাইলটও মরে এবং বিমানটিও ধ্বংস হয়। মানুষই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি এবং পরিচালনা করছে। মানুষই বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এবং পরিচালনায় দক্ষ প্রকৌশলী লাগবেই। জাহাজ নির্মান এবং এর পরিচালনায় দক্ষ মেরিন ইঞ্জিনিয়ার লাগবেই। সাগরের বুক চিরে জাহাজের চলাচল মানুষের দক্ষতায় সম্ভব হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে সকল অত্যাধুনিক মেশিনারী মানুষের হাতেই তৈরি। একইভাবে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে যে মেশিনসমুহ রয়েছে, তার সবই মানুষের তৈরি। বিভিন্ন পণ্য তৈরির জন্য হাজারো প্রকৃতির মেশিনারী মানুষের দক্ষতায় নির্মিত। একইভাবে এই মেশিনসমূহ মানুষই পরিচালনা করছে এবং এসব মেশিনের সাহায্যে নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য উৎপাদন করছে। দক্ষ মানুষ ছাড়া এই সব মেশিন তৈরি এবং সুষ্ঠু পরিচালনা যেমন সম্ভব নয়, ঠিক তেমনিভাবে এইসব মেশিন থেকে ভালো ফলাফলও পাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং উন্নয়নের পিছনে দক্ষ জনশক্তি যে প্রধান কারিগর সে বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদন্ড এবং জাতি গঠনের হাতিয়ার। কিন্তু শিক্ষকরা যদি দক্ষ না হয় এবং তাদের মধ্যে দক্ষতার ঘাটতি থাকে তাহলে ঐসব শিক্ষক দ্বারা উন্নত জাতি গঠন সম্ভব নয়। অদক্ষ শিক্ষক থেকে ছাত্ররা ভালো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না। সুস্থতা মানব জীবনের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। মানুষের দেহ যখন বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়, তখন সুস্থতার জন্য ডাক্তারের কাছে যায়। কিন্তু একজন ডাক্তার যখন দক্ষ হয় তখনই তিনি কেবল রোগ নির্ণয়ে সক্ষম হয় এবং তার চিকিৎসায় দেহ সুস্থ হয়। কিন্তু ডাক্তার যখন দক্ষ হয় না, তখন সেই ডাক্তারের পক্ষে রোগ নির্ণয় এবং নির্মূল কোনোটাই সম্ভব হয় না। সুতরাং রোগ নির্মূলের মাধ্যমে দেহের সুস্থতার জন্য দক্ষ ডাক্তারের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। একইভাবে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার জন্য দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার ও অপরিহার্য। একজন দক্ষ প্রকৌশলীই একটি ইঞ্জিনকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারে। একদল দক্ষ প্রকৌশলীর পক্ষেই নদী আর সাগরের বুকে সেতু তৈরি করা সম্ভব। একইভাবে ব্যবসা বাণিজ্যে সফলতা অর্জন করতে হলে দক্ষতা লাগবেই। রাজনীতির ময়দানে সফলতার জন্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দক্ষতা লাগবেই। তা না হলে আপনি পিছিয়ে পড়বেন। যুদ্ধের ময়দানে জিততে হলে অত্যাধুনিক অস্ত্রের পাশাপাশি কৌশল ও প্রয়োজন। আর একজন দক্ষ ব্যক্তির পক্ষেই কেবল সঠিক কৌশল প্রণয়ন সম্ভব। মোট কথা, উন্নয়ন, সফলতা এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দক্ষ মানব সম্পদের কোনো বিকল্প নেই। একটি অট্টালিকা যেমন মজবুত পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে, ঠিক তেমনি একজন ব্যক্তি, একটি প্রতিষ্ঠান এবং এমনকি একটি জাতির উন্নয়ন এবং সফলতা ও মানুষের দক্ষতার উপর দাঁড়িয়ে থাকে। এদেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানে আজ বিরাট সংখ্যক বিদেশি প্রকৌশলী কাজ করছে, যারা প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মুদ্রা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আজকে যদি দেশীয় প্রকৌশলীরা এসব কাজে দক্ষ হতো তাহলে বিদেশি প্রকৌশলীদের এদেশে কাজের জন্য আনতে হতো না। তখন প্রচুর পরিমাণ মুদ্রা সাশ্রয় হতো, যা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে। একইভাবে বর্তমানে প্রতি বছর প্রচুর লোক চিকিৎসার জন্য বিদেশ যায়। কিন্তু এদেশের চিকিৎসকরা যদি আরো দক্ষ হতো এবং চিকিৎসা সেবা আরো উন্নত হতো, তাহলে কোনো বাংলাদেশি নাগরিককে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে হতো না। ফলে দেশের মুদ্রা দেশেই থাকত এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতো।
শুধু যে শিল্পগত, যান্ত্রিক এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য মানুষের দক্ষতার প্রয়োজন তা নয়, বরং একটি সুখী জীবন এবং উন্নত সমাজ গঠনেও মানুষের দক্ষতার প্রয়োজন। যে কোনো ধরনের সফলতার জন্য দক্ষতা লাগবেই। সেটা ব্যাংক, বীমাসহ যে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান হোক আর কল কারখানা বা যে কোনো ধরনের পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানই হোক। একটি ট্রেডিং কোম্পানির সফলতার জন্য ও দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। একটি সার্ভিস ইন্ড্রাস্ট্রির সফলতার জন্য ও দক্ষ জনবল প্রয়োজন। এমনকি একটি পরিবারের সফলতা, সুখ এবং উন্নয়নের জন্য ও পরিবারের লোকজনের দক্ষতা প্রয়োজন। একটি সুখী দাম্পত্য জীবন গঠন করতে হলেও স্বামী এবং স্ত্রীর দক্ষতা প্রয়োজন। স্বামী-স্ত্রীর দক্ষতা পরিবারের সমস্যাসমূহ এবং তাদের মধ্যকার মনোমালিন্য দূর করতে সহায়তা করে। ফলে দাম্পত্য জীবনে বন্ধন সুদৃঢ় হয় এবং সংসার সুখের হয়। দক্ষতার কারনে স্বামী-স্ত্রী তাদের মধ্যকার সমস্যাসমূহ দূর করতে পারে। অপরদিকে স্বামী-স্ত্রীর অদক্ষতায় পরিবারে সমস্যা বাড়ে এবং তাদের মধ্যকার মনোমালিন্য বৃদ্ধি পায়। ফলে দাম্পত্য জীবনের বন্ধন হালকা হয় এবং সংসার দুঃখের হয়। এমনকি অদক্ষতার কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ও ঘটে, কারণ তারা সমস্যাসমূহ সমাধান করতে পারে না। দক্ষ পিতামাতাই তাদের সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারে এবং আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। কারণ সন্তানকে গাইড করতে হলে দক্ষতা লাগে।
জীবন কুসুমার্স্তীণ নয়। জীবনে প্রতিকূলতা, প্রতিবন্ধকতা এবং সমস্যা থাকবেই। আর এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই জীবনে সফলতা অর্জন করতে হয়। একজন দক্ষ ব্যক্তির পক্ষেই কেবল এসব প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। সুতরাং দক্ষতা লাগবেই এবং দক্ষতা অর্জন করতেই হবে। আর দক্ষতা অর্জনের জন্য পড়াশোনা, পরিশ্রম এবং সাধনার কোনো বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, দক্ষতা কখনো হঠাৎ করে অর্জন করার বিষয় নয়। দক্ষতা অর্জনের শর্টকার্ট কোনো পথ নেই। আবার দক্ষতা অর্থ দিয়ে বাজার থেকে কেনার মতো কোনো জিনিসও নয়। এটা বাজারেও কিনতে পাওয়া যায় না। আবার একজনের দক্ষতা আরেকজনের কাছে ট্রান্সফার করার কোনো সিস্টেমও নেই। দক্ষতা জিনিসটা অর্জন করতে হয় এবং এটা অর্জনের বিষয়। নিয়মিত পড়াশোনা, প্রশিক্ষণ, কাজ, কাজের অভিজ্ঞতা এবং বিভিন্ন ধরনের ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করেই মানুষ দক্ষতা অর্জন করে। দায়িত্ব পালন করেই মানুষ দক্ষতা অর্জন করে। আছাড় খেয়েই মানুষ হাঁটা শেখে এবং পানি খেয়েই মানুষ সাঁতার শেখে। গাড়ি চালাতে চালাতেই একজন ড্রাইভার গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করে। লেখালেখি করতে করতেই একজন দক্ষ লেখকের জন্ম হয়। বক্তৃতা দিতে দিতেই একজন দক্ষ বক্তার সৃষ্টি হয়। একইভাবে গান গাইতে গাইতেই একজন গায়কের কণ্ঠ গানের জন্য দক্ষ হয়ে ওঠে। অভিনয় করতে করতেই একজন অভিনয় শিল্পী অভিনয়ের ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করে। সুতরাং দক্ষতা অর্জনের জন্য কাজ করতে হবে এবং বড় বড় দায়িত্ব পালন করতে হবে। একটি প্রতিষ্ঠান যদি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তার কর্মীদেরকে দক্ষ করে গড়ে তোলে তাহলে কিন্তু প্রতিষ্ঠানেরই উন্নতি হয়। দক্ষ কর্মীদের কাছ থেকে তখন ভালো আউটপুট পাওয়া যায়। রাষ্ট্র যদি তার জনগণকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তোলে, তাহলে সেই দক্ষ জনশক্তির কর্মে দেশ এগিয়ে যায়। দক্ষ ব্যক্তিরাই প্রতিকূলতাকে মোকাবেলা করতে পারে এবং সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত দিয়ে সমস্যা সমাধান করতে পারে। সুতরাং আজ আমাদেরকে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এ জন্য সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।
লেখক: প্রকৌশলী ও উন্নয়ন গবেষক।

আরো দেখুন