Loading..

প্রকাশনা

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১১:০৪ পূর্বাহ্ণ

ভ্রমণ কাহিনি

বাটু কেইভ,মালয়েশিয়া। প্রকৃতির রহস্যভরা গুহা।

 

৪০ কোটি বছরের পুরনো গুহা! ছুঁয়ে দেখার অনুভূতি নিশ্চয়ই অসাধারণ হবে! কিন্তু মালয়েশিয়ার গোম্বাক এলাকার সেলেংগরে অবস্থিত বাটু গুহা বা Batu Caves যখন পৌঁছালাম তখন আমার আহত হাঁটুর এক মাস পার হয়নি। দোতলার বেশি উঠতে মানা ডাক্তারের।কয়েক সিঁড়ি উঠলেই যন্ত্রণা পুরো পা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। অথচ চোখের সামনেই রংধনু রঙে সাজানো অদ্ভুত সুন্দর ২৭২ টা সিঁড়ি। বাটু গুহা হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

পুরো পাহাড়টিই অনেক সুন্দর। চুনাপাথরের পাহাড়টির মধ্যে কোটি কোটি বছরে তৈরী হয়েছে গুহাগুলো। আর তার ভেতরে আছে মন্দির। প্রকৃতির এক বিরাট বিস্ময় এই গুহা। করুণ চোখে উপরের দিকে তাকিয়ে এবারের মতো উপরে উঠার আশা ছেড়ে দিয়ে সিঁড়ির ডান পাশে ১৪০ ফু্ট উঁচু বিশাল মূর্তির দিকে এগিয়ে গেলাম। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুরুগান মূর্তি এটি, বাংলায় আমাদের কার্তিক ঠাকুর। নিচেই আরও কিছু মন্দির আছে।সেগুলো দেখে এলাম।মন্দিরের ভেতর দক্ষিণ ভারতের একটা বিয়ের অনুষ্ঠানের সাক্ষীও হয়ে এলাম। অনেক অচেনা দেবতার মূর্তি দেখতে দেখতে এক জায়গায় গণেশ ঠাকুরকে দেখতে পেয়ে একেবারে ঘরের ছেলেকে কাছে পেলাম টাইপ ফিলিংস হল।

চত্বর জুড়ে অজস্র কবুতর,হাত থেকে খাবার খেয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই সেখান থেকে সরে আসা খুব কঠিন। চোখ চলে যাচ্ছিলো বারবার মূল গুহামুখের দিকে। বিরাট দৈত্যের মুখের মতো সেই হা তে মানুষ ঢুকছে বেরুচ্ছে।

মালয়েশিয়া ট্যুরের এই মাস্টার প্ল্যানটা দিদির মেয়ে স্বপ্নীল এর করা। সে তার মালয়েশিয়া ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে কখন কোথায় যাব সে বিষয়ে একেবারে টাইপ করা একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়েছিল ঢাকা এয়ারপোর্টে। আর বারবার করে বলে দিয়েছে কষ্ট করে হলেও যেন কিছু জায়গা দেখে আসি; বাটু কেইভ তার মধ্যে একটা। মেয়ে আর মেয়ের বাবাকে বললাম, তোমরা যাও আমি নিচে অপেক্ষা করছি। কিন্তু তারা আমাকে ফেলে যাবে না।দুজনেরই কথা আমি চেষ্টা করলে পারব। মেয়ের বাবা একবার বললে মেয়ে বলে তিনবার। পারবে,পারবে করে স্লোগান ধরে ফেললো সে। সাহসে ভর করে মেয়ের হাত ধরে পা রাখলাম সিঁড়িতে। হাঁটু প্রতিবাদ করছে,আমি এক হাত সিঁড়ির হাতলে রেখে নিজেকে টেনে তুলছি।

অনেক সময় নিয়ে,থেমে থেমে উঠে একসময় নিজেকে আবিষ্কার করলাম বাটু কেভের মূল গুহার সামনে ! আর এই পুরো সময়টায় স্থানীয় শাখামৃগরা ছিল সাথে। একটাকে একটু মাথায় আদর করে দিলাম,সে কী বুঝল কে জানে, বানরীয় একটা হাসি দিয়ে আমার হাতে একটা থাবড়া বসিয়ে দিল!

এই গুহাকে মন্দির গুহাও বলা হয়। আশেপাশে শুধু মূর্তি আর মূর্তি।গুহার ভেতরের একটি জায়গায় উপরের দিকে রয়েছে বিশাল ফাঁক। ওই ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো আসে ভেতরে। এক চিলতে আকাশও দেখা যায়,বৃষ্টির পানিও আসছে পথে।সেই আলোতে এতো বড় গুহার অন্ধকার দূর হয় না। গুহার ভেতরে তাই বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পাহাড় আমার বরাবরের ভালো লাগার স্থান,কেমন রহস্যময় লাগে সব! নিজেকে আদিম মানুষ ভাবতেও ভালো লাগে! আন্দামানের চুনাপাথরের গুহার সৌন্দর্য এখনও চোখে ভাসে। তার সাথে এবার যুক্ত হলো কোটি কোটি বছরের পুরনো গুহা বাটু কেভস।

আরো দেখুন