Loading..

শিক্ষায় অগ্রযাত্রা

২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১০:০৪ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবী!২২২২(নতুন পৃথিবীতে আবাহন )

@পৃথিবী!২২২২@

   

 আগামীকাল  ২৫ ডিসেম্বর। সরকারি ছুটির দিন। তাই কণিকার অফিস বন্ধ। সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাসায় যাবে। কণিকা একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরি করে। বাসা থেকে প্রায় হাজার মাইল দূরে ছোট্ট একটি  শহর। পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত শহরের নাম মিথুয়ান। দুর্গম পাহাড়ি এ অঞ্চলের প্রাচীন বাসিন্দারা ক’বছর আগেও বৈদ্যুতিক বাতির আলো দেখে বিস্মিত হতো। কিন্তু আজ? আধুনিক সুযোগ-সুবিধার  কোনটির ঘাটতি রয়েছে সেখানে বাস্তবে দেখলে সেটির প্রশ্নাতীত হয়ে যাবে  সেখানে? সকল ধরনের  আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কিন্তু কণিকা সেখানকার খাবার দাবারের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। সেখানকার হোটেল গুলোতে খাবার-দাবারের মান খুবই ভালো। কিন্তু স্বাদ? কণিকার রুচির সাথে কোনোভাবেই মানায় না। তাই বাইরের কোনো খাবার সে খায় না। 

  মাকে ফোন করে বলে দিল আগামীকাল সে বাসায় আসবে। কণিকা বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। হাজার মাইল দূরে হলেও যোগাযোগের আধুনিকতম সুযোগ সুবিধার কারণে ঘন্টাখানেকের মধ্যে সে তার কর্মস্থল থেকে নিজ বাড়িতে পৌঁছাতে পারে। আধুনিক বোয়িং ক্যাপসুল 

 লিফটে করে বাসায় যাওয়ার জন্য অনলাইনে টিকিট সংগ্রহ করলো। 

 আজ ২৫ ডিসেম্বর। সকাল থেকেই কণিকার জন্য তার পছন্দের সকল খাবার রান্না করার জন্য লেগে পড়েছেন মা। ইতিমধ্যে কণিকা বাসায় পৌঁছেছে। ঘন্টাখানেক বিশ্রাম করার পর সে নিজেকে ক্ষুধার্ত মনে করলো। 

মা কয়টা বাজে? সে জিজ্ঞেস করল। গোসল সেরে নে, রান্নাবান্না রেডি।  তুই খেতে আয়। 

আমার ঘড়িটা খোঁজে  পাচ্ছিনা মা? কণিকা জিজ্ঞেস করলো। ঘড়ির জন্য এত ব্যস্ত হওয়া লাগবে না -উত্তর দিলেন মা। তবুও সে ঘড়ির জন্য খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়ল। খেতে আয় কণিকা মা ডাকলেন। এখন আর ঘড়ি খোঁজতে হবে না। ঘড়ির জন্য এত পাগল হয়েছিস কেনো? খাওয়া দাওয়ার পর আমিও তোকে ঘড়ি খোঁজার জন্য সাহায্য করবো। আরে মা আমার ঘড়িটি কোথায়? অস্থিরভাবে মাকে জিজ্ঞেস করল কণিকা। যেন অনেকটা ড্রাগ এডিক্টেড মানুষের  মতই উচ্ছৃঙ্খল  হয়ে পড়েছে  ঘড়িটির জন্য। 

কথা শুনিস না! বিরক্ত হয়ে ধমকের সুরে মা কণিকাকে খাবার খাওয়ার জন্য আহ্বান  করলেন। 

 কিন্তু এদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই কণিকার। তাকে ঘড়িটি খোঁজে পেতেই হবে। 

মা অনেকটা অবাক হয়ে গেলেন। ঘড়ির  জন্য তার এত আকুলতা কেন? 

কি এমন জাদু আছে এই ঘড়িতে ? মায়ের মনের জিজ্ঞাসা কণিকার দিকে। 

মা কণিকার কক্ষে প্রবেশ করলেন। এই নে তোর ঘড়ি। শান্ত,ভদ্র কণিকার প্রকৃত রূপ ফিরে পেলো কনিকা- মা লক্ষ্য করলেন। 

ডান হাতে ঘড়িটা পরে নিল কনিকা। মা একটি বিশেষ কাজের জন্য বাড়ির বাইরে চলে গেলেন। আমি বাইরে গেলাম। খেয়ে নিস। বিকাল ৪টা। মা বাসায় ফিরে দেখলেন, টেবিলে রক্ষিত খাবারে কেউ স্পর্শই করেনি।

তুই এখনো খাসনি? রাগত স্বরে মায়ের জিজ্ঞাসা।

না, মা, আমার খিদে নেই- উত্তর দিল কণিকা।

গতকালও কিছুই খাসনি, আজ সারাদিন তুর পেটে একটি দানাও পড়লোনা, এখন বলছিস খিদে নেই। হাজার প্রশ্নের দানা পাচ্ছে মায়ের মনে। সুস্থ-সবল মানুষ কিন্তু তার খিদে পায় না কিংবা কোনো কিছু খেতে চায় না এর কারণ কী? আবেগচিত্তে, শংকিত মনে  মায়ের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে এই প্রশ্ন? 

মা যেন চিন্তার মহাসমুদ্রে ভাসছেন। কিন্তু উত্তরের কোনো কূল খোঁজে  পাচ্ছেন না। 

  প্রযুক্তির উৎকর্ষের কারণে মানুষের জীবন-জীবিকা  পাল্টে যাচ্ছে। দ্রুত পরিবর্তনশীল এই পৃথিবীতে জীবের জৈবিক চাহিদার উপরও প্রযুক্তির প্রভাব পড়ছে প্রতিনিয়ত। 

মা তোমাকে এত চিন্তিত লাগছে কেন? কণিকার প্রশ্ন। নতুন পৃথিবীর মানুষ কণিকা। প্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে সে অভিযোজিত। তাই মায়ের চিন্তার কারণ তার কাছে জানা আছে। আমার হাতের ঘড়িটাই আমাকে খাবার দিচ্ছে। বিজ্ঞানের বৈচিত্র্যতা এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে আমাকেও অভিযোজিত হতে হবে সময়ের প্রয়োজনে। 

মুচকি হাসলেন মা।

আরো দেখুন