Loading..

শিক্ষায় অগ্রযাত্রা

২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০৫:৫৪ অপরাহ্ণ

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কেন এ ধোঁয়াশা:-

#নতুন_কারিকুলাম 

#IamTheSolution 


নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে  চমকার  বিশ্লেষণ করেছেন আমার পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক 

মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ 

প্রফেসর জনাব দেবাশীষ দেবনাথ স্যার। 

( স্যারের টাইমলাইন থেকে নেওয়া এই লেখা পড়ার অনুরোধ করছি --------


নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কেন এ ধোঁয়াশা:-


জ্ঞানীরা জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা দিবেন, যৌক্তিক তর্ক করবেন, পক্ষে-বিপক্ষে বলবেন তাতেই বের হয়ে আসবে সঠিক কর্মপরিকল্পনা। আমি সাধারণ মানুষ সাধারণভাবেই একটি অসাধারণ বিষয় নিয়ে সাধারণ মন্তব্য করতে চাই। মানব সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকে মানব সন্তানকে মানব সম্পদে পরিণত করার জন্য যে সকল উপাদান ব্যবহৃত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদানটি হচ্ছে শিক্ষা। শিক্ষার বিকল্প কোন কিছু এখনো আবিষ্কার হয়নি তবে শিক্ষা পদ্ধতির বিকল্পের কোন অভাব নেই। যুগে যুগে নতুন নতুন কারিকুলাম প্রবর্তিত হয়েছে, যুগের চাহিদায় সে সকল কারিকুলামে আবার পরিবর্তনও হয়েছে। হবেই কারণ এ বিশ্বে কোন কিছুই চিরস্থায়ী নয়। দার্শনিক হিরোক্লিটাস তাইতো বলেছিলেন, "পরিবর্তনই সব।"


বর্তমান সরকার যে সকল মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন, করতে যাচ্ছেন তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো নতুন শিক্ষাক্রম। ২০২৩ সাল থেকে বাস্তবায়নকৃত নতুন প্রবর্তিত এই যে শিক্ষাক্রম তা নিয়ে অনেক ধোঁয়াশা তৈরি করা হচ্ছে, এমন কি বিরোধিতাও করা হচ্ছে! একেবারেই সহজ ভাবে যদি বলি যে, সরকারের কি এমন ঠেকা পড়েছে বা কি এমন স্বার্থ রয়েছে যে একটি প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন এনে ঝামেলায় জড়াতে যাবে! সরকার কি ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এটা করছেন না কি এটা করলে সরকার দলীয় কর্মীরাই কেবল লাভবান হবে নাকি এ শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে এ সরকারকে আর কখনো ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না! তাহলে কেন সরকার এ মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করলেন? নিশ্চয়ই জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এ কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। কেবল আবেগতাড়িত হয়ে নয় কিংবা কেবলই বিরোধিতার স্বার্থেও নয় বরং যুক্তি খাটিয়ে কথা বলুন। যদি আপনি প্রমাণ করতে পারেন যে বর্তমান প্রণীত এ শিক্ষাক্রম আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আগামির পথ চলা বাঁধাগ্রস্হ করবে কিংবা আমাদের আর্থসামাজিক অগ্রগতিকে পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য করবে, চলতে থাকা উন্নয়নের রোল মডেল থেকে বাংলাদেশ ছিটকে পড়বে তাহলে সরকার নিশ্চয় এ কারিকুলাম নিয়ে নতুনভাবে ভাববে।


আটার কোটি জন অধ্যূষিত ছোট একটি দেশ বাংলাদেশ, অর্থনৈতিক অবস্থাও ছোট পরিসরের। এমন একটি দেশ তার শিক্ষা ব্যবস্হা রাতারাতি ফিনল্যান্ড কিংবা সুইজারল্যান্ডের পর্যায়ে নিয়ে আসবে তা কল্পনা করা যায়, বাস্তবে নয়! বিশাল জনসংখ্যার এ দেশের সকল নাগরিককে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার চিন্তা যারা করেন আমি তাদের সাথে একমত নই। আমি বরং বলি সবার জন্য উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন নাই, সম্ভবও নয়। উচ্চশিক্ষা হতে হবে সীমিত, নির্বাচিত এবং  অবশ্যই মেধাবীদের জন্য যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণে চরমভাবে আগ্রহী। অন্যদের বিভিন্ন ধরনের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হব এবং সে অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে নিয়োগ করা যাবে।


শিক্ষা ক্ষেত্রে কেবলমাত্র শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভাবলেই চলবে না বরং শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের নিয়েও ভাবতে হবে। অতিশয় পরিতাপের বিষয় বিশ্বের অন্যান্য দেশে যেখানে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নে শিক্ষার্থীরা বিভোর থাকে সেখানে আমাদের দেশে শিক্ষকতা ছেড়ে অন্য পেশায় যাবার জন্য অনেকেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে! কেন! এর মূল কারণ কেউ কি অনুসন্ধান করেন না কি করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন। যত দিন পর্যন্ত না শিক্ষায় সবচেয়ে মেধাবীদের আনা না যাবে ততদিন পর্যন্ত কোন পরিবর্তনই কাজে আসবে না, টেঁকসই হবে না। শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে, তাঁদের আর্থিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে, আজকের শিক্ষার্থী আগামি দিনে শিক্ষক হওয়ার জন্য মন প্রান দিয়ে নিজেকে গড়ে তুলবে, শিক্ষকতা নামক পেশাটিকে ব্রতে পরিণত করতে হবে তা না হলে কোন পরিবর্তনই কাজে আসবে না। শিক্ষক বলতে আমি প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা সকল পর্যায়ের শিক্ষককে বুঝাচ্ছি। 


আমাদের মনে রাখতে হবে বর্তমান পৃথিবী আর আগের মতো জনবিচ্ছিন্ন কোন গ্রহ নয় বরং বর্তমান বিশ্বকে গ্লোবাল ভিলেজ বলে আখ্যায়িত করা হয়। শিক্ষার মুল উদ্দেশ্য হলো ব্যক্তির অন্তর্নিহিত শক্তিকে প্রস্ফুটিত করা, ব্যক্তিকে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে তোলার জন্য প্রস্তুত করা। সব কিছুই পরিবর্তনশীল, কোন কিছুই স্হায়ী নয়, এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নেয়া অন্যভাবে বললে নিজেকে উপযুক্ত করে তোলার ক্ষেত্রে যুগোপযোগী শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কোন কিছুই যেমন স্হায়ী নয় তেমনি কোন শিক্ষাক্রমই স্হায়ী নয়। মানব সভ্যতা প্রতিনিয়ত যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে মানব সন্তানকেও ঠিক সেভাবেই গড়ে তুলতে হবে। আর এ জন্যই চাই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্হা যা করতে চাচ্ছেন আমাদের বর্তমান অভিভাবক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 


হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে 'সোনার বাংলা' গড়তে চেয়েছিলেন সেই সেনার বাংলা গড়ার লক্ষ্য নিয়েই 'স্মার্ট বাংলাদেশ' বিনির্মানে এগিয়ে যাচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কে স্মার্ট বাংলাদেশে পরিনত করার লক্ষ্যেই বর্তমান কারিকুলাম। সারা বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের দিকে, আমাদেরকেও এর সাথে তাল মিলিয়ে আগাতে হবে না হলে জাতি হিসেবে আমরা পিছিয়ে পড়বো। এ জন্যই প্রয়োজন যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম। এ শিক্ষাক্রমে শিক্ষা ব্যবস্হায় আমূল পরিবর্তন আনবে তাতে সন্দেহ নেই, সন্দেহ হচ্ছে সে সব সন্দেহবাদীদের নিয়ে, স্বার্থান্বেষীদের নিয়ে যারা নিজের স্বার্থের জন্য দেশের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিতে কসুর করেন না।


আপনাদের নিশ্চয় মনে আছে প্রথম যখন এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট গ্রেড পয়েন্টের (জিপিএ) ভিত্তিতে নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হলো সারা দেশ জুড়ে কি পরিমাণ সমালোচনা হয়েছিল! একবার ভাবুনতো বর্তমান সময়ে আপনার কোন সন্তান কিংবা কোন আত্মীয়স্বজন যদি উন্নত কোন দেশে পড়তে চায় তাহলে পুরোনো পদ্ধতির রেজাল্ট কি বাঁধা হয়ে দাঁড়বে না! সরকার যখন নতুন কারিকুলামে হাত দিয়েছেন নিশ্চয় অনেক চিন্তা ভাবনা করে, বিচার বিশ্লেষণ করে, বহির্বিশ্বের কারিকুলাম থেকে অভিজ্ঞতা নিয়েই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সামাজিক পশ্চাৎপদতা, ধর্মীয় কুসংস্কার, কুপমুন্ডুকতা থেকে বেরিয়ে এসে যুগোপযোগী বাংলাদেশ তথা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে প্রনীত শিক্ষাক্রম নিশ্চিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মান্ধাতা আমলের গৎবাঁধা শিক্ষাক্রম থেকে বেরিয়ে এসে যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের যে দূরদর্শী, বাস্তবানুগ, সাহসী সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করেছেন এর জন্য আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহোদয়দের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তাই আসুন বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা না করে, জুজুর ভয় না দেখিয়ে একটি আনন্দময় শিক্ষাক্রমের মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে পথ চলতে, নিজেকে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহস যোগাই, সহযোগিতা করি। আনন্দময় জীবনমুখী শিক্ষা ব্যবস্হায় আমাদের শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করি।


আলো আসবেই, জয় বাংলা।

লেখক -প্রফেসর জনাব দেবাশীষ দেবনাথ 

আরো দেখুন