Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

২০ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪ ০৮:০৫ পূর্বাহ্ণ

রক্তের কথা

প্রথমেই প্রশ্ন রক্ত কী? রক্ত হলো একধরনের তরল যোজক কলা। এরপর প্রশ্ন রক্তের কাজ কী? রক্ত আমাদের দেহে পরিবহনের কাজটি করে থাকে।

ধরো, তোমার শরীরের কোনো একটি অংশে সমস্যা হলো। তুমি কোনো ওষুধ খেলে।

ওষুধটি পাকস্থলী কিংবা ক্ষুদ্রান্ত্রে শোষিত হলো। তারপর ওই নির্দিষ্ট অঙ্গে পৌঁছাবে রক্তের মাধ্যমে এবং সমস্যাটি থেকে মুক্তি মিলবে।

অন্যদিকে লিউকোসাইট বা শ্বেত রক্তকণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণুকে ধ্বংস করে। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ, জীবের জন্য রক্ত কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

রক্ত দেখতে অস্বচ্ছ। এটি লবণাক্ত তরল এবং মৃদু ক্ষারীয়। কিন্তু রক্ত লাল দেখায় কেন? রক্তের লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন নামের একধরনের রঞ্জক পদার্থ থাকে, এর কারণেই রক্তের রং লাল।

রক্তের জন্ম হয় হাড়ের লাল অস্থিমজ্জায়।

রক্ত রক্তরস এবং রক্তকণিকা দিয়ে গঠিত। শতকরা ৫৫ ভাগ হলো রক্তরস এবং ৪৫ ভাগ রক্তকণিকা। রক্তরসের প্রধান উপাদান পানি। এ ছাড়া প্রোটিন, গ্লুকোজ, হরমোন, খনিজ লবণ, অ্যান্টিবডি, বর্জ্য পদার্থ ইত্যাদি রক্তরসে বিদ্যমান থাকে। মোদ্দা কথা, রক্তে বর্ণহীন তরল অংশটিই রক্তরস।

এবার আসি রক্তকণিকা নিয়ে। রক্তে তিন ধরনের রক্তকণিকা থাকে। লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা ও অনুচক্রিকা। মানবদেহে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এটি অক্সিজেন পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তোমরা আগেই জেনেছ, লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন থাকে। এই হিমোগ্লোবিন অক্সিহিমোগ্লোবিন হিসেবে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড পরিবহন করে। এদিকে রক্তে যদি যথেষ্ট পরিমাণ হিমোগ্লোবিন না থাকে তখন রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। বাংলাদেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠী এই রোগে আক্রান্ত।

শ্বেত রক্তকণিকার গড় আয়ু ১-১৫ দিন। এদের হিমোগ্লোবিন থাকে না, তবে এরা নিউক্লিয়াসযুক্ত বড় আকারের কোষ। শ্বেত রক্তকণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু খেয়ে ফেলে।

গঠনগতভাবে শ্বেত রক্তকণিকাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। অ্যাগ্রানুলোসাইট ও গ্রানুলোসাইট। অ্যাগ্রানুলোসাইট দুই রকমের—লিমফোসাইট ও মনোসাইট। লিমফোসাইট অ্যান্টিবডি গঠন করে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে আর মনোসাইট ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু মেরে ফেলে। আবার গ্রানুলোসাইট তিন প্রকার—নিউট্রোফিল, ইওসিনোফিল, বেসোফিল। বেসোফিল হেপারিন নিঃসৃত করে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। অনুচক্রিকার গড় আয়ু ৫-১০ দিন। এরা রক্ত তঞ্চন ও রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। ধরো, তোমার হাতের কোনো স্থান কেটে গেল। রক্ত পড়ছে। তখন অনুচক্রিকাই রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করবে।

 

গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি

লোহিত রক্তকণিকার গড় আয়ু ১২০ দিন। মানুষের লোহিত রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না।

একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তি রক্তে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা প্রতি ঘনমিলিমিটারে প্রায় ৫০ লক্ষ। শ্বেত রক্তকণিকার চেয়ে ৫০০ গুণ বেশি।

মানুষের দেহে প্রতি ঘনমিলিমিটার রক্তে ৪-১০ হাজার শ্বেত রক্তকণিকা থাকে।

রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়ায় ক্যালসিয়াম আয়নও জড়িত থাকে।

 

জ্ঞানমূলক প্রশ্ন

১। ফ্যাগোসাইটোসিস কী?

উত্তর : যে প্রক্রিয়ায় শ্বেত রক্তকণিকা জীবাণু ভক্ষণ করে তাকে ফ্যাগোসাইটোসিস বলে।

২। মানবদেহে অক্সিজেন পরিবহণে কাজ করে কোন রক্তকণিকা?

উত্তর : লোহিত রক্তকণিকা।

৩। কোন শ্বেত রক্তকণিকা হেপারিন নিঃসৃত করে?

উত্তর : বেসোফিল।

৪। রক্তরস কী?

উত্তর : রক্তের বর্ণহীন তরল অংশকে রক্তরস বলে।

৫। দেহে প্রহরীর মতো কাজ করে কোন রক্তকণিকা?

উত্তর : শ্বেত রক্তকণিকা।

 

নিজে চেষ্টা করো

১। অণুচক্রিকা কী?

২। ফাইব্রিন কী?

৩। অ্যান্টিজেন কী?

৪। রক্তচাপ কী?

৫। হিমোগ্লোবিন কী?

 

অনুধাবনমূলক প্রশ্নোত্তর

১। অ্যানিমিয়া বলতে কী বোঝায়?

উত্তর : দেহের রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘনত্ব স্বাভাবিকের তুলনায় কমে যাওয়াকে অ্যানিমিয়া বলে। ভিটামিন বি১২-র অভাবে এ রোগ হয়। শিশু এবং গর্ভধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন নারীদের এ রোগ বেশি হয়। তাই লৌহজাতীয় আমিষ খেতে হবে। মাথাব্যথা, মনমরা ভাব, বুক ধড়ফড় করা ইত্যাদি অ্যানিমিয়ার লক্ষণ।

২। থ্রম্বোসাইট বলতে কী বোঝায়?

উত্তর : থ্র্রম্বোসাইট বা অণুচক্রিকা একধরনের রক্তকণিকা। অণুচক্রিকা রক্ত তঞ্চন বা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। রক্তের কণিকাটি যদি নির্দিষ্ট পরিমাণে রক্তে না থাকে, তবে রক্ত জমাট বাঁধে না। যার কারণে রক্তপাতও সহজে বন্ধ হয় না।

 

আরো অনুধাবনমূলক প্রশ্ন

১। আদর্শ রক্তচাপ বলতে কী বোঝো?

২। রক্ত সংবহনতন্ত্র বলতে কী বোঝো?

৩। থ্যালাসেমিয়া কেন হয়? ব্যাখ্যা করো।

৪। রক্তের রং লাল হয় কেন?

৫। সর্বজনীন রক্তদাতা বলতে কী বোঝায়?

 

সৃজনশীল প্রশ্ন

জীববিজ্ঞানের শিক্ষক তুষার ইশতিয়াক ক্লাসে রক্তের তিনটি কণিকা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, লোহিত রক্তকণিকায় হিমোগ্লোবিন নামক রঞ্জক পদার্থ থাকার কারণে লাল হয়। শ্বেত রক্তকণিকা জীবাণু ভক্ষণ করে আর অণুচক্রিকা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, রক্তদান একটি মহত্ কাজ।

ক। রক্তচাপ পরিমাপের যন্ত্রের নাম কী?

উত্তর : স্ফিগমোম্যানোমিটার।

খ। দেহের প্রহরী বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর ঃ শ্বেত রক্তকণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ভক্ষণ করে। ফলে দেহকে বিভিন্ন রোগজীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে। অন্যদিকে অ্যান্টিবডির মাধ্যমেও শ্বেত রক্তকণিকা দেহকে বিভিন্ন রোগজীবাণুর হাত থেকে রক্ষা করে। তাই শ্বেত রক্তকণিকাকে দেহের প্রহরী বলা হয়।

গ। উদ্দীপকে শিক্ষকের আলোচিত লোহিত রক্তকণিকা ও শ্বেত রক্তকণিকার ৫টি পার্থক্য লেখো।

উত্তর সংকেত : উপরোক্ত আলোচনা ও পাঠ্য বইয়ের আলোকে লোহিত ও শ্বেত রক্তকণিকার পার্থক্য লিখতে হবে। যেমন : লোহিত রক্তকণিকা নিউক্লিয়াসবিহীন কিন্তু শ্বেত রক্তকণিকা নিউক্লিয়াসযুক্ত। 

ঘ।  ‘রক্তদান একটি  মহত্ কাজ’—উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর সংকেত : সামাজিক দায়বদ্ধতার আলোকে রক্তদানের প্রয়োজনীয়তা, রক্ত না পেলে রোগীর জীবন কিভাবে বিপন্ন হবে, রক্ত দেওয়ার পর মানসিক শান্তি লাভ এসব প্রসঙ্গে লিখতে হবে।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি