সহকারী শিক্ষক
১৪ মার্চ, ২০২৪ ০৮:৪৬ অপরাহ্ণ
মুনীর চৌধুরী
ধরন: সাধারণ শিক্ষা
শ্রেণি: পঞ্চম
বিষয়: আমার বাংলা বই
অধ্যায়: দশম অধ্যায়
শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী বিশিষ্ট বাঙালি নাট্যকার, শিক্ষাবিদ, সাহিত্য সমালোচক। ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে রচিত তার বিখ্যাত নাটক ‘কবর’ পূর্ববাংলার প্রথম প্রতিবাদী নাটক। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকের যে কোনো ধরনের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সোচ্চার। ১৯৬৬ সালে রেডিও ও টেলিভিশনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান প্রচারে পাকিস্তান সরকারের নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ করেন। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী তার অগ্রজ এবং জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী ফেরদৌসী মজুমদার তার অনুজা।
মুনীর চৌধুরী ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাড়ি নোয়াখালীর চাটখিলে। তিনি বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুনীর চৌধুরীর পিতা খান বাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরী ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। তার ১৪ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় হলেন মুনীর চৌধুরী। ১৯৪১ সালে মুনীর চৌধুরী ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। তারপর আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে বিএ অনার্স ও এমএ পাস করেন। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলায় ও ১৯৫৮ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাতত্ত্বে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।খুলনার ব্রজলাল কলেজে অধ্যাপনার (১৯৪৭-৫০) মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন। পরে ঢাকার জগন্নাথ কলেজে (১৯৫০) এবং শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ও বাংলা বিভাগে (১৯৫০-৭১) অধ্যাপনা করেন। ১৯৪৯ সালে বামপন্থি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় প্রথমবার গ্রেপ্তার হন এবং বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে আবারও কারাবন্দি হন। ওই অবস্থায় ১৯৫৩ সালে তিনি তার বিখ্যাত নাটক ‘কবর’ রচনা করেন। ‘কবর’ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকায় রচিত। ১৯৫৩ সালের ১৭ জানুয়ারি নাটকটি রচিত হয়; তখন তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দি।মুনীর চৌধুরী ১৯৬৫ সালে কেন্দ্রীয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে বাংলা টাইপরাইটারের জন্য উন্নতমানের কি-বোর্ড উদ্ভাবন করেন। এটি আজও মুনীর অপটিমা নামে পরিচিত। তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে—রক্তাক্ত প্রান্তর, চিঠি, দণ্ডকারণ্য, পলাশী ব্যারাক ও অন্যান্য নাটক। রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকের জন্য তিনি ১৯৬২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান। মুনীর চৌধুরী ১৯৭১ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসার কিছুকাল পরই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তার কিশোর ছেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে চলে যায়। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আদেশে মে-জুন মাসে ইংরেজি বিভাগের প্রধান হিসেবে এবং জুলাই মাস থেকে কলা অনুষদের ডিন হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মুনীর চৌধুরীকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগী আলবদর বাহিনী তার বাবার বাড়ি থেকে অপহরণ করে। সম্ভবত ওইদিনই তাকে হত্যা করা হয়।