Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

১৪ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:৩৪ অপরাহ্ণ

বাংলা ভাষার ব্যাকরণের প্রতি শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি, করণীয় ও ফলাফল।

বাংলা ভাষার ব্যাকরণের প্রতি শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি, করণীয় ও ফলাফল।

রতন ঘরামী

বি.এ (সম্মান), এম.এ (বাংলা), বি.এড, এম.এড

সহকারী শিক্ষক (বাংলা)

সাপলেজা মডেল হাই স্কুল

মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর।

মোবাইল : ০১৭২৭৬৫৩২৯০

ইমেইল : [email protected]

 

 

বাংলা ভাষার প্রাচীন ব্যাকরণ থেকে প্রচলিত আধুনিক বাংলা ব্যাকরণে ব্যবহারিক ও প্রায়োগিক সৌন্দর্য আজও অক্ষুন্ন রয়েছে। ব্যাকরণ ভাষার গতি ও মাধুর্যতা বৃদ্ধি করে। ব্যাকরণ ভাষাকে সুনির্দিষ্ট শৃঙ্খলা প্রদান করে। ব্যাকরণ হলো ভাষার প্রাণ। মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী রচিত ইব্রাহীম খলিল, ডক্টর কাজী দীন মুহম্মদ ও শিবপ্রসন্ন লাহিড়ী সম্পাদিত বাংলা ভাষার ব্যাকরণটি (নবম-দশম শ্রেণি) সর্বজন স্বীকৃত একটি ব্যাকরণ গ্রন্থ। যেটি শুধু নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য নয় বরং সকল বিশ^বিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাসহ চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার জন্যও একটি কার্যকরী গ্রন্থ। আমার শিক্ষকতা জীবনের স্বল্প অভিজ্ঞতা থেকে মনে হয়েছে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (নবম-দশম শ্রেণি) বিষয়টিতে শিক্ষার্থীদের প্রচন্ড ভীতি রয়েছে। ভীতির মূল কারণ হলো জটিলতা, সহজবোধ্য করে শিক্ষার্থীদের নিকট উপস্থাপন না করা। তাদেরকে অনেকগুলো বই পড়ে একটি প্রসঙ্গের মীমাংসা করতে হয়; কোনটি গ্রহণ করবে, কোনটি গ্রহণ করবে না এ নিয়েও তাদের মাঝে সংশয় রয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থীর কাছে এই বইটি ভীতির অন্যতম কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। এই ভীতির প্রথম কারণ মনস্তাত্তি¡ক, ‘বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, ওমা এ অনেক কঠিন আমি পারব না।’ দ্বিতীয় কারণ শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষার ব্যাকরণে আনন্দ খুঁজে পায় না। তৃতীয় কারণ অধিকাংশ শিক্ষক এ বিষয়টিকে আনন্দময় ও রসঘন করে উপস্থাপন করতে অভ্যস্ত নয়। চতুর্থ কারণ বিষয়টি না বুঝে সরাসরি মুখস্থ করে, তাই নির্দিষ্ট সময় পরে ভুলে যায়। ভাষার ব্যবহারে ব্যাকরণিক নিয়ম সঠিকভাবে অনুসরণ না করলে ভাষার সৌন্দর্য বিনষ্ট হয়। প্রাজ্ঞজন থেকে সাধারণ মানুষ অনেকেই ভাষার প্রয়োগে ব্যাকরণের সঠিক নিয়ম-কানুন অনুসরণ করতে উদাসীন। আবার অনেকে চেষ্টা করেও সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারেন না, তার অন্যতম কারণ ব্যাকরণের নিয়ম-কানুনগুলো স্মৃতি নির্ভর।

ছন্দ হলো জীবন্ত প্রাণের সরস উৎস। ছন্দ ও আনন্দময় কৌশল যখন বাংলা ভাষার ব্যাকরণকে সানন্দে আলিঙ্গন করে তখন ব্যাকরণে এক নতুন ধারা পরিলক্ষিত হয়। বিজ্ঞানের ভাষায় কোনো ভারী বস্তু উপরে তুলতে হলে নানা রকমের কৌশল, যন্ত্র বা ফালক্রামের প্রয়োগ করতে হয় যার ফলে বস্তুটি কম শক্তি প্রয়োগে উপড়ে তোলা যায়। ঠিক বাংলা ভাষার ব্যাকরণে ছন্দ ও আনন্দময় কৌশলের প্রয়োগ করলে জোর করে মুখস্থ করতে হবে না। শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই আয়ত্ত¦ করতে পারেবে। ছন্দ ও আনন্দময় কৌশলের প্রয়োগে বাংলা ভাষার ব্যাকরণে নব দিগন্তের দ্বার উন্মোচিত হবে। শিক্ষার্থীদের নিকট বাংলা ভাষার ব্যাকরণ হবে আরও প্রাণবন্ত। শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষার ব্যাকরণকে গুরুগম্ভীর ও শ্মশ্রæমন্ডিত অবস্থায় দেখতে পায় বলেই প্রথম পরিচয়েই ভয় পেয়ে যায়। যে ভয় কিশোর, যুবক থেকে বার্ধক্যে এসে পৌঁছালেও ব্যাকরণের ভীতি রয়ে যায়। এই ভীতি দূর করতে হবে। বাংলা ভাষার ব্যাকরণকে আরও সহজপাঠ্য করতে হবে যেন শিক্ষার্থীরা ব্যাকরণ পাঠেও নিখাদ আনন্দ পায়। মানুষ যেখানে আনন্দ পায়, সেই বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়। উপন্যাস, কাব্য, ছোটগল্প ও নাটক পাঠে যতটা আনন্দ পাওয়া যায়, তা নিঃসন্দেহে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ পাঠে পাওয়া যায় না। তাই বাংলা ভাষার ব্যাকরণকেও নতুন করে ছন্দ ও আনন্দময় কৌশলের মাধ্যমে উপস্থাপন করা সময়ের দাবি। প্রয়োজন কোনো কিছুরই আইন মানে না। তাই বাংলা ভাষার ব্যাকরণকে নতুন ভাবে বিন্যাস করার প্রয়োজন অনুভব করছি। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে প্রত্যেকটি অধ্যায় ছন্দ ও আনন্দময় কৌশলের মাধ্যমে পরিবেশন করে তাদের নিকট সহজপাঠ্য স্বরূপ উপস্থাপন করতে হবে। সে-ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (নবম ও দশম শ্রেণি) গ্রন্থটির ভাষা, বাক্যবিন্যাস যথাসম্ভব অভিন্ন রেখে ছন্দ ও আনন্দময় কৌশলের প্রয়োগ করা হবে বলে আমি মনে করি। ছন্দ ও আনন্দময় কৌশলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষার ব্যাকরণ সম্পূর্ণ আতঙ্কমুক্ত ও ভীতিমুক্ত হয়ে শিখতে পারবে। শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষার ব্যাকরণে আনন্দ খুঁজে পাবে। শিক্ষকবৃন্দ বিষয়টিকে আনন্দময় ও রসঘন করে উপাস্থাপন করতে পারবে। শিক্ষার্থীদের কষ্ট করে স্মৃতির উপর নির্ভর করতে হবে না, কৌশলের মাধ্যমে খুব সহজেই মনে রাখতে পারবে। ছন্দ মানে গতি সৌন্দর্য। ছন্দ ও আনন্দময় কৌশল বাংলা ভাষার ব্যাকরণের সৌন্দর্য ও গতি মাধুর্য বৃদ্ধি করে। ভাষার চমৎকারিত্ব রক্ষা করে। ছন্দ ও আনন্দময় কৌশলের যথার্থ প্রয়োগে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও পাঠকের মাঝে সহজবোধ্য ভাবে ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যাবে। ভাষায় ব্যাকরণের সুশৃঙ্খলিত ব্যবহার পরিলক্ষিত হবে। ব্যাকরণের নিয়মগুলো ছন্দ ও আনন্দময় কৌশলের মাধ্যমে প্রয়োগ করলে স্মৃতির উপর চাপ কম পড়বে এবং ভাষায় ব্যাকরণের প্রয়োগ সুনিশ্চিত হবে।

বাংলা ভাষাকে সুচারুরূপে প্রয়োগ করার জন্য প্রমাণিত গ্রন্থ হলো বাংলা ভাষার ব্যাকরণ। ভাষাকে যথাযথ প্রয়োগের জন্য ব্যাকরণের জ্ঞান আবশ্যক। মাতৃভাষা বাংলায় দক্ষতা অর্জন করতে হলে এ ভাষায় ব্যবহারিক ও সৃজনশীল উভয় দিকেই শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা থাকা জরুরি। এজন্য শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষার ব্যাকরণের প্রতি বিশেষ আগ্রহী হয়ে অধ্যয়ন করা একান্ত আবশ্যক। শিক্ষার্থীদের ব্যাকরণের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টির জন্য ব্যাকরণের দুর্বোধ্যতা দূর করে প্রাঞ্জলভাবে উপস্থাপন করতে হবে। একবিংশ শতাব্দীর দেশ ও সমাজের চাহিদা অনুযায়ী বাংলা ভাষার ব্যাকরণকে গতিশীল, জীবনমুখী ও যুগোপযোগী করার জন্য ছন্দ ও আনন্দময় কৌশলের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিকট তুলে ধরা একান্ত কাম্য।

ছন্দ ও আনন্দময় কৌশলের দ্বারা বাংলা ভাষার ব্যাকরণ পাবে এক নব যৌবন। পরিপূর্ণ ছন্দ ও আনন্দময় কৌশলের ব্যবহার করে বাংলা ভাষার ব্যাকরণকে আরো গতিশীল ও জীবন্ত করে তোলা হবে।  যা শিক্ষার্থীরা সানন্দচিত্তে গ্রহণ করে তাদের ব্যাকরণের তৃষ্ণা নিবারণ করতে সক্ষম হবে। শিক্ষার্থীসহ সাধারন পাঠক বাংলা ভাষার ব্যাকরণ পাঠে আগ্রহ ফিরে পাবে। তারা খুব সহজেই ভাষায় ব্যবহার করতে পারবে। শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় নানা কৌশল ব্যবহার করে ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারবে। বাংলা ভাষার ব্যাকরণের ব্যবহারে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষায় যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তা দ্রæত অর্জিত হবে। শিক্ষর্থীদের ব্যাকরণের ভীতি দূর করে ব্যাকরণেকে সহজপাঠ্য হিসেবে নব জীবন দান করবে। ‘আর নয় ভয়, ছন্দে-আনন্দে হবে ব্যাকরণের জয়’।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি