প্রধান শিক্ষক
০৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ণ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধকে জানি
ধরন: সাধারণ শিক্ষা
শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশ
শেখ হাসিনার বাংলাদেশ
সাক্ষাতকার গ্রহনে |
সহযোগিতায় |
সার্বিক সহযোহিতা ও নির্দেশনায় |
মোছা: মায়া খাতুন ও তার দল ৭ম শ্রেণী
|
মোঃ জুবের আলম সহকারী শিক্ষক তাহের মাধ্যমিক বিদ্যালয় |
মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক তাহের মাধ্যমিক বিদ্যালয় |
শামীমা খাতুন ও তার দল ৭ম শ্রেণী
|
উম্মে ফাতেমা আখতার সহকারী শিক্ষক তাহের মাধ্যমিক বিদ্যালয় |
|
সাদিয়া সুলতানা হানি ও তার দল ৭ম শ্রেণী
|
মোছাঃ লতিফা ফেরদৌস সহকারী শিক্ষক তাহের মাধ্যমিক বিদ্যালয় |
|
|
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ, ঢাকা।
পরিপত্র: স্মারক নং ৩৭.০২.০০০০.১০৮.০৩২.০৭.২০১৯ তারিখ: ১৮/০৭/২০১৯
সাক্ষাতকার তারিখ: ১৪/০৯/২০১৯ থেকে ১৭/০৯/২০১৯
যে সকল সন্মানিত ব্যাক্তির সাক্ষাত গ্রহন করেন তাদের নাম:
১। মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার
বীর মুক্তি যোদ্ধা জনাব মো: আলম জাকারিয়া টিপু , উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার
ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া
২। মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনকারীর সাক্ষাৎকার
জনাব আহত যোদ্ধা- মোহা: আমীর খসরু, ব্যাংক কর্মকর্তা , চন্ডিপুর, ভেড়ামারা, কুস্টিয়া
৩।শহীদ অথবা প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার নিকটজনের সাক্ষাৎকারঃ
জনাব মো: হাবিবুর রহমান, (প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক), চন্ডিপুর, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া।
তার পরিবারের ১৪জন শহীদ হন।
তাহের মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়ার ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীগন ৫টি দলে বিভক্ত হয়ে ১৪/০৯/২০১৯ তারিখ হতে ১৭/০৯/২০১৭ তারিখ পর্যন্ত শিকক্ষার্থীরা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, উম্মে ফাতেমা আখতার, মো: জুবের আলম স্যারের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট এলাকার মুক্তিযোদ্ধা,মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনকারী, ৩।শহীদ অথবা প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার নিকটজনের উপরোক্ত ব্যাক্তিদের সাক্ষাৎকার গ্রহন করেন ।
গত ১৪/০৯/২০১৯ তারিখে জনাব মো: জুবের আলম স্যারের নেতৃত্বে ৭ম শ্রেণীর ১০জনের একটি দল বীর মুক্তি যোদ্ধা জনাব মো: আলম জাকারিয়া টিপু , উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়ার নির্ধারিত প্রশ্রের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার গ্রহন করেন এবং জনাব উম্মে ফাতেমা আখতার, মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে অন্য দলগুলি যথাক্রমে জনাব আহত যোদ্ধা- মোহা: আমীর খসরু, ব্যাংক কর্মকর্তা , চন্ডিপুর, ভেড়ামারা, কুস্টিয়া ও জনাব মো: হাবিবুর রহমান, (প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক), চন্ডিপুর, ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া স্যারের সাক্ষাৎকার গ্রহন করেন । তাহের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীগন চন্ডিপুর বর্ধ্যভূমি, হাডিং ব্রীজ বধ্যভুমি, ফারাকপুর যুদ্ধ ক্ষেত্র সহ ভেড়ামারা উপজেলার যে সব জায়গায় যুদ্ধ হয়ে ছিল এবং গন কবর সমুহ পরিদর্শন করেন ।আলোক চিত্র, ভিডিও করেন । পরিশেষে দলগুলি প্রতিবেদন, আলোক চিত্র, ভিডিও শিক্ষকগনের নিকট জমা প্রদান করেন । শিক্ষকগন সকল ডকুমেন্ট প্রধান শিক্ষক এর নিকট জমা প্রদান করেন । ভেড়ামারা উপজেলার যে সব স্থান পরিদর্শন এবং সাক্ষাত প্রদান কারীদের বর্ননা অনুযায়ী নিন্ম তথ্যাবলী উপস্থাপন করা হল ।
চন্ডিপুর ট্রাজেডিঃ
কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক নিরস্ত্র নিরীহ মানুষকে নৃশংস ভাবে গনহত্যা করা হয়।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ দিবাগত রাত থেকে সমগ্র বাংলাদেশে প্রতিরোধ যুদ্ধ চলছে। ঐদিন রাতে পাকিস্থানী সেনা বাহিনীর ২৭বালুচ রেজিমেন্ট এর ডি কোম্পানী কমান্ডার মেজর সোয়েব সহ সকলে কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। তাদের মূল ক্যাম্প ছিল কুষ্টিয়া জেলা স্কুলে। কুষ্টিয়া জেলার ইপিআর, পুলিশ আনছার ছাত্র জনতার হাতে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী সম্পূর্ন পরাজিত হয়। এবং মেজর সোয়েব সহ সকল সদস্য নিহত হয়। কুষ্টিয়া জেলা সম্পূর্ন স্বাধীন হয় এবং ১৭ দিন এ জেলা পাকহানাদার মুক্ত থাকে। ১৫ই এপ্রিল মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধ ভেঙ্গে পাকহানাদার বাহিনী পাকশি ব্রিজ পার হয়ে পদ্মা নদীর পশ্চিম পারে ভেড়ামারায় উপস্থিত হয় এবং রাত্রে অবস্থান করে। তাদের লক্ষ ছিল কুষ্টিয়া শহর পূর্নদখল করা। দুইটা গ্রুপে ভাগ হয়ে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী কুষ্টিয়া শহর পূর্নদখলের চুড়ান্ত পরিকল্পনা করে একটি গ্রুপ জিকে ক্যানেল ও রেললাইন ধরে দক্ষিন দিকে মিরপুর-পোড়াদহ হয়ে কুষ্টিয়ার দিকে অগ্রসর হয়। অপর গ্রুপটি কুষ্টিয়া-ভেড়ামারা রোড দিয়ে সরাসরি কুষ্টিয়া শহরে প্রবেশ করে। দুই গ্রুপ এর কাজ ছিল দুই পাশ্বের ঘরবাড়ী গানপাউডার দিয়ে পোড়ায়ে দেওয়া ও মানুষ দেখা মাত্র গুলি এবং বড় বড় স্থাপনা সমূহ মর্টার সেল দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া।
চন্ডিপুর গনহত্যা
ভেড়ামারা ও আশেপাশের গ্রাম গুলো থেকে লোকজন পূর্বেই নিরাপদ দুরত্বে সরে গিয়েছিল। চন্ডিপুর পন্ডিতবাড়ী সদস্যরাও ঐদিন অর্থাৎ ১৫ই এপ্রিল সন্ধায় নিরাপদ দুরত্বে চলে যাওয়ার জন্য জিকে ক্যানেল, রেললাইন ও মিরপুর থানা সড়ক পার হয়ে পশ্চিমে চন্দনা নদীর তীরে এসে উপস্থিত হয়। কিন্তু ঐদিন সন্ধায় নদী পার না হতে পেরে পরদিন সকালের জন্য অর্থাৎ ১৬ই এপ্রিল শুক্রবার সকালে নদীর ওপারে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করতে থাকে। এমন সময় সংবাদ পাওয়া যায় পাকহানাদার বাহিনী ভেড়ামারা থেকে পোড়ামাটি নীতি গ্রহন ও চিরুণী অভিযান পরিচালনা করতে করতে দক্ষিন ও পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এবং মানুষ দেখামাত্র গুলি ও ঘরবাড়ী গা ন পাউডার দিয়ে পোড়ায়ে দিচ্ছে। উপায়ন্ত না পেয়ে পন্ডিতবাড়ীর লোকজন নদীর তীরে গভীর বন জঙ্গলে ঢাকা একটি গর্তে আশ্রয় গ্রহন করে। পাক মিলিটারী ঝোপঝাড় তল্লাশী করতে করতে গর্তের কাছে এসে হাজির হয় এবং পৌশাচিক আনন্দে ব্রাশ ফায়ার শুরু করে। মুহুত্বের ভিতরে ১৪টি তাজা প্রান মৃত্যর কোলে ঢলে পড়ে। মৃত্যু নিশ্চিত জেনে মিলিটারিগন সেখান থেকে চলে যায়। পন্ডিতবাড়ীর ঐ দলে ২০/২২ জন লোক ছিল। এর মাঝে মাত্র কয়েকজন আহত ও গুরুতর আহত হন। আহতদের মধ্যে এখনও ৪ (চার) জন জীবিত আছেন।
১৪ শহীদ ও ৫ জন যুদ্ধাহতদের নাম
যারা এ গনহত্যায় শহীদ হয়েছিলেন তারা হলেন
১.শহীদ শফিউদ্দিন, পিতা:- মৃত ফতেহ আলী।
২. শহীদ মশিউর রহমান, পিতা:- শহীদ শফিউদ্দিন।
৩. শহীদ মীর রাবেয়া খাতুন, স্বামী:- মৃত মীর আবুল হোসেন।
৪. শহীদ মীর ডায়মন্ড, পিতা:- মৃত মীর আবুল হোসেন।
৫. শহীদ মীর আক্তারুজ্জামান, পিতা:- মৃত মীর আবুল হোসেন।
৬. শহীদ মীর নুতন, পিতা:- মৃত মীর আবুল হোসেন।
৭. শহীদ মিস নীলা, পিতা:- আব্দুস ছাত্তার।
৮. শহীদ জালালউদ্দিন, পিতা:- মীর ফকির আহম্মেদ।
৯. শহীদ মীর সহিদা বেগম রুমি, পিতা:- মীর ফকির আহম্মেদ।
১০. শহীদ মীর নবীণ, পিতা:- শহীদ জালালউদ্দিন।
১১. শহীদ জাহেদা খাতুন, স্বামী:- মো: দলিল উদ্দিন।
১২. শহীদ সেলিনা খাতুন, পিতা:- মো: দলিল উদ্দিন।
১৩. শহীদ ফাতেমা খাতুন, স্বামী:- মো: আতিয়ার রহমান।
১৪. শহীদ ছদরুল ইসলাম, পিতা:- মৃত শামসুদ্দিন।
যারা আহত হয়েছিলেন এবং বর্তমানে জীবিত আছেন
১.আহত মোছা: সাজেদা বেগম, স্বামী:- শহীদ মীর জালালউদ্দিন।
২. মোছা: আফরোজা বেগম,
পিতা:- মো: আতিয়ার রহমান।
৩. মোছা: মায়া খাতুন,
পিতা:- শহীদ শফিউদ্দিন।
৪. মো: আমির খসরু,
পিতা:- মো: আতিয়ার রহমান।
পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর হাতে চন্ডিপুর ট্রাজেডিতে পন্ডিতবাড়ীর বৃদ্ধ যুবা, শিশু, মহিলা এমনকি সদ্য ভুমিষ্ঠ সন্তান শহীদ নবীব (বয়স-দুই দিন) বাচঁতে পারে নাই। দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার, রাজাকার, আলবদর, আল সামস্ বাহিনীর নৃশংসতায় এ রকম লক্ষ লক্ষ শহীদ এর রক্ত, অঙ্গহানী ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের প্রিয় স্বাধিনতা। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কুষ্টিয়া জেলা ইউনিট কমান্ড জেলাতে ঐ সকল শহীদের খুজে বের করে তাদের আত্মত্যাগের কাহিনীটুকু নুতন প্রজন্মেও কাছে তুলে ধরতে চাই। এ জন্যই যে, ‘‘স্বাধিনতা’’ এই কথাটার জন্য কত হাজার লক্ষ মানুষ জীবন দিয়েছে। তাদের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের প্রিয় স্বাধিনতা। চন্ডিপুর গনহত্যায় শহীদদের জন্য স্বাধিনতার দীর্ঘ ৪২ বৎসর পর জেলা ইউনিট কমান্ড এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও জেলা পরিষদ কুষ্টিয়া এর অর্থায়নে সর্বপরি যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা জনাব রশিদুল আলম সাবেক সংস্থাপন সচিব এর অনুপ্রেরনায় নির্মিত হয়েছে ছোট একটি স্মৃতিস্তম্ভ যা যুগে যুগে কালে কালে এ দেশের মানুষকে মনে করিয়ে দিবে এ জাতির স্বাধিনতার জন্য তার পূর্ব পুরুষেরা কিভাবে অকাতরে জীবন দিয়ে গেছেন।
হাডিং ব্রীজ বধ্যভূমি
শোন একটি মুজিবরের থেকে,লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধাবনি-প্রতিধ্বনি। বর্তমান প্রজন্ম কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধকে জানি, অংশ হিসেবে তাহের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীগন ভেড়ামারা উপজেলার সন্মুথ যুদ্ধের অংশ হাডিং ব্রীজ নিছে বিভিন্ন যুদ্ধ ক্ষেত্র এবং বর্ধভুমি পরিদর্শন করেন । যুদ্ধের স্মৃতি চারন করেন বীর মুক্তি যোদ্ধা ভেড়ামাা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ্জ বীর মুক্তি যোদ্ধা আলম জাকারিয়া টিপু এবং আহত, সজন হারা, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ব্যাক্তিত্ব ব্যাংক কর্মকর্তা জনাব আমির খসরু , যার পরিবারের ১৪জন শহীদ হয়ে ছিল । ১২ এপ্রিল,১৯৭১ তারিখে মহান মুক্তি যুদ্ধে সুচনা লগ্নে বীর মুক্তি যোদ্ধা ও তৎকালিন ইবিআর ১টি দল সরা সরি সন্মুখ যুদ্ধ অবর্তীণ হয়। তার মধ্যে নিম্ন বণিত বীর মুক্তি যোদ্ধাগনসহ আরও নাম না জানা অনেকেই যুদ্ধ শহীদ হন।
১। শহীদ আফিলুদ্দিন (ইপিআর)
২। শহীদ হিরণ মিয়া (ইপিআর)
৩। শহীদ নজরুল ইসলাম
৪। শহীধ গিয়াস উদ্দীন
৫। শহীদ সোহরাফ উদ্দীন
ভেড়ামারায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন অন্যরকম দিন
২৪ মার্চ,১৯৭১ এর এই দিনে ভেড়ামারার মানুষ একটি অন্যরকম দিন কাটিয়েছিল। রাজনীতির সাথে জড়িত অনেকে সেদিন গ্রেপ্তারের ভয়ে গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। অজানা আতংক বিরাজ করেছিল সর্বত্র। কারন আগের দিন বিকেলে তারা দুঃসাহসিক একটি কাজ করেছিল।
একাত্তরের তেইশ শে মার্চ বিকেলে ভেড়ামারা হাইস্কুল মাঠে মুক্তিপাগল এলাকাবাসীর অংশগ্রহনে বিশাল একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে ভেড়ামারার মাটিতে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আগের রাতে হাতে সেলাই করে বানানো স্বাধীন বাংলার লাল সবুজ পতাকাটি ভেড়ামারা থানার পাশে মুক্তিযোদ্ধা নজিবুদ্দৌলার বাড়ি থেকে আনা হয় স্কুল মাঠে। সেখানে তখন উপস্থিত ছিলেন তrকালীন এমএনএ আজিজুল রহমান আক্কাস, এমএলএ জহুরুল হক রাজা মিয়া, এমএলএ আব্দুর রব চৌধুরীসহ অসংখ্য রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। কিন্তু কে উত্তোলন করবে সেই পতাকা? এনিয়ে কিছু সময় কেটে যায়। শাসকগোষ্ঠির রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সবার উপস্থিতিতে সেদিনের পড়ন্ত বিকেলে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন ভেড়ামারা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক Md. Ruhul Islam (হেডস্যার)। সেসময় জাতীয় সংগীত গেয়েছিলেন রাজা মিয়ার কিশোরী কন্যা রুবি ম্যাডাম ও তাঁর দল। ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা ঘোষনার ৩ দিন আগে ভেড়ামারার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করে দেশপ্রেমের প্রমান দিয়েছিলেন।
আর যিনি দুঃসাহসিক সেই কাজটি হাসিমুখে সুসম্পন্ন করেছিলেন, তিনি এখনো বেঁচে আছেন আমাদের মাঝে- প্রিয় ভেড়ামারার মাটিতে। “স্যালুট-শ্রদ্ধেয় রুহুল স্যার, স্যালুট-হেড স্যারদের হেড স্যার”। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যিনি হানাদার বাহিনীর হাতে একাধিকবার ধরা পড়ে ছাড়া পেয়েছিলেন, যিনি স্কুলের বিজ্ঞানাগার থেকে রাসায়নিক দ্রবাদি গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সরবরাহ করতেন বোমা বানানোর জন্য, স্বাধীনতার পর বীর মুক্তিযোদ্ধারা যার হাত থেকে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট গ্রহন করেছিলেন, নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দাবী করার যথেষ্ট সুযোগ থাকার পরও যিনি সুযোগ গ্রহন করেননি, তিনি জীবন্ত কিংবদন্তী রুহুল ইসলাম।
কুষ্টিয়ার দৌলতপুর-মিরপুর ও ভেড়ামারা মুক্ত দিবস
৮ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ার মিরপুর, ভেড়ামারা দৌলতপুর উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস। দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র সংগ্রামের পর এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় এই তিন উপজেলা। ১৯৭১ সালের এই দিনে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর থানা শক্রমুক্ত করে থানা চত্বরে বিজয় পতাকা উড়ান মুক্তিকামী বীর সূর্য সন্তানেরা। দৌলতপুরকে হানাদারমুক্ত করতে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের সম্মুখ যুদ্ধসহ ছোট-বড় ১৬টি যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। এসব যুদ্ধে ৩৫জন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ কয়েকশ নারী-পুরুষ শহীদ হন।
৮ ডিসেম্বর সকালে উপজেলার আল্লারদরগা এলাকায় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে শহীদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিক। মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে টিকতে না পেরে পিছু হটতে বাধ্য হয় পাকিস্তানি সেনারা। এরপর দৌলতপুরকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা ৮নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর নুরুন্নবী। একই দিন কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলাও হানাদারমুক্ত হয়েছিল। ৮ ডিসেম্বর ভোরে ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান ১৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মিরপুর থানায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা গান স্যালুটের মাধ্যমে উত্তোলন করেন। এরপর ৬৫জন পাকিস্তানি সেনা, তাদের দোসর ও রাজাকার পাহাড়পুর মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে আত্মসমর্পন করে। মিরপুর হানাদার মুক্ত হওয়ার সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিভিন্ন বয়সের হাজারও নারী-পুরুষ রাস্তায় নেমে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠে।
আজকের এই দিনে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারাও হানাদারমুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে মিত্র বাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধা কুষ্টিয়ার ভেড়ামারাকে শত্রু মুক্ত করে। এই দিন ৮নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর আবুল মুনছুরের নেতৃত্বে জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদুল আলমের নেতৃত্বে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে ভোর ৭টার সময় ভেড়ামারা ফারাকপুরে পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। প্রায় ৭ ঘণ্টা ব্যাপী এই যুদ্ধে আট পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। যুদ্ধের পর পরই মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে প্রায় ৫০/৬০ জন বিহারী নিহত হয়। এই ঘটনার সংবাদ পেয়ে ভেড়ামারায় অবস্থানরত পাকিস্তানি বাহিনীর অন্যান্য সদস্যদের মনোভল ভেঙে যায়। তারা সন্ধ্যার আগেই ভেড়ামারা থেকে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ দিয়ে পালিয়ে যায়। এই দিন রাতে মুক্তিপাগল মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধারা দলে দলে ভেড়ামারায় প্রবেশ করতে থাকেন। তারা বিজয়ের আনন্দে মেতে ওঠেন।
বিজ্ঞ বিচারক মন্ডলীর বিচারে নিম্ন বণির্ত শিক্ষাথীগন সেরা নির্বাচিত হয়।
১। মোছা: মায়া খাতুন ৭ম শ্রেণী
২।শামীমা খাতুন ৭ম শ্রেণী
৩। সাদিয়া সুলতানা হানি ৭ম শ্রেণী
প্রতিবেদনের সহিত একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি সহ জমা প্রদান করা হল ।
শেখ মুজিবুর রহমান
বঙ্গবন্ধু |
|
|
|
জন্ম |
১৭ মার্চ ১৯২০ |
মৃত্যু |
১৫ আগস্ট ১৯৭৫ (বয়স ৫৫) |
মৃত্যুর কারণ |
শেখ মুজিবুর রহমান (১৭ মার্চ ১৯২০ - ১৫ আগস্ট ১৯৭৫), সংক্ষিপ্তাকারে শেখ মুজিব বা মুজিব, ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও ভারতীয় উপমহাদেশের একজন অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যিনি বাঙালির অধিকার রক্ষায় ব্রিটিশ ভারত থেকে ভারত বিভাজন আন্দোলন এবং পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে কেন্দ্রীয়ভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেন। প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার আধুনিক স্থপতি হিসাবে শেখ মুজিবুর রহমানকে বাংলাদেশের "জাতির জনক" বা "জাতির পিতা" বলা হয়ে থাকে। তিনি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতি, বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং পরবর্তীতে এদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। জনসাধারণের কাছে তিনি শেখ মুজিব এবং শেখ সাহেব হিসাবে বেশি পরিচিত ছিলেন এবং তার উপাধি "বঙ্গবন্ধু"। তার কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান সভানেত্রী এবং বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
১৯৪৭-এ ভারত বিভাগ পরবর্তী পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির প্রাথমিক পর্যায়ে শেখ মুজিব ছিলেন তরুন ছাত্রনেতা। পরবর্তীতে তিনি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সভাপতি হন । সমাজতন্ত্রের পক্ষসমর্থনকারী একজন অধিবক্তা হিসেবে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর প্রতি সকল ধরণের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। জনগণের স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি একসময় ছয় দফা স্বায়ত্ত্বশাসন পরিকল্পনা প্রস্তাব করেন যাকে পশ্চিম পাকিস্তানে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী পরিকল্পনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। ছয় দফা দাবীর মধ্যে প্রধান ছিল বর্ধিত প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন যার কারণে তিনি আইয়ুব খানের সামরিক শাসনের অন্যতম বিরোধী পক্ষে পরিণত হন। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দে ভারত সরকারের সাথে যোগসাজশ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে তার বিচার শুরু হয় এবং পরবর্তীতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে। তথাপি তাকে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়া হয় নি।
পাকিস্তানের নতুন সরকার গঠন বিষয়ে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে শেখ মুজিবের আলোচনা বিফলে যাওয়ার পর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মার্চ ২৫ মধ্যরাত্রে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকা শহরে গণহত্যা পরিচালনা করে। একই রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং পরবর্তীকালে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।[১] রহিমুদ্দিন খান সামরিক আদালতে তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে তবে তা কার্যকর করা হয় নি। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। ১৯৭২-এর ১২ই জানুয়ারি তিনি সংসদীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মতাদর্শগতভাবে তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী ছিলেন, যা সম্মিলিতভাবে মুজিববাদ নামে পরিচিত। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে ভিত্তি করে সংবিধান প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী রাষ্ট্র চালনার চেষ্টা সত্ত্বেও তীব্র দারিদ্র্য, বেকারত্ব, সর্বব্যাপী অরাজকতা এবং সেই সাথে ব্যাপক দুর্নীতি মোকাবেলায় তিনি কঠিন সময় অতিবাহিত করেন। ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দমনের লক্ষ্যে ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে এক দলীয় রাজনীতি ঘোষণা করেন। এর সাত মাস পরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে একদল সামরিক কর্মকর্তার হাতে তিনি সপরিবারে নিহত হন। ২০০৪ সালে বিবিসির সম্পাদিত একটি জরিপে শেখ মুজিবুর রহমান "সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালি" হিসেবে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত হন।
তিনি স্বাধিনতার জন্য ৪৬৮২ দিন কারাগারে ছিলেন। স্বাধিনতার পর ১৩১৪দিন বেঁচে ছিলেন ।বাংলাদেশ মানেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ।
স্বাধীনতার পটভূমি
১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালির অধিকার আদায়ের সূচনা হয়। ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের শাহাদৎ বরণকারী শফিক, রফিক, জব্বার, বরকত এর রক্তে স্বাধীনতার বীজ রচিত হয়। ১৯৬৬ এর ৬ দফা আন্দোলন ও ১৯৬৯ এর গণআন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে এগিয়ে যায়।
১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে নিরংকুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানের সামরিক শাসকগোষ্ঠী এই দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিলম্ব করতে শুরু করে।
‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ বর্জ্র নিনাদে আসন্ন মহামুক্তির আনন্দে বাঙালি জাতি উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। যুগ যুগ ধরে শোষিত বঞ্চিত বাঙালি ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় কাঙ্খিত মুক্তির লক্ষ্যে।’
প্রকৃতপক্ষে তাদের উদ্দেশ্য ছিল যে কোন ভাবে ক্ষমতা পশ্চিম পাকিস্তানী রাজনীতিবিদদের হাতে কুক্ষিগত করে রাখা। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদ অধিবেশন আহ্বান করেন। কিন্তু অপ্রত্যাশিত ভাবে ১ মার্চ এই অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য মূলতবি ঘোষণা করেন।
এই সংবাদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়। তিনি ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চ ১৯৭১ ঢাকার রমনায় অবস্থিত রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। তা বিশ্বের ইতিহাসে এক অনন্য সাধারণ ভাষণ, এ ভাষণে রয়েছে বহুমাত্রিক বিশেষত্ব মাত্র ১৯ মিনিটের ভাষণে তিনি ইতিহাসের পুরো ক্যানভাস তুলে ধরেন।
এ ভাষণে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুত হতে আহ্বান জানান তিনি। ১২টি ভাষায় ভাষণটি অনুবাদ করা হয়। নিউজউইক ম্যাগাজিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাজনীতির কবি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০১৭ সালের ৩০ শে অক্টোবর ইউনেস্কো এই ভাষণকে ঐতিহাসিক ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বিপুল সংখ্যক লোক একত্রিত হয়। পুরো ময়দান পরিণত হয় এক জনসমুদ্রে। এই জনতা এবং সার্বিকভাবে সমগ্র জাতির উদ্দেশ্যে শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণটি প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধুর এ ভাষণ এতদিন শুধু বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি সংগ্রামে এক অনন্য দলিল হিসেবে স্বীকৃত ছিল।
২০১৭ সালের অক্টোবরের শেষে ইউনেস্কো ৭ মার্চের ভাষণকে ”ডকুমেন্টরি হেরিটেজ” (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মেমোরি অফ দ্য ওর্য়াল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্ট্রারে (এম ও ডব্লিউ) ৭ মার্চের ভাষণসহ এখন পর্যন্ত ৪২৭টি গুরুত্বপূর্ণ নথি সংগৃহীত হয়েছে।
এ প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একে ইতিহাসের প্রতিশোধ হিসেবে তুলনা করেছেন। কারণ স্বাধীন দেশে দীর্ঘসময় এই ভাষণের প্রচার নিষিদ্ধ ছিল।
ইউনেস্কোর বিশ্ব স্বীকৃতির মাধ্যমে তা এখন বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের লড়াইয়ের ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক। বঙ্গবন্ধুর দেয়া ১১০৮টি শব্দ সংখ্যার ভাষণটি বিশ্বের প্রথম ও সর্বশেষ মুখে উচ্চারিত ক্ষুদ্রতম কালজয়ী মহাকাব্যের অনুপম দৃষ্টান্ত।
জাতির ক্রান্তিকালে স্বাধীনতা কামী ৭ কোটি মানুষের প্রতি এ ভাষণ রাখতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু যে যুক্তিপূর্ণ অথচ আবেগময়, সংরক্ষিত অথচ সুদূর প্রসারী ইঙ্গিতপূর্ণ অথচ অর্থবহ বাক্য ব্যবহার করেন। বাংলাদেশের মানুষকে তা আজও একাত্তরের মতো সমভাবে উদ্দীপ্ত করে তোলে।
এ ভাষণের মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতির বিশ্ব ইতিহাসে নতুন এক শিখরে পৌঁছে যায়। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর উদ্দীপ্ত ঘোষণায় বাঙালি জাতি পেয়ে যায় স্বাধীনতা ও গেরিলাযুদ্ধের দিক নিদের্শনা এর পরই দেশের মুক্তিকামী মানুষ ঘরে ঘরে চূড়ান্ত লাড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এ বর্জ্র নিনাদে আসন্ন মহামুক্তির আনন্দে বাঙালি জাতি উজ্জীবিত হয়ে ওঠে। যুগ যুগ ধরে শোষিত বঞ্চিত বাঙালি ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা নিয়ে এগিয়ে যায় কাঙ্খিত মুক্তির লক্ষ্যে।
বঙ্গবন্ধুর ৭মার্চের ভাষণে রাজনৈতিক দিক নির্দেশনার পথ ধরেই ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লাখো প্রাণের বিনিময়ে বিশ্ব মানচিত্র আত্মপ্রকাশ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।