Loading..

শিক্ষায় অগ্রযাত্রা

২৭ মে, ২০২০ ১২:৩৫ অপরাহ্ণ

''কারিগরি শিক্ষার সুযোগ সুবিধা সম্ভাবনা''

‘এই রেজাল্ট দিয়ে কী হবে? কোথায় ভর্তি হবি? কোন কলেজ তোকে ভর্তি করবে না। জীবনে কিচ্ছু করতে পারবি না।’

সম্প্রতি প্রকাশিত এসএসসি ও সমমান-২০১৯ এর ফলাফলের পর অনেককেই বাবা-মার কাছ থেকে এমন কথা শুনতে হবে। এতো গেলো পরীক্ষায় আশানুরুপ ফল না হওয়ার প্রতিক্রিয়া। জীবনের পরীক্ষাতো রয়েই গেছে। অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেও অনেকেরই আশানুরুপ চাকরি জোটে না। আবার বেকার থাকতে হয় অনেককে। এই জীবনের গ্লানি শুধুই তারাই জানে।

এমন সব সমস্যার সমাধান হতে পারে কারিগরি শিক্ষা। পরীক্ষায় ফলাফলের চিন্তা না করে, কলেজে ভর্তি ইঁদুর দৌড় এড়িয়ে কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে যেমন দ্রুত পেশাজীবনে ঢোকা সম্ভব। আবার প্রচুর কর্মক্ষেত্রের সুযোগ থাকায় কারিগরি শিক্ষা সম্পন্ন করে বেকার থাকারও আশঙ্কা নেই।

হাতে কলমে বাস্তবধর্মী শিক্ষাই হলো কারিগরি শিক্ষা। তাত্ত্বিক জ্ঞান থেকে হাতে কলমে প্রশিক্ষিত জ্ঞানই বেশি সমাদৃত। তাই কারিগরি শিক্ষার গুরত্বও বেশি।

‘কারিগরি শিক্ষা নিলে বিশ্ব জুড়ে কর্ম মিলে’- কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের প্রতিপাদ্য বিষয়ের মধ্যে এটি হল একটি। বর্তমানে দেশে ৭ টি সরকারী টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট, ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট আছে। এর মধ্যে পুরোনো ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ২০, যেগুলো পুরোপুরি সরকারি। নতুন রাজস্বভুক্ত ইনস্টিটিউটের সংখ্যা পাঁচ, মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট তিন, প্রকল্পভুক্ত ১৮ ও মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সংখ্যা তিন। ২০০৪ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে দেশের ৪৯টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে প্রথম ও দ্বিতীয় পালায় পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

২০০৯ সালের আগে কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থার তেমন গুরুত্ব ছিল না। তবে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষাব্যবস্থা বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে—ডিপ্লোমা, ভোকেশনাল ও জাতীয় দক্ষতার মান বেসিকসহ বিভিন্ন শিক্ষাক্রমে ২০০৮ সালের পর প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী বেড়েছে, প্রতিষ্ঠান বেড়েছে দুই হাজারেরও বেশি। এই বৃদ্ধির কারণে কারিগরিতে মোট শিক্ষার্থীর হার প্রায় ৮ শতাংশে পৌঁছেছে। বর্তমানে সারাদেশে ডিপ্লোমা পর্যায়ে ৫১টি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও ৩৭৪টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এইচএসসি ভোকেশনাল শিক্ষা প্রদান করছে ১ হাজার ৭০০ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ৬৮টি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এসএসসি ভোকেশনালের ক্ষেত্রে ২ হাজার ৩০২টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ১৪১টি সরকারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় উন্নত দেশগুলো অনেক এগিয়ে গেছে। সেই তুলনায় বলা যায়, বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে বহু দিক থেকেই।

উল্লিখিত ইনস্টিটিউটগুলোতে নিজের পছন্দের বিষয়ে ডিপ্লোমা কোর্স করা যেতে পারে। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার আগে ভাল করে খোঁজ নিতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক নিবন্ধন, পড়াশুনার মান সম্পর্কে জানতে হবে। কারিগরি শিক্ষার সবচেয়ে বড় সুযোগ হলো, দেশ-বিদেশে বিভিন্ন খ্যাতনামা সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা যাবে। বিএসসি ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিও পাওয়া যাবে।

এই শিক্ষার মূল লক্ষ্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা। সরকারি চাকরিতে উপ-প্রকৌশলী থেকে প্রধান প্রকৌশলী পর্যন্ত। পাওয়ারহাউজ, বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি, টেক্সটাইল, সিরামিক, বিভিন্ন কলকারখানা, টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ রয়েছে। শুরুতে বেতন হতে পারে ৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও নিবন্ধনের মাধ্যমে প্রাইমারি ও হাইস্কুলে শিক্ষকতাও করা যাবে। দেশের বাইরে গিয়েও ভাল চাকরি করে ৩০ হাজার থেকে প্রায় ১ লাখ পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। দক্ষতার উপর নির্ভর করবে বেতনের পরিসীমা।
পড়াশোনা

কারিগরি শিক্ষায় শিতি হয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে কারিগরি
শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে চার বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা-ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট রয়েছে। এর মধ্যে পুরনো ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ২০টি, যেগুলো পুরোপুরি সরকারি। নতুন রাজস্বভুক্ত ইনস্টিটিউটের সংখ্যা পাঁচটি, মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট তিনটি, প্রকল্পভুক্ত ১৮টি ও মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সংখ্যা তিনটি। বেসরকারি পলিটেকনিকের সংখ্যা এক হাজারের চেয়েও বেশি। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার আগে ভালো করে খোঁজ-খবর নিতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক নিবন্ধন, পড়াশোনার মান ইত্যাদি বিষয়ে।

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডঃ

বাংলাদেশ কারিগরি শিা বোর্ড ১৯৬৭ সালের ১নং সংসদীয় কারিগরি শিা আইনবলে স্থাপিত হয়। বাংলাদেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিা ও প্রশিণের মান প্রণয়ন, নিয়ন্ত্রণ, মূল্যায়ন ও উন্নয়নের সার্বিক দায়িত্ব বাংলাদেশ কারিগরি শিা বোর্ডের ওপর ন্যস্ত। বাংলাদেশ সরকারের শিা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি শিা অধিদপ্তর কেন্দ্রীয়ভাবে দেশের সব পলিটেকনিক পরিচালনা করে। একজন অধ্যরে প্রত্য তত্ত্বাবধানে উপাধ্যরে সহযোগিতায় যাবতীয় একাডেমিক, প্রশাসনিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকা- পরিচালিত হয়।

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটঃ

পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট একটি কারিগরি শিাপ্রতিষ্ঠান, যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক শিার পাশাপাশি বাস্তব ও কর্মমুখী শিার প্রয়োগ ঘটে। এটি বাংলাদেশ কারিগরি শিা বোর্ডের অধীনে চার বছর মেয়াদি শিাক্রম পরিচালিত হয়। চার বছর মেয়াদি শিাক্রম আটটি পর্বে বিভক্ত, যাদের সেমিস্টার বলা হয়। এক একটি সেমিস্টারের কার্যদিবস ১৬-১৮ সপ্তাহ। সে হিসাবে প্রতিবর্ষের কার্যদিবস ৩২-৩৬ সপ্তাহ। নির্ধারিত কার্যদিবস শেষ হওয়ার পর পর্ব সমাপণী পরীা অনুষ্ঠিত হয়।

অন্তর্ভুক্ত কোর্সগুলোঃ

বাংলাদেশ কারিগরি শিা বোর্ডের অধীনে পরিচালিত শিাক্রমগুলো হলো, ডিপ্লোমা-ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স পরিচালনা করে থাকে। উল্লেখযোগ্য কোর্সগুলো হলোÑ ডিপ্লোমা-ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা-ইন ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা-ইন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা-ইন ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা-ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা-ইন পাওয়ার, ডিপ্লোমা-ইন আর্কিক্টেচার, ডিপ্লোমা-ইন অটোমোবাইলস, ডিপ্লোমা-ইন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা-ইন এগ্রিকালচার, ডিপ্লোমা-ইন ফরেস্ট্রি, ডিপ্লোমা-ইন মেরিন টেকনোলজি, ডিপ্লোমা-ইন হেলথ টেকনোলজি, এইএসসি (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা), এইচএসসি (ভোকেশনাল) ও এসএসসি (ভোকেশনাল)।

ভর্তির যোগ্যতাঃ

এসএসসি বা সমমান পরীায় পাসের পর ভর্তি হতে হয়। সরকারি পলিটেকনিকে ভর্তি হতে চাইলে এসএসসি বা সমমান পরীায় যে কোনো বিভাগ থেকে কমপে ৩.৫০ পেতে হবে এবং ভর্তি পরীায় উত্তীর্ণ হতে হবে। বেসরকারিতে কমপে ২.০০ পেতে হবে।

পড়াশোনায় খরচঃ

সরকারি পলিটেকনিকে চার বছর পড়াশোনার খরচ পড়বে মাত্র ৫০ হাজার টাকা। বেসরকারি পলিটেকনিকে পড়াশোনার খরচ একটু বেশি। সেখানে প্রতিষ্ঠান ও বিষয়ভেদে খরচ পড়বে আলাদা আলাদা। সে ক্ষেত্রে ৯৬ হাজার থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকার মতো পড়বে।

উচ্চ শিক্ষাঃ

ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা শেষে মানোন্নয়ন ও গবেষণার সুযোগ লাভের জন্য দেশ-বিদেশে উচ্চশিা নেওয়ার ব্যবস্থা আছে। আগ্রহ থাকলে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ও পিএইচডি করা যায়।

রোজগারঃ

সাধারণত, পেশাগত জীবনে এ ক্যারিয়ারে আয় ও রোজগারের বিষয়টি নির্ভর করে কর্মদতা, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং কাজের মনোযোগের ওপর। যেমন এখানে লেখাপড়া করে যে কেউ শুরুতেই মাসে ২০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। এ ছাড়া সরকারি ফার্মে জব করতে চাইলে সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা, যেমনÑ চিকিৎসক ভাতা, বাড়িভাড়া ইত্যাদি বাদে সরকারি স্কেল অনুযায়ী আপনার বেতন ধরা হবে ৮ হাজার টাকা। বিশেষজ্ঞদের মতে একজন লোক তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মাসে ৮০ থেকে ১ লাখ টাকা আয় করতে পারেন। এমনকি মাসে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। উল্লেখ্য, সরকারি ফার্মের চেয়ে বেসরকারি ফার্মে আয়ের পরিমাণ অনেক বেশি।

ক্যারিয়ার সম্ভাবনাঃ

কারিগরি শিায় রয়েছে বহুমুখী স্বপ্নের উজ্জ্বল ক্যারিয়ার। চাকরির জন্য রয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অনেক ত্রে। যেমনÑ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের চাকরির সবচেয়ে বড় বাজার হলো সরকারি ইপিজেডগুলো ও গাজীপুর মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি। এ ছাড়া রিয়েল এস্টেট কোম্পানি, সয়েল টেস্ট ফার্ম, কনস্ট্রাকশন, হাইভোল্টেজ কেবল লাইন, পাওয়ার জেনারেটর প্লান্ট, হাউস অয়্যারিং, শিল্প-কলকারখানা, বিভিন্ন স্ট্রাকচার ডিজাইন ফার্ম, ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন অ্যান্ড ডিজাইন ফার্ম, ই-কম্পিউটার ডিজাইনার ডাটা, অ্যান্ট্রি, মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশন, সফটঅয়্যার ফার্ম, হার্ডঅয়্যার ফার্ম, গ্রাফিকস ডিজাইন, বিভিন্ন ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন টেক্সটাইল মিল, গার্মেন্ট অ্যান্ড ফ্যাশন হাউস, গ্লাস অ্যান্ড সিরামিক ডিজাইন সরবরাহ ও প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো, পল্লি বিদ্যুৎ, ডেসকো, আইডিবি, বিটিসিএল, মেডিক্যাল ল্যাব, একাধিক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি ও ওষুধ কোম্পানিসহ দেশ-বিদেশে শত শত প্রতিষ্ঠানে রয়েছে বহুমাত্রিক ক্যারিয়ারের সুবর্ণ সুযোগ। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ডিপ্লোমা ইজ্ঞিনিয়ারদের ব্যাপক চাহিদা। মোট কথা, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের বেকার থাকা বা কাজ না পাওয়ার আশঙ্কা খুব কম। এখানে পড়াশোনা শেষ করেই রয়েছে চাকরির নিশ্চয়তা। রয়েছে সফল ক্যারিয়ারের হাতছানি। আর দেরি না করে এ পেশায় গড়তে পারেন আপনার স্বপ্নের রঙিন ক্যারিয়ার।

এত সুযোগ সুবিধা থাকার পরও, কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার কমেছে। বর্তমানে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় মোট ৮ লাখ ৭২ হাজার ৬৫৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মেয়েদের সংখ্যা ২ লাখ ৮ হাজার ৮৭০। সরকারের জেন্ডার বাজেট প্রতিবেদনে (২০১৬-১৭) এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। তবে ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় ২০ লাখ শিক্ষার্থী ভর্তি করতে চায় শিক্ষামন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের উত্সাহিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।


তাই ইঞ্জিনিয়ার হতে চাইলে চলে আসুন

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি