Loading..

খবর-দার

২৩ জুন, ২০২০ ০৬:১৬ পূর্বাহ্ণ

এক নজরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংক্ষিপ্ত জীবনী

এক নজরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংক্ষিপ্ত জীবনী

(জন্ম: ১৭ মার্চ, ১৯২০ – মৃত্যু: ১৫ আগষ্ট, ১৯৭৫)

জন্ম:  

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের  ১৭ মার্চ (বাংলা: ২০ চৈত্র, ১৩২৭ বঙ্গাব্দ, মঙ্গলবার  রাত ৮:০০ টায়)  গোপালগঞ্জ জেলার  টুঙ্গিপাড়ার  মধুমতির তীরে সবুজ প্রকৃতি ঘেরা নিভৃত পল্লীর এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন।

বংশ পরিচয়:  

বঙ্গবন্ধুর জন্ম টুঙ্গিপাড়া শেখ বংশে। শেখ বোরহান উদ্দিন নামে এক ধার্মিক পুরুষ এই বংশের গোড়াপত্তন করেছেন বহুদিন পূর্বে। তার প্রমান মোগল আমলের ছোট ছোট ইটের  দ্বারা তৈরি দালানগুলি। চার ভিটায় চারটি দালান এখনো বাড়ির চারপাশ শ্রীবৃদ্ধি করে রেখেছে। তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতার নাম শেখ সাহেরা খাতুন। তিনি ছিলেন ছয় ভাই-বোনের তৃতীয়।

শৈশবকাল:

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশবকাল কেটেছিল গোপালগঞ্জ জেলার  টুঙ্গিপাড়ার বাইগার নদীর পানিতে ঝাঁপ দিয়ে, মেঠোপথের  ধুলাবালি মেখে,বর্ষার কাঁদা পানিতে ভিজে ও প্রকৃতির সাথে খেলা করে। শৈশবকাল থেকেই মা-বাবা তাঁকে আদর করে ‘খোকা’ বলে ডাকত। তিনি ছিলেন অদম্য সাহসী ও চঞ্চল স্বভাবের। তাঁর চেহারা ছিল ছিপছিপে গড়নের। খেলাধুলায় ভাল ছিল। বিশেষ করে ফুটবল খেলায় তাঁর স্থান ছিল পাকা।

বঙ্গবন্ধুর দাম্পত্য জীবন: ১৯৩৮ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে ছাত্র জীবনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেগম ফজিলাতুন্নেছার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যবৃন্দ: বেগম ফজিলাতুন্নেছা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুই কন্যা- শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, তিন পূত্র- শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল ।

তিন পূত্রের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

বইয়ের  বন্ধু ‘বঙ্গবন্ধু’:

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  জীবন, কর্ম, চিন্তা, দর্শন ও আদর্শ, বাঙালি জাতির প্রেরণার উৎস। উক্ত এই কর্মবীর ও ত্যাগী রাষ্ট্রনায়কের জীবনে, মননে, সৃজনে, চেতনে বইয়ের বিরাট অবদান রযেছে। বঙ্গবন্ধুর লিখিত অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারে রোজনামচা, আমার দেখা নয়াচীন, তাঁর চিঠিপত্র, ডায়েরি, বক্তৃতা, ভাষণ, ব্যক্তিগত ও দলীয় পাঠাগার, লেখক-গবেষক-অধ্যাপক, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী এবং নিকট আত্মীয়দের সূত্রে তাঁর বই পড়া, বইপ্রীতি, বই সংক্রান্ত অবহিতি, পাঠস্পৃহা ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। ছাত্রজীবনে, রাজনৈতিক জীবনে, কারাগার জীবনে, রাষ্ট্রনায়ক থাকাকালীন জীবনে তিনি অসংখ্য বইপুস্তক ও পত্র-পত্রিকা পড়েছেন। এছাড়াও ব্যক্তিগত এবং দলীয় পর্যায়ে  পাঠাগার স্থাপন করেছেন।

শিক্ষা জীবন:

১৯২৭:  ১৯২৭ সালে, সাত(৭) বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা টুঙ্গিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন শুরু হয়।

১৯২৯:  ১৯২৯ সালে, নয়(৯) বছর বয়সে পিতা শেখ লুৎফর রহমানের চাকুরিসূত্রে গোপালগঞ্জ সীতানাথ একাডেমির (পাবলিক স্কুল) তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।

১৯৩৪-৩৬: পিতা শেখ লুৎফর রহমানের  চাকুরি সূত্রে, ১৯৩৪ সালে মাদারীপুর  ইসলামিয়া হাইস্কুলে বঙ্গবন্ধু চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং ঐ স্কুলে পড়ার সময় তিনি বেরিরেরি রোগে আক্রান্ত হন। তারপর  ১৯৩৬ সালে ঐ একই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় চোখে গ্লুকোমা রোগে আক্রান্ত হন। এরপর থেকে চোখের  জটিল রোগের কারনে দীর্ঘ  তিন(০৩) বছর কিশোর মুজিবের পড়াশোনা বন্ধ ছিল। চোখের জটিল রোগের কারনে দীর্ঘ তিন(০৩) বছর শেখ মুজিবের পড়াশোনা বন্ধ ছিল। পরবর্তিতে সুস্থ হয়ে পিতা।

১৯৩৭: পিতা শেখ লুৎফর রহমানের  চাকুরি সূত্রে, ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জ খ্রিস্টান মিশনারি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। অল্প দিনের মধ্যেই কিশোর মুজিব হয়ে উঠলেন সকলের ‘মুজিব ভাই’; হলেন সকল ছাত্রের নেতা।

১৯৪২-৪৭:  ১৯৪২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ খ্রিস্টান মিশনারি স্কুল থেকে এন্ট্রাস/মেট্রিক  পাশ করেন। তারপর তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং এই কলেজের বেকার হোস্টেলের ২৪ নং কক্ষে থাকতে শুরু করেন। এই সময়ে তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সংস্পর্শে এসে রাজনীতিতে সক্রীয় অংশগ্রহণ শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি,এ পাশ করেন এবং ঢাকায় চলে আসেন।

১৯৪৮-৪৯: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। তাঁর  নেতৃত্বে ৪ জানুয়ারী মুসলিম ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ১৯৪৯ সালে, ৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে  চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে ধর্মঘট ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু ধর্মঘটের প্রতি সমর্থন জানান এবং কর্মচারীদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেযার অভিযোগে ২৯ মার্চ  বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অযৌক্তিকভাবে  তাঁকে জরিমানা করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কৃত হন।

রাজনৈতিক জীবন:

১৯৩৮:  মূলত: ১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারী, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল সপ্তম শ্রেনিতে পড়ার সময় থেকেই। এ সময়ে, বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ,কে ফজলুল হক (অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী) ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী(বানিজ্যমন্ত্রী) গোপালগঞ্জ খ্রিস্টান মিশনারী স্কুল পরিদর্শনে এলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাঁর স্কুলের সহপাঠীদের নিয়ে মন্ত্রীদ্বয়ের  পথরোধ করে সাহস ও দৃঢ়তার সাথে নির্ভীক কন্ঠে ছাত্রাবাস মেরামতের দাবি জানালে মন্ত্রীদ্বয় ছাত্রাবাসমেরামতে জন্য ১২০০ টাকা মঞ্জুর করেছিলেন। মূলত: ১৯৪৪ সালে কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ মুসলীগ ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগদানের  মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু আনুষ্ঠানিকভাবে  তাঁর রাজনীতি জীবন শুরু করেছিলেন।

১৯৪৮: ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সক্রীয় নেতৃত্ব দেন। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফ্রেরুয়ারী, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু তার তাৎক্ষনিক প্রতিবাদ করেন । ২ মার্চ, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে বঙ্গবন্ধুর  প্রস্তাবে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ১১ মার্চ, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে সাধারণ ধর্মঘট আহবানকালে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন  এবং ১৫ মার্চ , বঙ্গবন্ধু কারাগার  থেকে মুক্তি পান।

১৯৪৯: ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন, পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিমলীগ গঠিত হয় এবং জেলে থাকা অবস্থায় শেখ মুজিব আওয়ামী মুসলিম লীগের পূর্ব পাকিস্তান শাখার যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৫২: ১৯৫২ সালের  ১৪ ফেব্রুয়ারী, বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে কারাগারে অনশন শুরু করেন। এরপর ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী(৮ ফালগুন ১৩৫৮), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা পুলিশের জারি করা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ নির্বিচারে ছাত্রদের উপর গুলি চালায়। গুলিতে শহীদ হন সালাম, রফিক, বরকতসহ অনেকে। কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু এ‌ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেন এবং একটানা ৩দিন অনশন অব্যাহত রাখেন।

১৯৫২ সালের মহান  ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান :

১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর, প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারন সন্মেলনে “মহান ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয় এবং ২০০০ সালের ২১শে ফ্রেব্রুয়ারি থেকে এই দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত সকল দেশসমূহে( ১৮৮টি দেশ) যথাযথ মর্যাদার সাথে পালিত হচ্ছে।

১৯৫৩ -৫৪: ১৯৫৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী, কেন্দ্রীয় সর্বদলীয় কর্মপরিষদ ২১ শে ফেব্রুয়ারী স্মরণে শহীদ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং ভাষা আন্দোলনের এক বছর পূর্তিতে সারা দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান শহীদ দিবস পালিত হয়। ১৯৫৩ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মওলানা ভাসানীকে নিয়ে খালি পায়ে প্রভাতফেরিতে অংশ নেন এবং ঐ বছর(১৯৫৪) এর  ৭ ই মে তারিখে গণ-আন্দোলনের  মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করে মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা ঘোষনা করে। পববর্তিতে পাকিস্তানের সংবিধানে মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তানেররাষ্টভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

১৯৫৪:  1954 সালে পূর্ব পাকিস্তানে  শেরে বাংলা এ, কে, ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী এই তিনজন মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন এবং পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলার স্বার্থ  রক্ষার জন্যে ২১ দফা দাবি প্রনয়ণ করেন। সেই দাবিগুলি তৈরীর সময় তরুন নেতা শেখ মুজিবের সক্রিয় অংশ ছিল। এরপর ১৯৫৪ সালে ১০ মার্চ, পাকিস্তান গণ-পরিষদের সাধারণ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসনে জয়ী হয় এবং বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের আসনে জয়ী হয়। ২ এপ্রিল, যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভা গঠিত হয় এবং ১৪ মে, বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভায় কৃষি ও বনমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

১৯৫৫ : ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর, আওয়ামী মুসলিমলীগের বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশনে ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ প্রত্যাহার করে দলের নতুন নামকরণ করা হয় ‘আওয়ামীলীগ; শেখ মুজিব পুনরায় সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হন।