Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

১০ আগস্ট, ২০২০ ১১:৪৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থী ...

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থী ...

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শরণার্থী ...

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনাতেই সৃষ্টি হয় শরণার্থী-সমস্যা। আর তা দ্রুত দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক প্রসঙ্গ থেকে আন্তর্জাতিক সংকটে রূপান্তরিত হয়। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার ও স্বাধীনতার প্রশ্নে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এত বিপুল মানুষ কোথাও বাস্তুচ্যুত হয়নি। ২৫ মার্চের মধ্যরাতে বাঙালি নিধনযজ্ঞ শুরু হলে প্রাণভয়ে ও নিরাপত্তার সন্ধানে লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন পথে পাশের দেশ ভারতের সীমান্তবর্তী গ্রাম ও শহরগুলোতে আশ্রয় নেয়। শরণার্থীদের বড় অংশ আশ্রয় নিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে; বাকিরা ত্রিপুরা ও আসামে। অবস্থা এতটাই নাজুক হয়ে পড়ে যে, ১৯৭১ সালে শরণার্থীদের সংখ্যা ত্রিপুরার মোট জনসংখ্যার সমান হয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শরণার্থীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩০৫ জনে এসে দাঁড়ায়। শরণার্থীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ ছিল হিন্দু। আগস্ট ১৯৭১ পর্যন্ত হিন্দুদের সংখ্যা ছিল ৬৯ লাখ ৭১ হাজার এবং মুসলিম ও অন্য ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা ছিল প্রায় ছয় লাখ।
শরণার্থী শিবিরগুলোতে ছিল খাদ্য, পানীয় জল, ওষুধপত্র, কলেরা মহামারি ইত্যাদি সমস্যার ব্যাপকতা। ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) প্রধান প্রিন্স সদরুদ্দিন আগা খান শরণার্থী-সমস্যাকে জাতিসংঘের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেন। জাতিসংঘ বাংলাদেশ-সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের ক্ষেত্রে তেমন কিছু করতে পারেনি। তবে শরণার্থী বিষয়ে জাতিসংঘ প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে গিয়েছিল। বস্তুত, জাতিসংঘ সৃষ্টির পর বাংলাদেশ-সংকটে জাতিসংঘ সবচেয়ে বড় মানবিক সাহায্য নিয়ে এগিয়ে এসেছিল। সত্য হলো, শরণার্থী ইস্যুর ব্যাপকতাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পক্ষে সহানুভূতির জন্ম দিয়েছিল। ভারতও শরণার্থীদের কারণেই বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে।
শরণার্থীদের নিয়ে সরকারি পর্যায়ে ভারতের নীতির প্রধান দুটি দিক ছিল। প্রথমত, মানবিক কারণ। দ্বিতীয়ত, জাতীয় স্বার্থ। অবশ্য ভারতের সুশীল সমাজের প্রতিক্রিয়া ছিল একান্তই মানবিক। ৮ মে ভারতের পূর্বাঞ্চলের পাঁচটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা জাতির উদ্দেশে এক বিবৃতিতে শরণার্থী-সমস্যাকে জাতীয় সমস্যা উল্লেখ করে বলেন, এমন অবস্থা সৃষ্টি করতে হবে, যাতে শরণার্থীরা পূর্ববঙ্গে ফিরে যেতে পারে। এর পরই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৬ মে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরায় বেশ কিছু শরণার্থীশিবির পরিদর্শন করেন। ১৮ মে রানীক্ষেতে এক জনসভায় ভাষণদানকালে ইন্দিরা গান্ধী শরণার্থী-সমস্যার ব্যাপকতা অনুধাবনের জন্য বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানত, দুটি লক্ষ্য সামনে রেখে ভারত শরণার্থী বিষয়ে নীতি প্রণয়ন করেছিল। ১. বাংলাদেশ-সংকটের আন্তর্জাতিকীকরণ ও হস্তক্ষেপের পটভূমি তৈরি এবং ২. জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে সাহায্য গ্রহণ। প্রথম লক্ষ্যটি ছিল সুস্পষ্ট। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ও সরকার বহির্বিশ্বে জোরালো প্রচারণায় অংশ নেয়। ভারত যুক্তি দেখায় যে পাকিস্তান তার বেসামরিক নাগরিকদের ভারতে ঠেলে দিয়ে তার অর্থনীতিতে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি করেছে। ভারত এই ‘সিভিল আগ্রাসন’-এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে প্রতি-আক্রমণের হুমকি দেয়, আন্তর্জাতিক আইনে যাকে বলে আত্মরক্ষার্থে প্রতি-আক্রমণ।

আরো দেখুন