Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০৯:২৮ পূর্বাহ্ণ

ইয়াবার ক্ষতি ও প্রতিকার

দীর্ঘদিন ‘ইয়াবা’ সেবনে শারীরিক ও মানসিক মারাত্মক জটিলতা তৈরি হয়। এর মরণ ছোবলে জীবন নিঃশেষ হয়ে যায়। তবে ইচ্ছা করলে এ নেশা থেকে দূরে থাকা যায়। আসক্তরাও চাইলে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ জীবন লাভ করতে পারেন।


ইয়াবায় ক্ষতি
ইয়াবার মতো মারাত্মক ক্ষতিকারক মাদক দীর্ঘদিন গ্রহণ করার কারণে দ্রুতগতিতে মানুষের জীবনধারার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়া এই আসক্তির কারণে শারীরিক ও মানসিক—দুই ধরনের মারাত্মক ক্ষতিও হয়।

শারীরিক সমস্যা
যৌন চাহিদার পরিবর্তন : প্রচণ্ড যৌন উত্তেজক ক্ষমতা রয়েছে বলে অনেকে ইয়াবা ব্যবহার করে। আসক্তি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে এটি ছেড়ে দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। তখন ইয়াবা ছাড়া আর কিছুই ভালো লাগে না। প্রথমে কম ডোজে এ ট্যাবলেট কাজ করলেও ধীরে ধীরে ডোজ বাড়াতে হয়। ইয়াবা গ্রহণের শুরুর দিকে সাময়িক যৌন উত্তেজনা বাড়ে। কিন্তু ধীরে ধীরে যৌনক্ষমতা লোপ পায় বা একেবারেই ধ্বংস হয়। দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে শুক্রাণু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সন্তান জন্ম দেওয়ার সক্ষমতাও বিনষ্ট হয়। নারীদেরও ঋতুস্রাবে সমস্যা হয় এবং ক্রমান্বয়ে তাদের যৌন চাহিদা, দক্ষতা বা সেক্স পাওয়ার কমতে শুরু করে।

মস্তিষ্কের সমস্যা : মেথঅ্যামফেটামিন ও ক্যাফেইন দুটিই মস্তিষ্কের উত্তেজক পদার্থ, যা সেবনকারীকে বেপরোয়া করে দেয়। ইয়াবা সেবনে মস্তিষ্কের কিছু ছোট রক্তনালি নষ্ট হতে পারে। দীর্ঘদিন সেবনে অল্প বয়সেও ব্রেনস্ট্রোক করে প্যারালাইজড হওয়া বা চলাচলে অক্ষম হওয়ার আশঙ্কা ৯৫ শতাংশ।

রক্তচাপ বেড়ে যায় : দ্রুত হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় এবং রক্তচাপ জাগিয়ে তোলে।

মাথা ব্যথা : তীব্র মাথা ব্যথা হয় বা মাথা ধরে।

দৃষ্টিশক্তি কমে যায় : চোখের মণি প্রসারিত (ডায়ালাইটেড) হয়। দৃষ্টি আস্তে আস্তে কমে যায় বা নষ্ট হয়।

স্মৃতিশক্তি নষ্ট : কোনো কিছু মনে রাখতে পারে না বা ভুলে যায়। কাজের প্রতি মনোযোগ কমে যায় বা আগ্রহ থাকে না।

ক্ষুধা নষ্ট : ইয়াবার মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হলো ক্ষুধা কমে যাওয়া বা ক্ষুধাহীনতা। ফলে আস্তে আস্তে ওজন কমে যায়।

বুক ধড়ফড় : মাঝেমধ্যেই বুক ধড়ফড় করে, অস্থিরতায় ভোগে। বুকে ব্যথা বা হার্টের সমস্যা তৈরি হতে পারে।

লিভার সমস্যা : লিভারসিরোসিস থেকে লিভার ক্যান্সারেও পরিণত হতে পারে।

কিডনির সমস্যা : শরীরে এক ধরনের তাপ তৈরি হয়, যা কিডনির ক্ষতি করতে পারে।

ফুসফুসের সমস্যা : নাক দিয়ে ধোঁয়া হিসেবে ব্যবহার করায় ফুসফুসে পানি জমা বা অন্য ক্ষতি হতে পারে।

চর্মরোগ : স্কিন বা চামড়া লাল হয়ে যায় বা মারাত্মক চর্মরোগের সমস্যা তৈরি করে।

কর্মক্ষমতা হারায় : শরীর প্রচণ্ড অলস হয়ে পড়ে। পড়াশোনা, দৈনন্দিন কাজকর্মে আগ্রহ কমে যায়, কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

হাইপারথার্মিয়া : অতিরিক্ত ইয়াবা গ্রহণ হাইপারথার্মিয়া বা উচ্চ শারীরিক তাপমাত্রার কারণ হতে পারে।

ঘুমের সমস্যা : এর প্রভাবে কেউ দিনে ঘুমায়, রাতে জেগে থাকে। কেউ কেউ টানা সাত থেকে ১০ দিন জেগে থাকে, আবার একটানা ঘুমায়।

উইথড্রলের প্রভাব : কেউ যদি ইয়াবা হঠাৎ ছেড়ে দিতে চায়, তাহলে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হয়। এ জন্য মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেওয়াই ভালো।

এ ছাড়া পেটে ব্যথা, দাঁত কালো হওয়া, বমি বমি ভাব বা বমি, খিঁচুনি এবং খিঁচুনি থেকে মৃত্যুও হতে পারে।

মানসিক সমস্যা
ব্যবহার পরিবর্তন বা মেজাজ বিগড়ে যাওয়া : ইয়াবা আসক্তির ফলে ব্যক্তির ব্যবহারে আমূল পরিবর্তন ঘটে। মেজাজ বেশ খিটখিটে হয়। আচরণ হয় নিষ্ঠুর, নির্মম ও হিংস্র ধরনের। অল্পতেই অতিরিক্ত রেগে যায়। বিনা কারণে বেশি কথা বলা শুরু করে। অর্থের জন্য মিথ্যা কথা বলা, এমনকি চুরি করাও শুরু করে।

একাকিত্বে ভোগা : সামাজিক সম্পর্ক নষ্ট হয়। সে সর্বদা মানুষের কাছ থেকে এমনকি অভিভাবকদের থেকেও দূরে থাকার চেষ্টা করে। একেবারে চুপচাপ স্বভাবের হয়ে যায়।

সন্দেহবাতিকতা : অহেতুক সন্দেহবাতিকতা দেখা দেয়। স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবা বা অন্যরা তার ক্ষতি করছে—এমন ধারণা পোষণ করে।

নেশায় বুঁদ হওয়া : কখন আবার ইয়াবা নেবে, সে চিন্তায় ঘুরপাক খায়, বুঁদ হয়ে থাকে।

সিজোফ্রেনিয়া ও হ্যালুসিনেশন : কারো ক্ষেত্রে সিজোফ্রেনিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। অনেকে পাগল হয়ে যায়। চোখে উল্টাপাল্টা দেখে। কারো কারো ক্ষেত্রে হ্যালুসিনেশন বা গায়েবি আওয়াজ শোনার ঘটনা ঘটে।

বিষণ্নতা : বাইপোলার ডিজিজ বা বিষণ্নতা রোগে ভোগে। স্বপ্ন দেখা শুরু করে, দুশ্চিন্তা তৈরি হয়।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি