পিতার সত্তা তুমিই জানান দিলে, তুমিই আজ পিতার প্রতিচ্ছবি
শুভ
জন্মদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা -আমাদের প্রানপ্রিয় নেত্রী l
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পর রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তুমি বাংলাদেশকে এবং বাঙালী
জাতিকে যা দিয়েছো - বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছো,
যতদিন বাংলাদেশ বেঁচে থাকবে, ততদিন বাংলাদেশ আর বাঙালী তা মনে রাখবে l
তোমার নেতৃত্ব, তোমার শাসন, তোমার ভালোবাসা আর মমত্ববোধ, তোমার সাহস, সততা
আর দৃঢ়তা, তোমার মেধা আর দূরদৃষ্টি তোমাকে কালোত্তীর্ণ করেছে l তোমার সব
যুগান্তকারী সাফল্য, অবদান আর মহানুভবতার জন্য হাজার বছর পরও তোমার নাম
উজ্জ্বল হয়ে থাকবে বাঙালীর হৃদয়ে l
পিতা
হত্যার পর তোমার কারণেই আমরা আবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম। তোমার
কারণেই আমরা মুক্তি সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের কথা জানতে পেরেছিলাম।
গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছিলাম। মানুষ তার অধিকার ফিরে পেয়েছিল। তুমিই বাংলাদেশের
স্বাধীনতাবিরোধী হেনরী কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ির মতো ষড়যন্ত্রমূলক অপবাদ
মিথ্যা প্রমাণ করে বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রে পৃথিবীর বুকে
নেতৃত্বের পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছ। আর্থ-সামাজিক সকল ক্ষেত্রের উন্নতিতে
বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বিশ্বে আজ এক অনন্য উদাহরণ। সমগ্র বিশ্বে গণতন্ত্রের
মানসকন্যা থেকে তুমি আজ ‘উন্নয়ন কন্যা’য় ভূষিত। তোমার মানবিকতা আর
মমত্ববোধের জন্যে তুমি ‘মানবতার মা’ হিসেবেও অভিষিক্ত। তুমি এসেছিলে বলে
খাদ্য ঘাটতির দেশ বাংলাদশ আজ খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশ। তোমার নেতৃত্বেই জাতির
পিতা সূচিত বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম সফল পরিণতির দিকে যাচ্ছে। পঁচাত্তরে
পিতার হত্যার পর দেশের স্বাধীনতার সূর্য যখন প্রায় অস্তমিত হতে যাচ্ছিল,
তোমার প্রত্যাবর্তন আর তোমার নেতৃত্বের জন্যেই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ রাষ্ট্র
সৃষ্টির সার্থকতা প্রমাণিত হয়েছে। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ,
তোমার মতো একজন কালজয়ী নেতাকে আজকের দিনে তিনি আমাদের মাঝে পাঠিয়েছিলেন l
তোমার
শৈশব, তোমার কৈশোর, তোমার তারুণ্য তথা তোমার সমগ্র জীবন কেটেছে নানা রকম
সংগ্রাম আর চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে l জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা
হিসেবে তুমি আমাদের কাছে এক জীবন্ত কিংবদন্তি l পিতা হত্যার পর প্রায় ছয়
বছর তুমি খুনিদের সরকারের কারণে নির্বাসনে ছিলে l ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে
আসার পর তুমি সংবিধান লঙ্ঘনকারী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াই
শুরু করেছিলে। সেই লড়াইয়ে তুমিই নেতৃত্ব দিয়েছ। তোমার দাবিতেই এদেশে
জবাবদিহিতামূলক সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জাতির পিতার হত্যার
বিচার নিশ্চিত করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ তুমিই বাতিল করে খুনিদের
বিচার শুরু করেছিলে। পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় কোনো রাষ্ট্রে এই ধরনের বর্বর
কালো আইন জারী হয়েছিল কিনা সেটি আমার জানা নেই। খুনিদের বিচার এখনও
কার্যকর করা হচ্ছে। জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিল কারণ তিনি বাংলাদেশ
রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছিলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে তিনি মুক্তি সংগ্রাম আর
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এই সংগ্রাম আর যুদ্ধের তিনি মহানায়ক ছিলেন।
পঁচাত্তর থেকেই এই বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার হতে শুরু করল। বাংলাদেশের
স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী আমাদের মুক্তি সংগ্রামের মহান আদর্শগুলোকে দুর্বল ও
প্রয়োজনে ভুলুন্ঠিত করার লক্ষ্যে ঐতিহাসিকভাবে আমাদের গৌরবের প্রতিষ্ঠান ও
জাতীয় অর্জনগুলোকে বিতর্কিত ও দুর্বল করার কৌশল গ্রহণ করেছিল। এই
প্রক্রিয়ায় ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করা হলো।
সংবিধানের মৌলিক অংশ প্রস্তাবনা থেকে অবৈধভাবে মুক্তি সংগ্রাম আর
মুক্তিযুদ্ধের কিছু মৌলিক আদর্শ বাতিল করে সেখানে প্রতিস্থাপন করা হলো ঐ
আদর্শ বিরোধী বিধান। রাষ্ট্রের এই সর্বোচ্চ আইনের আরও অনেক জায়গায়
মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সম্বলিত বিধানগুলো বাতিল করা হয়েছিল। ওই সময়ে তারা
ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসবে মেতে উঠল। জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা
হল। সরকারি ও প্রশাসনিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামটি নিষিদ্ধ করা হলো। বঙ্গবন্ধু,
মুক্তিসংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে সংবিধান লঙ্ঘনকারী সামরিক
শাসকগুলো একই রকম আচরণ করেছে। তাদের অবস্থান বাংলাদেশের আদর্শের বিপক্ষেই
ছিল।
বাংলাদেশের
গণতেন্ত্রের জন্য, দেশের মানুষের জন্য তুমি অনেক ধৈর্য ধারণ করেছিলে; অনেক
অপমান আর অত্যাচার সহ্য করেছিলে। কত অপপ্রচারই না করেছিল তারা তোমার
বিরুদ্ধে! তোমার কষ্ট আমরা বুঝতাম, কারণ আমরা তোমারই অংশ। তুমি বঙ্গবন্ধুর
আদর্শের বাতি বয়ে বেড়িয়েছ বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। তুমি
মানুষকে জাগিয়ে তুলেছ, ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চার করেছ। তোমার হাতে পিতার
আদর্শের বাতি দেখে মানুষ প্রজ্জ্বলিত মশাল নিয়ে ছুটেছে। তুমি নতুন
প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়েছ আদর্শের চেতনা, তাদের দেখিয়েছ নতুন স্বপ্ন।
বাংলাদেশের স্বপ্ন। তোমার এই সময়টি বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘এনলাইটেনমেন্ট’
অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। তোমার ছড়ানো আদর্শ আর তোমার দেখানো স্বপ্নে
মানুষ জেগে উঠেছিল। তুমিই তাদের বুঝিয়েছ, এই রাষ্ট্র জনগণের মালিকানাধীন –
এটি রিপাবলিক, কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কুক্ষিগত সত্তা নয়। তোমাকে বাঙালি
বারে বারে সমর্থন দিয়েছে, তাদের সবটুকু ভালবাসা তারা তোমাকে উজার করে
দিয়েছে।
তুমি
শাসনভার নিয়েছ জনগণের জন্য, আমাদের সকলের জন্য। তোমার প্রতিটি সিদ্ধান্ত
যেন জনগণেরই সিদ্ধান্ত। তুমি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছ, বিচার বিভাগের
স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছ, গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা দিয়েছ আর সংসদকে
সত্যিকার অর্থে কার্যকর করে সংসদের কাছে সবার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করেছ।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে একটি গোষ্ঠী সেনাবাহিনীকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর
বিরুদ্ধে – আমাদের বিরুদ্ধে কত যে অপপ্রচার করেছিল, সে কথা নিশ্চয়ই তোমার
মনে আছে। তারা অপপ্রচার চালিয়েছিল, আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিবার
সেনাবাহিনী বিরোধী – সেনাবাহিনীর সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। অশুভ শক্তির
এই অপপ্রচার বহুদিন চলেছে। অথচ মানুষ আস্তে আস্তে জানতে পেরেছে, এই
সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি বাহিনী। তারা জানতে পেরেছে, বঙ্গবন্ধুর
জ্যেষ্ঠ দুই পুত্র সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন আর শিশু পুত্র
রাসেল দুই ভাইকে অনুসরণ করে সৈনিক হতে চেয়েছিল। সেই কথা আজ তোমার জন্যই
সবাই জানতে পারছে। সেই অশুভ শক্তির এক প্রতিভু যখন বহুবছর ধরে সেনানিবাস
দখল করে ছিল এবং অশুভ শক্তির এই অবস্থানকে তাদের ক্ষমতার একটা কেন্দ্র মনে
করা হতো, তুমিই তখন জাতির শক্তির প্রতিভু হয়ে সেনানিবাসকে দখল মুক্ত
করেছিলে।
ত্রিশ
লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা আমাদের সংবিধানকে তুমি কলঙ্কমুক্ত করেছ।
পঁচাত্তরের পর অসাংবিধানিক সরকারের সময় এই পবিত্র সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত
করা হয়। তুমিই এই সংবিধান থেকে মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী
সকল বিধান বাতিল করেছিলে। তুমি ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানে আবার প্রতিষ্ঠিত
করেছ। উন্নয়নশীল বিশ্বে তুমিই একমাত্র সফল রাষ্ট্রনায়ক যিনি সংবিধানকে সকল
অপশক্তি থেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য বিশেষ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ
(constitutional entrenchment) তৈরি করেছে যার সুফল আজ গণতন্ত্রকামী
প্রতিটি মানুষ পাচ্ছে। তুমিই এদেশে গণহত্যাকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে
যুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছ। মানবতাবিরোধী অপরাধকারীদের গাড়িতে যখন
জাতীয় পতাকা উড়ছিল, তখন এদেশে তাদের বিচার হবে না – এই রকম একটা ধারণায় যখন
মানুষ হতাশাগ্রস্ত ছিল, তুমি তখন জাতির সামনে আশার আলো প্রজ্জ্বলিত
করেছিলে। জাতির পক্ষে ঘোষণা দিয়ে এই নরঘাতকদের তুমি বিচার করেছিলে। বাঙালির
ইতিহাসে জাতি হিসেবে এটি একটি মাইলফলক অর্জন ছিল। এর কৃতিত্ব তোমারই প্রিয়
নেত্রী।
রাষ্ট্রনায়ক
হিসেবে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে তুমি অনন্য সাফল্য দেখিয়েছ। জাতির পিতার
দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় তোমার ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ (মধ্যম আয়ের
দেশ) ও রূপকল্প-২০৪১ (উন্নত দেশের মর্যাদা) অর্জনে জ্বালানী নিরাপত্তা
নিশ্চিত করতে তুমি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছ। তুমি শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়,
গোটা উন্নয়নশীল বিশ্বের একমাত্র সরকার প্রধান যিনি জ্বালানী নিরাপত্তার
বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তার সমার্থক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছ। ১৯৯৭ সাল থেকে
তুমি সরকার প্রধান হিসেবে বিদ্যুৎ ও জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন
করে আসছ। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্র ও উন্নয়ন সহযোগী এই মডেলটির প্রশংসা করেছে।
তোমার সরকার এক দশকে দেশে ব্যাপকভিত্তিক শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, উন্নয়ন
কর্মকাণ্ড ও নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে অব্যহতভাবে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি,
উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং অর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা
করে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেছে। এক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান জ্বালানীর চাহিদা
মেটানোর পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানী সরবরাহ অন্যতম প্রধান নিয়মক হিসেবে
কাজ করেছে।
তুমিই
দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম রাষ্ট্রনায়ক যিনি ‘এনার্জি ডিপ্লোমেসি’-কে
আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক, উপ-আঞ্চলিক ও দ্বি-পাক্ষিক পর্যায়ে প্রধান্য দিয়ে
আসছ। তোমার উদ্যোগে ভারত থেকে নির্ভরযোগ্য ও সাশ্রয়ীমূল্যে বিদ্যুৎ আনার
জন্যে ভেড়ামারায় যে ক্রসবর্ডার ইন্টারকানেকশন স্থাপিত হয়েছে, সেটি
বাংলাদেশের জন্য একটি যুগান্তকারী ঘটনা। তোমার উদ্যোগে ভারতের ত্রিপুরার
সাথেও ক্রসবর্ডার ইন্টারকানেকশন স্থাপিত হয়েছে। তোমার ‘এনার্জি
ডিপ্লোমেসি’র ফলে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করা
যাচ্ছে। তুমি এটি অনুধাবন করেছিলে, জ্বালানী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না
পারলে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেয়া যাবে না। বিদ্যুৎ আর জ্বালানীর সংস্থান
আর উৎপাদনে তুমি রেকর্ড স্থাপন করেছ। একটি কথা আমরা জানি, জাতির পিতা যে
গ্যাস সম্পদ আমাদেরকে দিয়ে গিয়েছিলেন, দেশের জ্বালানী নিরাপত্তা তথা
সার্বিক উন্নয়নের জন্য সেই সম্পদ রক্ষা করেছিলে তুমি। এই সম্পদ রক্ষা
করেছিলে বলে ২০০১ সালের প্রহসনমূলক নির্বাচনে তোমাকে হারানো হয়েছিল।
তোমার
কারণেই বাংলাদেশ গঙ্গা চুক্তির মাধ্যমে ভারত থেকে ন্যায্য পানি পাচ্ছে।
পৃথিবীর অনেক প্রতিবেশী এই ধরনের চুক্তি করতে পারেনি। অন্যান্য নদী থেকেও
চুক্তির মাধ্যমে পানি আনার উদ্যোগ তুমিই গ্রহণ করেছ। অশান্ত পার্বত্য
চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির মাধ্যমে একদিকে তুমি শান্তি প্রতিষ্ঠা
করেছ, অন্যদিকে ঐ এলাকায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব টেকসই করার জন্য যথাযথ
আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করেছ। তুমি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র্য সত্তাকে
সুরক্ষা দিয়েছ। এই ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী চুক্তির জন্য তুমি অনায়াসেই
সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পেতে পারতে। কিন্তু বাংলাদেশ বিরোধী
আন্তর্জাতিক লবি’র কারণে তোমাকে সেটি দেয়া হয়নি। পরবর্তীকালে, তোমার সব
অনন্য সাফল্যের জন্য তুমি অসংখ্য বিশ্বখ্যাত পুরষ্কার ও অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত
হয়েছ।
তুমি
আজ বাংলাদেশকে নিয়ে গেছ এক অনন্য উচ্চতায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর
ক্ষমতায়ন, শিশুমৃত্যুর হার, পরিবেশ, শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ইত্যাদিতে বাংলাদেশ
আজ বিশ্বে একটি অনুকরণীয় রাষ্ট্র। তোমার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত
রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উপনিত হয়েছে। দেশের এই যুগান্তকারী
সাফল্যের কৃতিত্ব একমাত্র তোমার। মানুষের প্রতি তোমার মমত্ববোধ আর ভালবাসার
কারণে তুমি আজ বাংলাদেশকে বানিয়েছ একটি কার্যকরী কল্যাণমুখী রাষ্ট্র।
এদেশের মানুষের জন্য তোমার প্রবর্তিত ‘সোশ্যাল সেফটি নেট’ বা সামাজিক
নিরাপত্তা বলয় গোটা উন্নয়নশীল বিশ্বে এক অনন্য ঘটনা।
বঙ্গবন্ধুর
দেখানো পথ ধরে তুমি দেশের সমুদ্রসীমা রক্ষা করতে গিয়েছ। দেশি-বিদেশি সকল
বিশেষজ্ঞ ও গবেষকের হাইপোথিসিস’কে ভুল প্রমাণ করে তোমার সুদক্ষ ও সাহসী
নেতৃত্বে এবং সফল এনার্জি ডিপ্লোমেসির কারণে তুমি মিয়ানমার ও ভারতের দাবির
বিরুদ্ধে বিশাল সমুদ্রসীমা জয় করেছ। আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন প্রতিষ্ঠিত
হওয়ার পর থেকে পৃথিবীর খুব কম দেশই এত সফলভাবে সমুদ্রের উপর তাদের ন্যায্য
অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। এই কৃতিত্ব কেবলই তোমার।
পাকিস্তান
সরকার ২৪ বছরে, জিয়া এরশাদ ও খালেদা জিয়ার মোট ৩১ বছর শাসনামলে যেখানে
ভারতের সাথে স্থল সীমান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারেনি, তোমার সুদক্ষ উদ্যোগ
ও কার্যকরী ডিপ্লোমেসির কারণে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল ভারত গ্রহণ করেছে
যার মোট আয়তন ৭১১০ একর ভূমি। অন্যদিকে, ভারতের ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশ
পেয়েছে যার মোট আয়তন ১৭,১৬০ একর ভূমি। এর ফলে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে
১০,০৫০ একর বা ৪০.৬৭ স্কোয়ার কি.মি. ভূমি পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক চুক্তি
সম্পাদন ও তোমার মাধ্যমে চুক্তি বাস্তবায়নের কারণে আজ বাংলাদেশ ভারতের কাছ
থেকে এই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভূমি লাভ করল। তোমার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ভারতের
কাছ থেকে যেভাবে ৪০.৬৭ বর্গ কিলোমিটার ভুমি আদায় করে নিল, এটি বাংলাদেশ তথা
দক্ষিণ এশিয়ায় একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই ৪০.৬৭
বর্গ কি.মি. এরিয়া পৃথিবীর ৪টি দেশের চেয়ে বড়।
নেত্রী,
তুমিই দেশের তৃণমূল মানুষের স্বাস্থ্য সেবা সুনিশ্চিত করার জন্য
স্বাস্থ্যখাতে কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থা চালু করেছিলে। তুমি এদেশে ১৩,৫০০
কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেছ। আরো ৪,৫০০ কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণাধীন
রয়েছে। একটি স্বল্পোন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের
দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য তুমি এই যুগান্তকারী ব্যবস্থা চালু করেছিলে। এটি
উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য একটি অনুকরণীয় মডেল। দেশের সিংহভাগ মানুষ এই
কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে তাদের স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। করোনাভাইরাস
প্যানডেমিক মোকাবেলা করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তোমার নেতৃত্বে গোটা
রাষ্ট্রযন্ত্র দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা
বিবেচনায় যেকোনো উন্নত দেশের তুলনায় এদেশে লকডাউন পরিস্থিতি বাস্তবায়ন করা
অত্যন্ত কঠিন কাজ। করোনাভাইরাস ইস্যুতে উন্নত দেশে শুধু চিকিৎসা সেবাই
একমাত্র চ্যালেঞ্জ। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে শুধু চিকিৎসা সেবা নয়,
লকডাউন কার্যকর করলে দেশের কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, খেটে খাওয়া স্বল্প আয়ের
মানুষের খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিও সরকারকে দেখতে হয়। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে
তুমি করোনাভাইরাস উদ্ভুত সকল বিষয় ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে পারদর্শিতার সাথে
মোকাবেলা করেছো। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় যা যা প্রয়োজন তুমি তাই করেছো।
তুমি দেশের মানুষকে বাঁচাতে ও অর্থনীতিকে রক্ষা করতে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার
অনুদান ও প্রণোদনা দিয়েছো।
এক
শ্রেণির নিন্দুক আছে যারা সারাটি জীবন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নানা
অপপ্রচার করে আসছে। তোমার প্রতিটি অর্জনেই তারা বিরোধীতা করেছে; চরম
অপপ্রচার আর মিথ্যাচার করেছে। তাদের সকল অপপ্রচারকে তুমি পৃথিবীর কাছে
অসত্য প্রমাণ করেছ। তাদের মিথ্যাচার আর তথ্য সন্ত্রাস এখনও থেমে নেই। এখন
আবার সেই পুরোনো শকুন অপপ্রচারে নেমেছে। করোনাভাইরাস নিয়ে তারা অসংখ্য লাশ
চায়। এ সংখ্যা দুই মিলিয়ন অর্থাৎ ২০ লক্ষ মানুষের। তারা অপপ্রচার করে জনমনে
নানা ভীতির সঞ্চার করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশে কেন এখনো যুক্তরাষ্ট্র,
ইতালি আর স্পেনের মতো মানুষ মরছে না, এই জন্যে তারা অত্যন্ত ক্ষুব্দ। তারা
বাংলাদেশে সত্যিকারের একটা মহামারী চায় যেখানে হাজার হাজার এমনকি লক্ষ লক্ষ
মানুষ মারা যাবে। সাম্প্রতিক সময়ে তাদের কয়েকজনের লেখায় সেটাই পরিষ্কার
হয়েছে। বাংলাদেশ তথা বিশ্ববাসীর এই সংকটের মধ্যেও তারা সরকার পতনের উপাদান
খুঁজে বেড়ায়। তারা প্রতিদিনই নানা রকমের অপপ্রচার করে যাচ্ছে। এই বৈশ্বিক
মহামারী মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করণীয়, তোমার সরকার তার
প্রত্যেকটিই করছে। তোমার বলিষ্ঠ নির্দেশে প্রতিটি কাজই হচ্ছে অত্যন্ত
আন্তরিকতার সাথে। পৃথিবীর অনেক দেশের তুলনায় অনেক দ্রুত, কার্যকরী ও
পেশাদারিত্বের সাথে এই কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। আমাদের
বিশ্বাস তুমিই পারবে এই অদৃশ্য ও অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করতে।
প্রিয়
নেত্রী, তুমি ফিরে এসেছিলে বলে অশুভ শক্তি পরাস্ত হয়েছে। তোমার সংগ্রামের
সময়টি বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘এনলাইটেনমেন্ট’ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। তুমি
ফিরে এসেছিলে বলেই বাংলাদেশ আজ অন্ধকার থেকে আলোর পথে। বঙ্গবন্ধুর পর
বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের আলোকবর্তিকা তুমিই। ‘৭৫
পরবর্তী বাংলাদেশের সকল অর্জন তোমার কারণেই। তোমার জন্য বাংলাদেশ আজ
বিশ্বসভায় মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে। যতদিন এই বাংলাদেশ বেঁচে থাকবে, তোমার
মহান কীর্তির জন্য রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ততদিন তোমার নামটিও থাকবে
দেদীপ্যমান। তুমি হাজার বছর বেঁচে থাকবে বাঙালির হৃদয়ে।
প্রিয়
নেত্রী, তোমার কারণেই অশুভ শক্তি এদেশে পরাস্ত হয়েছে l তোমার সংগ্রামের
সময়টি বাংলাদেশের `এনলাইটেনমেন্ট’ অধ্যায় । পিতার স্বত্তা তুমিই জানান
দিলেl পিতার মুখে দেখেছিলাম বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি, আজ বাঙালীর কাছে তুমিই
পিতার প্রতিচ্ছবি l তোমার কারণেই বাংলাদেশ আজ অন্ধকার থেকে আলোয়। বাঙালীর
মুক্তি সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের আলোকবর্তিকা তুমিই। ‘৭৫ পরবর্তী
বাংলাদেশের সকল অর্জন তোমার কারণেই। তোমার জন্য বাংলাদেশ আজ দেদিপ্যমান
নক্ষত্র। তোমার মহান কীর্তির জন্য তুমি হাজার বছর বেঁচে থাকবে বাঙালির
হৃদয়ে।
(Copied from BANGABONDHU ONLINE ARCHIVE)