Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

২১ অক্টোবর, ২০২০ ০৮:১৫ পূর্বাহ্ণ

কৃষি বনায়ন বিষয়ে একাদশ শ্রেণীর পাঠ

কৃষি বন(Agroforestry)


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে সারাদেশে ১ কোটি গাছের চারা রোপন কর্মসূচির উদ্বোধনকালে বলেন-"দেশে মোট বনভূমির পরিমাণ ২৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে।"

বাংলাদেশ একটি জনবহুল কৃষিপ্রধান দেশ। কিন্তু আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ মাত্র ৯০,৯৪,০০০ হেক্টর এবং দিন দিন তা বিভিন্ন কারণে কমে (বছরে প্রায় ১.৬ ভাগ হারে) যাচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং আবাদযোগ্য জমির অন্য কোনো কাজে (যেমন নতুন বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, কলকারখানা নির্মাণ ইত্যাদি) ব্যবহার হচ্ছে এর মূল কারণ। আবার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে প্রতিনিয়তই বাংলাদেশের বনজসম্পদ ধ্বংস হচ্ছে এবং সেই সঙ্গে কমে যাচ্ছে বনভূমির পরিমাণ। কোনো অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য মোট আয়তনের কমপক্ষে ২৫% বনভূমি থাকা প্রয়োজন। বনভূমির পরিমাণ ২৫% এর কম হলে আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র্য বিঘ্নিত হয়। সরকারি হিসাবে এ দেশে যদিও বনের আয়তন ১৫ থেকে ১৬% কিন্তু বেসরকারি হিসাবে ও বাস্তবতার নিরিখে ১০% এরও কম বলে মনে হয়। এতে দেখা দিচ্ছে অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, বন্যা, সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি বৃদ্ধি, উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা বৃদ্ধি প্রভৃতি রকমের প্রতিকূলতা। ফলে এ মুহূর্তে প্রয়োজন খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বনভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি। আর এ ক্ষেত্রে বসতবাড়িতে পরিকল্পিত কৃষি বনায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

কৃষি বনায়ন কি(What is Agroforestry):

কৃষি বনায়ন হচ্ছে এমন একটি টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনা, যা ভূমির সার্বিক উৎপাদন বৃদ্ধি করে; যুগপৎ বা পর্যায়ক্রমিকভাবে কৃষিজাত ফসল, বৃক্ষজাত ফসল ও বনজ উদ্ভিদ অথবা পশুপাখিকে একত্র-সমন্বিত করে এবং সেসব পরিচর্যা পদ্ধতি অবলম্বন করে, যা ওই নির্দিষ্ট এলাকার জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতির ধ্যান-ধারণার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। আবার অনেকের মতে, কৃষি বনায়ন হচ্ছে একটি ভূমি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি যেখানে বৃক্ষ, ফসল এবং পশুপাখিকে এমনভাবে সমন্বয়-একত্র করা হয় যেটা বৈজ্ঞানিকভাবে নিখুঁত হয়, পরিবেশগতভাবে গ্রহণযোগ্য হয়, ব্যবহারিক দিক থেকে সম্ভাব্য হয় এবং সামাজিক দিক থেকে কৃষকদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।

কৃষি বনায়ন নিম্নের তিনটি প্রধান উপাদানের সমন্বয়ে গড়ে উঠে

১. বৃক্ষ ও অন্যান্য বহু বর্ষজীবী কাষ্ঠল উদ্ভিদ।

২. মৌসুমি অথবা একবর্ষজীবী কৃষিজাত উদ্ভিদ ফসল।

৩. পশুপাখি ও মৎস্য।

কৃষি বনায়ন থেকে উপকার পাওয়া যায়:

১. এতে জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়।

২. একই জমি থেকে একই সঙ্গে ফসল, শাকসবজি, পশুখাদ্য, জৈবসার, কাঠ, ফল, মাছ, গোশত, ডিম, দুধ ইত্যাদি উৎপাদন সম্ভব।

৩. কৃষি বনায়নের ফলে মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক গুণ উন্নত হয়।

৪. একক চাষাবাদ এর শস্যহানির ঝুঁকি কমে যায়।

৫. ফসল, বৃক্ষ, পশুপাখি ও মাছের আন্তঃক্রিয়ায় পরস্পর উপকৃত হয়।

৬. প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ঘরবাড়ি ও ফসল রক্ষা পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

৭. বেকারত্ব দূরীকরণ ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়।

৮. সর্বোপরি বসতবাড়ির প্রাকৃতিক দৃশ্য সুন্দর হয় এবং পরিবেশ উন্নত হয়।

৯. প্রাকৃতিক পরিবেশের উন্নয়ন হয়।

সীমাবদ্ধতা

১. অপরিকল্পিতভাবে বৃক্ষ ও ফসল একসঙ্গে চাষাবাদ করলে এদের মধ্যে স্থান, সূর্যরশ্মি, পানি ও পুষ্টি নিয়ে প্রতিযোগিতা বেড়ে যেতে পারে এবং এতে ফলন কম হবে। 

২. বৃক্ষ ও ফসলের রোগবালাই পরস্পরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

৩. সেচের পরিমাণ বেশি লাগবে।

৪. গাছ কাটার সময় ফসল এবং অন্যান্য উদ্ভিদের ক্ষতি সাধন হতে পারে।

৫. জমি চাষ ও ফসল পরিচর্যায় অসুবিধা হয়।

৬. শ্রমের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

৭. পরিকল্পিত কৃষি বনায়নে জনগণের জ্ঞান বৃদ্ধি এক বড় চ্যালেঞ্জ।



আরো দেখুন