Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

২৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ১২:৫৯ অপরাহ্ণ

খেলাধুলার গুরুত্ব


খেলাধুলার গুরুত্ব (The important of sports)

খেলা মােদের লড়াই করা , খেলা মােদের বাঁচা মরা ; খেলা ছাড়া কিছুই কোথাও নাই । ” —রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাচীনকাল থেকেই খেলাধুলা মানুষের শারীরিক গঠন ও মানসিক বিকাশের প্রধান উৎস হিসেবে স্বীকৃত । দেহ এবং মনের পরিপূর্ণ বিকাশের মধ্যে দিয়ে মানুষের পূর্ণাঙ্গ চরিত্রগঠন সম্ভব হয় । মনের বিকাশের জন্য যেমন জ্ঞান অর্জনের প্রয়ােজন , তেমন দৈহিক বিকাশ ও সুস্থতার জন্য প্রয়ােজন খেলাধুলা । দেহ সুস্থ না থাকলে মনের বিকাশও সম্ভব নয় ।

স্বামী বিবেকানন্দের একটি বিখ্যাত উক্তি এ প্রসঙ্গে স্মরণীয়— “ দুর্বল মস্তিষ্ক কিছুই করিতে পারেনা । আমাদিগকে উহা বদলাইয়া সবল মস্তিষ্ক হইতে হইবে । তােমরা সবল হও । গীতা পাঠ অপেক্ষা ফুটবল খেলিলে তােমরা স্বর্গের সমীপবর্তী হইবে । ” বস্তুত খেলাধুলার মধ্যেই মানুষ খুঁজে পায় অফুরন্ত আনন্দের ভাণ্ডার ।

খেলাধুলার বিবর্তন ও বিশ্বভ্রাতৃত্ববােধ ও খেলাধুলা মানবসমাজে আদিকাল থেকে চলে আসছে । দেশ ও জাতির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য , নিজস্ব জীবনবােধ , ভৌগােলিক অবস্থানের মধ্য দিয়ে খেলাধুলার অভ্যাস , প্রকৃতি ও পদ্ধতি গড়ে ওঠে । ক্রিকেট , ফুটবল , হকি , লন টেনিস , টেবিল টেনিস , ব্যাডমিন্টন , ভলি , দাবা — ইত্যাদি এক এক দেশের নিজস্ব খেলা আজ বিশ্বের ক্রীড়াঙ্গনে স্বীকৃতি লাভ করেছে ।

দেশে দেশে এখন নিয়মিত খেলার আসর বসে । অজস্র ক্রীড়াপ্রেমী মানুষের মন জয় করেছে ক্রীড়াবিদরা । ভৌগােলিক বেড়াজাল , জাতিগত ও ধর্মগত ভিন্নতা মুছে গিয়ে মানুষ মানুষের আরও নিকটে আসার সুযােগ পেয়েছে।

অলিম্পিক ক্রীড়ানুষ্ঠান বিশ্বের ক্রীড়ামােদী মানুষের এক মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে । অলিম্পিকের অনুসরণে গড়ে উঠেছে এশিয়াড । এইসব ক্রীড়ানুষ্ঠান দূরের ব্যবধান ঘুচিয়ে মানুষকে আরও কাছে টেনে এনেছে । এর মধ্যে দিয়েই এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের শুভেচ্ছা বিনিময় ঘটে । ভাবের আদানপ্রদানের মধ্য দিয়ে পারস্পরিক সম্প্রীতির সেতুবন্ধন গড়ে উঠেছে । দূরদর্শনের পর্দায় খেলা দেখে সারাবিশ্বের কোটি কোটি ক্রীড়াপ্রেমী দর্শক মুগ্ধ হন এবং অকুণ্ঠ প্রশংসা ও ভালােবাসায় অভিনন্দিত করেন ক্রীড়াবিদদের।


খেলাধুলার গুরুত্ব(The important of sports)

খেলাধুলার মধ্য দিয়ে চরিত্রগঠনের সূত্রপাত জন্মলগ্ন থেকে শিশুর খেলাধুলার প্রতি এক সহজাত আকর্ষণ থাকে । শিশু জন্মের পর থেকে পা – ছুড়ে খেলা করে । এইভাবে খেলার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে সে বড়াে হতে থাকে । বয়ােবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গৃহের গণ্ডি পেরিয়ে বৃহত্তর ক্রীড়াঙ্গনে প্রবেশ করে । এইভাবে বৃহত্তর জগতে প্রবেশের ফলে সে মানসিক সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হওয়ার সুযােগ পায় ।

খেলাধুলা ও শৃঙ্খলাবােধ ও নিয়মিত খেলাধুলা ও শরীরচর্চার মধ্য দিয়ে মানুষের মনে গড়ে ওঠে শৃঙ্খলাবােধ । ক্রীড়াঙ্গনে নিয়মিত শৃঙ্খলাবােধের অনুশীলনে দেহ হয়ে ওঠে সুস্থ , সবল , মন হয় ওঠে সতেজ ও সুন্দর । মনে সমষ্টি বােধের জাগরণ ঘটে । ফলে দলগত আদর্শ ও ঐক্যবােধের উন্মেষ ঘটে । ব্যক্তিগত স্বার্থ মন থেকে বিলুপ্ত হয় । সেই জায়গায় সমষ্টির কল্যাণ চিন্তা বা দলগত ঐক্য মুখ্য হয়ে ওঠে । এই দলগত শৃঙ্খলাবােধই একটি জাতির উন্নতির সােপান । এইজন্য বর্তমানে প্রত্যেক রাষ্ট্রেই খেলাধুলাের মূল্য অপরিসীম ।

খেলাধুলা ও চরিত্রগঠন ও নিয়মিত শৃঙ্খলা ও সংযম মেনে খেলাধুলার মধ্য দিয়ে চারিত্রিক দৃঢ়তা ও মানসিক বলিষ্ঠতার জন্ম হয় । খেলাধুলা মানুষের মনে ভারসাম্যের সৃষ্টি করে । খেলার মাঠে ও জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে মানুষকে প্রতিযােগিতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে হয় । এই প্রতিযােগিতায় সাফল্য – ব্যর্থতা , জয়পরাজয় আছে । সাফল্যের বা জয়ের উল্লাসে যেমন অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস এবং আত্মতুষ্টি ভালাে নয় , তেমনি ব্যর্থতা বা পরাজয়ে মনােবল হারানাে বা ভেঙে পড়াও ঠিক নয় । খেলাধুলার মাধ্যমে সব রকম প্রতিকুলতার মধ্যে সমমানসিকতা বজায় রাখার অভ্যাস গড়ে ওঠে । খেলাধুলা মানুষকে শেখায় নিয়মানুবর্তিতা , পরমতসহিষুতা , সহনশীলতা , সংকল্পের দৃঢ়তা , ধৈৰ্য্য , একাগ্রতা ও উদারতা ।

সবশেষে বলা যায়,বর্তমানে দেশের বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী আজ খেলাধুলার সুযােগসুবিধা থেকে বঞ্চিত । কিন্তু শিক্ষালাভের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রছাত্রীরা খেলাধুলার সুযােগসুবিধা পেলে ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্য বিষয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়বে । ফলে অপসংস্কৃতির দিকে তাদের প্রবণতা কমবে ; বাড়বে সাহস ও শৌর্য । ভীরুতা ও কাপুরুষতার খােলসমুক্ত হয়ে তারা হয়ে উঠবে বিপদ – ভয়হীন , নিঃশক ও উদারচেতা ।



আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি