Loading..

প্রেজেন্টেশন

২৭ ডিসেম্বর, ২০২০ ১২:৪৩ পূর্বাহ্ণ

মানবধর্ম কবিতা

বিখ্যাত বাউল সাধক সুর সম্রাট লালন শাহের 'মানবধর্ম' কবিতাটি মূলত একটি গানের সংকলন। লালনের বিখ্যাত গান 'সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে' গানটি এখানে কবিতা আকারে প্রকাশিত হয়েছে। এ কবিতায় লালন শাহ্ মানুষকে ভেদাভেদ ভুলে একত্রে বসবাসের কথা বলেছেন। তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ প্রভৃতির ঊর্ধ্বে ওঠে মানবধর্ম প্রতিষ্ঠার শিক্ষা দিয়েছেন। কবিতাটিতে সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম 'মানবধর্ম' এর জয়গান করা হয়েছে। এ পৃথিবীর সৃষ্টি জগতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। সৃষ্টিকর্তা সকল মানুষকে সমান করে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু এ পৃথিবীতে সকল মানুষ সমান মর্যাদার অধিকারী নয়। আমরা সৃষ্টিকর্তার নিয়মকে অমান্য করে মানুষে মানুষে প্রভেদ গড়ে তুলেছি। জাতি, ধর্ম, বর্ণ প্রভৃতির দোহাই দিয়ে আমরা মানুষে মানুষে দেয়াল গড়ে তুলি। কিন্তু লালন শাহ্ কোন জাত-ধর্মে বিশ্বাস করেন না। তিনি মনে করেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ দিয়ে মানুষের আসল পরিচয় পাওয়া যায় না। মানুষের সবচেয়ে বড় পরিচয় হল সে মানুষ। মিথ্যে সকল ধন-সম্পদ ও জাতের গৌরব। মানুষ জন্মের সময় যেমন কোন জাতের চিহ্ন নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না। তেমনি মৃত্যুর সময়ও কোন জাতের চিহ্ন নিয়ে মৃত্যুবরণ করে না। হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সকলকে একইভাবে জন্মগ্রহণ ও মৃত্যুবরণ করতে হয়। কারও জন্য পৃথক কোন নিয়ম নেই। সৃষ্টিকর্তা সবাইকে এক জাতের করেই সৃষ্টি করেছেন। কেউ মালা জপে, কেউ তসিব জপে এতেই কি জাত ভিন্ন হয়ে যায়? বামুন চেনা যায় পৈতা দেখে, খত্না দিলেই হয়ে যায় মুসলমান। কিন্তু নারী জাতিকে কীভাবে চেনা যায়? তাদেরতো হিন্দু বা মুসলমানের কোন চিহ্ন থাকে না। তবে কেন মিথ্যে এ জাতের বড়াই? তাই লালন শাহ্ সাত বাজারে বিকিয়ে দিয়েছেন তাঁর জাত ও ধর্ম। তিনি নিজেকে কোন জাত বা ধর্মের গণ্ডিতে আবদ্ধ রাখেন নি। তিনি জাত-ধর্মের ঊর্ধ্বে ওঠে সুরের সাধনা করেছেন। তিনি জাতিতে ছিলেন মানবজাতি ও তাঁর ধর্ম ছিল মানবধর্ম। তাই আমাদেরও সকলের এক পরিচয় হওয়া উচিত, আমরা মানবজাতি। আর জাত-ধর্মের বিভেদ ভুলে মানবধর্মে বিশ্বাস করা উচিত। তবেই আমরা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারবো। লালন শাহ্ নিজেই এ মতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি তাঁর সুরের বাঁধনে সকল জাতের মানুষকে এক করে বেঁধে দিতে চেয়েছিলেন। তাই তাঁর গানে মানবজাতির কথাই লক্ষ করা যায়। আমাদের জীবনকে সুন্দর ও স্বার্থক রূপে গড়ে তুলতে মানবধর্মের অনুসরণ করা উচিত। লালনের দর্শনকে অন্তরে ধারণ করা উচিত। তবেই আমাদের সমাজ, দেশ তথা পৃথিবী হয়ে ওঠবে ভেদাভেদহীন ও বৈষম্যহীন।