Loading..

পাঠসংশ্লিষ্ট ছবি/ইমেজ

২৯ ডিসেম্বর, ২০২০ ১২:২৭ পূর্বাহ্ণ

অটিজম নিরাপত্তায় একজন সমাজকর্মীর করনীয়।

অটিজম আসলে কি?

অটিজম শব্দটি গ্রিক শব্দ থেকে আগত, যার অর্থ আত্ম বা নিজ থেকে এসেছে। শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন সুইস মনোবিজ্ঞানী চিকিৎসক অয়গেন বয়লার। অটিজম শিশুর মানসিক সমস্যাকে বোঝানো হয়। অটিজম কোনো রোগ নয়। এটি স্নায়ু বিকাশজনিত সমস্যার একটি বিস্তৃত রূপ বা অটিজ স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার নামে পরিচিত। এখানে স্নায়ু শব্দটি স্নায়ুতন্ত্র বা মস্তিষ্কের সাথে স্নায়ুর সম্পর্ক বোঝায়। বিকাশজনিত শব্দটির মাধ্যমে শিশুর বিকাশ প্রক্রিয়াকে বোঝানো হয়েছে। প্রাক শৈশবকাল থেকে এই সমস্যাটি শুরু হয়, যা শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। সাধারণত শিশুর জন্মের দেড় বছর থেকে তিন বছরের মধ্যে অটিজমের লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়। সামাজিক সম্পর্ক, যোগাযোগ এবং আচরণের ভিন্নতাই এই সমস্যাটির প্রধান বিষয়। এ ছাড়াও অটিজম রয়েছে এমন শিশুর শারীরিক ও বুদ্ধিভিত্তিক শিক্ষণ প্রক্রিয়া সংক্রান্ত ও ইন্দ্রিয়ানুভূতি সংক্রান্ত সমস্যাও বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এটা মনে রাখা জরুরি যে, সব অটিস্টিক শিশুই এক রকম নয়। যেমন Ñ অটিজমের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা সব অটিস্টিক শিশুর মধ্যে কম-বেশি পরিলক্ষিত হয়। আবার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে প্রতিটি শিশুর জন্য আলাদা আলাদা হয়ে থাকে। অটিজম স্পেকট্রামে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের অটিজম লক্ষ্য করা যায়।

অটিজম স্পেকট্রামকে একটি রংধনুর সাথে তুলনা করা যায়। রংধনুতে যেমন অনেক রং থাকে, অটিজম স্পেকট্রামের তেমনি বিভিন্ন ধরনের অটিজম থাকে। এগুলোর মধ্যে একটি হলো অ্যাসর্পাজার্স সিনড্রোম। অটিজম শিশুর সামাজিক ও বাচনিক বিকাশের এক রকম প্রতিবন্ধকতা। অটিজম মস্তিষ্কের স্নায়ুবিক সমস্যা বা মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ব্যাহত করে। মস্তিষ্কের অসমবিকাশ ও বিকাশগত প্রতিবন্ধকতাই অটিজম। উআত্মসংবৃতি অর্থাৎ নিজের মধ্যে মগ্ন থাকা। সাধারণত কোনো কিছু শুনে শেখার চেয়ে দেখে শেখার প্রবণতা বেশি থাকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অটিজমকে একটি রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। যার সাংকেতিক নম্বর হলো এক ৮৪.০।

 

অটিজমের সাথে সম্পর্কিত কিছু স্বতন্ত্র গুণাবলী ও সবল দিক :

অটিস্টিক শিশুদের কোনো বিষয়ে অসাধারণ দক্ষতা বা ক্ষমতা দেখতে পাওয়া যায়। এর সংখ্যা খুবই কম তবুও এ ধরনের বিশেষ দক্ষতা তাদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে এবং তাদেরকে করে তোলে অসাধারণ। এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে, প্রতিটি অটিস্টিক শিশুর মধ্যে এ ধরনের বিশেষ প্রতিভা থাকবে। তবে এ বিষয়ে সচেতন থাকলে তাদের সুপ্ত প্রতিভা খুঁজে বের করা সহজ হবে, শিশুটি সমাজে সমাদৃত হবে এবং তার অন্যান্য দিকের ঘাটতি কিছুটা হলেও পূরণ হবে। অটিস্টিক শিশুরা যে বিষয়টির ওপর বেশি মনোযোগ দেয় সেদিকেই তাদের প্রতিভা বিকাশিত হতে পারে। দেখা যায় ক্যালেন্ডারের দিকে মনোযোগ আছে এমন শিশুটি অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির জন্মতারিখ বা বার সঠিকভাবে মনে রাখতে পারে। এভাবে সে অনেক তথ্য মনে রাখতে পারে। আবার একটি কঠিন ও কৌশলী কাজকে ছোট, ছোট সহজভাবে ভাগ করে এবং সেটার দিকে মনোযোগ দিয়ে তারা সেই কঠিন ও কৌশলী কাজটি সমাধান করতে পারে।

অটিজম আছে এমন শিশুদের কিছু সবল দিকগুলো হলো :

সু-নিপুণভাবে দেখার ক্ষমতা। সু-শৃঙ্খল নিয়মনীতির ধারণা, সিকোয়েন্স প্যাটার্ন ইত্যাদি বিষয়গুলো বুঝতে ও মনে রাখতে পারা। বিস্তারিত ও মুখস্থ করার মতো বিষয় যেমনÑ গণিত, ট্রেনের সময়সূচি, খেলার স্কোর মনে রাখতে পারে। দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতি। কম্পিউটার ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা, সংগীত ও বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহ, বিশেষ পছন্দনীয় বিষয়ের প্রতি মনোযোগ। শৈল্পিক দক্ষতা অল্প বয়সে লিখিত ভাষা পড়তে পারা। বানান মনে রাখা। সততা, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ইত্যাদি।

অটিজম কেন হয়?

এখন পর্যন্ত তার সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা ও জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির সাথে সাথে কারণ অনুসন্ধানের কাজটিও বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন কারণে যে অটিজম হয়ে থাকে এ বিষয়ে বর্তমানে বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন পর্যায়ে অটিজমের যে জটিল লক্ষণ দেখা যায় তা থেকে বলা যায়, একাধিক কারণে অটিজম হতে পারে। জন্ম পূর্ব ও জন্মকালীন ও জন্ম-পরবর্তী যে কোনো সময়ে জেনেটিক এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশের প্রভাবে অটিজম হতে পারে। কোনো শিশুর মধ্যে অটিজমরে কিছু লক্ষণ থাকলেই তার অটিজম আছে এমন সিদ্ধান্ত দ্রুত নেওয়া যাবে না। কেবলমাত্র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই বলতে পারবেন শিশুটির অটিজম আছে কিনা। শিশু বিশেষজ্ঞ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, শিশু স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ, মনোবিজ্ঞানী কিংবা অটিজমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকই অটিজম নির্ণয় করতে পারবেন।

অটিস্টিক শিশুদের জন্য শিক্ষাদান কার্যক্রম খুবই নিবিড় ও বিশদভাবে হওয়া প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীদের প্রয়োজন আছে এবং শিক্ষার্থীর আচরণ, বিকাশ, সামাজিক ও একাডেমিক প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে সপ্তাহে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য কত সময় ব্যয় করতে হবে তা নির্ধারণ করা হয়। কেবলমাত্র একটি পদ্ধতিতে অটিস্টিক শিশুর শিক্ষাদান সম্ভব নয়। একসঙ্গে বা ক্রমান্বয়ে একাধিক পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়। প্রয়োগিত আচরণ বিশ্লেষণ নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে অনেকগুলো শিক্ষাদান পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। অটিস্টিক শিশুদের সফলতার জন্য তাদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। সে জন্য ছোট ছোট সাফল্যও উল্লেখ করতে হবে এবং অটিজমের বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীর গুণাবলী জানা থাকলে উপযুক্ত পরিকল্পনা করতে সহায়ক হবে। অটিস্টিক শিশুদের সহপাঠীদের সহযোগী বন্ধু হিসেবে সর্বদা ভাবতে হবে। সহপাঠীদের মধ্যে বন্ধুত্বের ধারণা এবং লক্ষ্য অর্জনে একতাবদ্ধ তার পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন যাতে অটিস্টিক শিশুরা যথাযথ সম্মান, সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে। অটিজম সংক্রান্ত শিক্ষা বা সংবেদনশীলতার প্রশিক্ষণ কোনো নিদিষ্ট শিক্ষার্থীর ওপর ভিত্তি করে হবে না, তা হতে হবে সার্বিকভাবে।

সাধারণত সারা জীবন ধরে অটিজমের লক্ষণগুলো একজনের মধ্যে থাকতে পারে। তবে যথাযথ সাহায্য, নির্দেশনা ও উপযুক্ত শিক্ষা পেলে সময়ের সঙ্গে কিছু কিছু লক্ষণের উন্নতি হয়। যাদের মাঝে অল্প মাত্রার সমস্যা থাকে তাদের উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয় এবং তারা মোটামুটি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। মাঝারি ও বেশি সমস্যাগ্রস্ত শিশুদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তারা ঠিকমতো কথা বলতে পারে না এবং নিজের যতœও নিতে পারে না। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা গেলে এবং নিবিড় প্রশিক্ষণ ও নির্দেশনা পেলে অটিস্টিক শিশুরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য পেতে পারে। অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য বাংলাদেশেও কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গড়ে উঠেছে, এগুলো হলোÑ প্রয়াস, অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন, সোয়াক, অটিস্টিক চিলড্রেন, ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ইত্যাদি। এ ছাড়া কিছু স্কুলও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যারা অটিজম শিশুদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে কর্মরত রয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা এবং সহযোগিতা পেলে এসব প্রতিষ্ঠান আরও বেশি কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশা করা যায়।

আরো দেখুন

কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যাইনি