সহকারী শিক্ষক
০৪ জানুয়ারি, ২০২১ ১২:২৫ অপরাহ্ণ
শিশুদের বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক ।
মোহাম্মদ রেহান উদ্দিন
ধরন: সাধারণ শিক্ষা
শ্রেণি: অষ্টম
বিষয়: শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
অধ্যায়: চতুর্থ অধ্যায়
প্রথমেই আমাদের জানা প্রয়োজন “শিশু বিকাশ” মূলত কি?
–“শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক” এ
বিভাগে শিশুর জন্মপূর্ব বিকাশ হতে শুরু করে, জন্মপরবর্তী সময় অর্থাৎ
মানবজীবনের প্রতিটি ধাপের ক্রমবিকাশ সম্পর্কে পাঠদান করানো হয়। সুস্থ সবল ও
পরিপূর্ণ শিশু জন্মদানের লক্ষ্যে মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময় হতে পিতা- মাতা ও
অন্যদের সচেতনতা, পারস্পারিক সম্পর্ক, শিশুর বিভিন্ন বয়সানুযায়ী বৈশিষ্ট্য
প্রকাশের সাথে সাথে তার সামাজিকীকরণ সঠিক নিয়মে করা, শিশু পরিচালনার
ক্ষেত্রে শিশুর চাহিদাকে অগ্রাধিকার প্রদানের মাধ্যমে শিশুর ব্যক্তিত্ব এর
বিকাশ ও সামাজিক বিকাশ এবং প্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক শিশুদের সঠিক নিয়মে
পরিচালনা সবকিছুই শিশু বিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক এর আওতায়ভুক্ত। বিভিন্ন
সমাজবিজ্ঞানীদের মতবাদ অনুযায়ী শিশু বিকাশ হলো, ” Child development refers
to the process through which human beings typically grow and mature
from infancy through adulthood. The different aspects of growth and
development that are measured include physical growth, cognitive growth,
and social growth. Child development focuses on the changes that take
place in humans as they mature from birth to about age 17.”
কি কি পড়ানো হয় শিশু বিকাশে?
–শিশু বিকাশে মূলত একজন মানুষের
জীবন ধারা ও সামাজিকীকরণ সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়। এজন্য একজনের অবশ্যই
জীববিজ্ঞান, সাইকোলজি বিষয়ে আগ্রহ থাকতে হবে। কারণ, একটি শিশুর বেড়ে উঠা
থেকে শুরু করে সঠিক বিকাশ চিহ্নিত করার জন্য জীববিজ্ঞান আবশ্যক। এছাড়াও
জন্মপরবর্তী সময়ে তার শারীরিক বিকাশের সাথে সাথে মানসিক বিকাশ সুষ্ঠ হচ্ছে
কিনা তা জানার জন্য সাইকোলজি এবং সোশিয়োলজি বিষয়েও জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
এছাড়াও আরো মূল পঠিত কিছু বিষয় হলো রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, খাদ্য ও পুষ্টি,
চাইল্ড সাইকোলজি, ফ্যামিলি কাউন্সেলিং ইত্যাদি। বিজ্ঞান বিভাগের
শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার থাকলেও ব্যবসা বা মানবিক বিভাগের স্বল্প সংখ্যক
শিক্ষার্থীর এই বিভাগে অধ্যায়ন এর সুযোগ রয়েছে। স্নাতক ডিগ্রী শেষ করার পর
এখানে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া দেশের বাইরে/ প্রাইভেট
বিশ্বববিদ্যালয় থেকে early childhood এ উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করতে পারবেন।
শিশু বিকাশ বিষয়টি সর্বপ্রথম কলেজ অব হোম ইকোনমিকস এ ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষ
থেকে পাঠদান শুরু করে। বর্তমানে কলেজ অব হোম ইকোনমিকস ছাড়াও আরো ৫ টি
প্রাইভেট হোম ইকোনোমিকস কলেজে প্রতিবছর প্রায় ১২০০ শিক্ষার্থী এই বিভাগে
ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
★শিক্ষাজীবন না হয় সমাপ্ত হলো, চাকরিক্ষেত্র কেমন এই বিভাগ থেকে?
অনেকেরই ধারণা কি করবে শিশু
বিকাশ পড়ে! বাচ্চা লালন-পালন সে তো এমনিই হয়ে আসছে যুগ-যুগান্তরে এতে পড়ে
কি আর করবে বাপু!! তাদের জন্য নিম্নোক্ত তথ্যগুলো যথেষ্ট বলে মনে হয়ঃ
–শুধু পারিবারিক জীবনের জন্যই যে
এই বিষয়ের জ্ঞান প্রয়োজন তা নয়। কর্মক্ষেত্রেও রয়েছে চাহিদা। এই বিভাগের
শিক্ষার্থীরা শিশুদের কল্যাণে নিয়োজিত বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা,
বিভিন্ন হাসপাতালের শিশু বিকাশ কেন্দ্রে শিশু সংক্রান্ত কাউন্সেলিং,
নার্সারি এডুকেশন, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন / অটিস্টিক শিশুদের শিক্ষা ও
পরিচালনা ক্ষেত্রে এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাডার ও
নন ক্যাডারভুক্ত সরকারি চাকুরীতে দক্ষতার সাথে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে
থাকে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যারা শিশুদের কল্যানে কাজ করে চলেছে
বিশ্বব্যাপী যেমন (UNESCO, UNICEF) আপনি তাদের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে
পারেন নিজের কাজের মাধ্যমে। যদিও এক্ষেত্রে একাডেমিক ফলাফলের সাথে আপনার এই
ধরনের সেবামূলক কাজের মানসিকতা ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। এছাড়াও দেশের ভেতর
বিভিন্ন হাসপাতালে চাইল্ড সাইকোলজিস্ট হিসেবে যুক্ত হতে পারেন। দেশের বাইরে
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে Early childhood এ উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনের মাধ্যমে
নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন শিক্ষক হিসেবে। অনেক শিশু কল্যাণমূলক/ বিশেষ
চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের পরিচালনায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত, দক্ষ,
অভিজ্ঞ/ নেপথ্য শিক্ষা না থাকায় সঠিভাবে তাদের পরিচালনা এবং বিকাশ কাজ
সম্পূর্ণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এক্ষেত্রে মুলত এই বিষয়ে আপনার কাজ করার ইচ্ছা
এবং সেবার মানসিকতায় পারে একটি সুন্দর, সুস্থ-স্বাভাবিক আগামী প্রজন্ম গড়ে
তুলতে। যেখানে হয়তো কোন বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুকে বোঝা মনে না করে
সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন অথবা সঠিক বিকাশ ব্যাহত হওয়ায় বিপথগামী কোন
পথশিশুকে অন্ধকার হতে আলোর দিশা দিতে পারবেন। তবে আলোর মশাল হাতে শুরু হোক
আগামী পথচলা| শুভকামনা সবার জন্য।