Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

১৬ জানুয়ারি, ২০২১ ১০:৩৪ অপরাহ্ণ

উঠান পাঠশালা
img
MD. SHAHIN MIA

সহকারী শিক্ষক

উঠান পাঠশালা

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের শতভাগ অংশগ্রহণ ছিল একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমার উদ্ভাবনী গল্প উঠান পাঠশালা নিয়ে হাজির হয়েছি আমি মোঃ শাহীন মিয়া সহকারী শিক্ষক, ঈশান ইনস্টিটিউশন, ফরিদপুর সদর, ফরিদপুর । 2020 যখন সারা দেশে করোনার কারণে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয় । সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে শ্রেণি কার্যক্রম। আমরা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থা থেকে দূরে চলে যেতে থাকি। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আমাদের সামনে আসে বড় চ্যালেঞ্জ। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী সবাই উদ্বিগ্ন। এরই মধ্যে সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস শুরু হয়। আমি আমার শিক্ষার্থীদের নোটিশ দেওয়ার জন্য ওয়েবসাইট এবং ফোনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কে জানিয়ে দেই সংসদ টেলিভিশন ক্লাস দেখার জন্য । এরপর প্রধান শিক্ষকের অনুমতিক্রমে আমি গুগোল ফর্ম তৈরী করে সমস্ত শিক্ষকমন্ডলীর কাছে প্রেরণ করে তাদের মতামত চাই , এই করোনা কালীন সময়ে আমরা শিক্ষার্থীদের জন্য কি করতে পারি? এরই মধ্যে আমি অনলাইনে ক্লাস শুরু করি চারিদিকে লকডাউন থাকার কারণে দোকানপাট বন্ধ ছিল আমি হোয়াইট বোর্ড কিনতে পারিনি তাই আমি টাইলস দিয়ে একটি বোর্ড তৈরি করি এবং কাঠ দিয়ে ট্রাইপোড তৈরি করই। এরপরে আমি রুটিন অনুযায়ী ক্লাস নিতে থাকি। অনলাইনের ক্লাসগুলো ইউটিউবে আপলোড দেই যাতে শিক্ষার্থীরা পরবর্তীতে এই ক্লাসগুলো দেখতে পায়। এতকিছু করার পরও অনলাইনে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি একেবারেই নাজুক ছিল। শুরু করি আরও একটি নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার। অনলাইন ক্লাস , সংসদ টিভি না দেখার কারণ ফোনের মাধ্যমে জানতে পারি কী কারণে শিক্ষার্থীরা সংসদ টিভি অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না? জানার চেষ্টা করি আরো বিস্তারিই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরাসরি অভিভাবকদের সাথে আলোচনা করি কেন আপনার সন্তান অনলাইনে ক্লাস দেখে না। অভিভাবকদের মাধ্যমে জানতে পারলাম অনেকের বাড়িতেই টিভি এবং স্মার্টফোন নাই। যাদের বাড়িতে স্মার্টফোন আছে তারা নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে ক্লাস দেখতে পারে না। এর পর আমি আবার গ্রামে গ্রামে গিয়ে যাদের স্মার্ট ফোন আছে তাদেরকে আমার নিজের নেট ব্যবহার করে অনলাইন ক্লাসে সংযুক্ত করতে থাকি এবং অভিভাবকদের বলি তারা যেন তাদের সন্তানদের মোবাইলের ক্লাস দেখার সুযোগ করে দেই। আমরা অনলাইনে ক্লাস নিতে থাকি এবং শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যুক্ত থাকার জন্য ক্লাসের কমেন্টে তাদের নাম, রো্‌ শ্রেণি, শাখা ইত্যাদি লিখতে বলি। কিন্তু অনলাইন ক্লাস দেখার উপস্থিতি আগের চেয়ে বাড়লেও আশানুরূপ নয় কারণ এখনও সবার কাছে ডিভাইস বা ইন্টারনেট নাই এরপর আবারো গ্রামে গ্রামে যায় এবং অনেক অভিভাবক কে জিজ্ঞাসা করি তাদের সন্তানরা কেন অনলাইন ক্লাস করছে না। তাদের ভাষ্য আমরা আপনাদের কথামতো আমাদের সন্তানদেরকে মোবাইল দিয়েছি তারা সারাদিন মোবাইল নিয়ে থাকে যখনই বলি তখনই বলে ক্লাস দেখছি । এতে আমার ভাবনা আরো বেড়ে যায়। সবাই যদি এভাবে দেখে তাহলে উপস্থিতির হার আরো বেশি হওয়ার কথা ছিল। অনুসন্ধান করতে থাকি পুরো ঘটনা কি ? এরপর যেটা দেখলাম সেটা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা পাবজি, ফ্রী ফায়ার সহ বিভিন্ন গেমসে আসক্ত হয়ে পড়েছে । তারা প্রতিনিয়ত যেখানে সেখানে বসে পাবজি, ফ্রী ফায়ার নামক গেমস খেলে। এরপর আমরা আমাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করি আমরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে একটা নির্দিষ্ট বাড়িতে উঠান পাঠশালার আয়োজন করি । অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি গ্রামে গ্রামের পাঠশালা তৈরি করে প্রতি সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে একটি বাড়িতে পাঠদান করে থাকি। শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার প্রায় শতভাগ। এই কাজটি আমাকে সহজ করে দিয়েছে আমার কিছু ছাত্র এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থী তাদের কাজ ছিল সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে সবার বাড়িতে খবর পৌঁছে দেওয়া। নির্দিষ্ট দিনে একজন শিক্ষার্থী প্রয়োজনীয় বই, একটি চেয়ার এবং মাস্ক পরিহিত অবস্থায় অংশগ্রহণ করত। উঠান পাঠশালা অংশগ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা বইয়ের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। করোনা কালীন সময়ে অনেক শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি উঠান পাঠশালা অংশগ্রহণ করার কারণে তাদের ঘরবন্দি অবস্থা থেকে তারা বের হয়ে আসে এবং তারা প্রতিনিয়ত পড়াশোনা করতে থাকে এর ফলে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থী সবাই খুশি হয়। আমাদের এই উদ্যোগটিকে সবাই সাধুবাদ জানায়। ধন্যবাদ সবাইকে।