Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

২৫ এপ্রিল, ২০২১ ০৩:৫৫ অপরাহ্ণ

নিমাই চন্দ্র মন্ডল, সহকারী শিক্ষক, পলাশী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মনিরামপুর, যশোর।

                              ভন্ড তপস্বী

বুদ্ধ একদিন তাঁর শিষ্যদের কাছ থকে এক ভন্ড তপস্বীর কথা জানতে পারলেন। কিছু দুষ্ট প্রকৃতির লোক কেমন করে ধর্মের পতাকা ধরে নিজের কার্যসিদ্ধি করতে পারে তারই এক কাহিনি শিষ্যদের শোনালেন।

অনেকদিন আগে বোধিসত্ব একবার মূষিকরাজ অর্থাৎ ইঁদুরদের রাজা হয়ে ছিলেন। বুদ্ধিমান ও শক্তিশালী এই রাজা বহু সহচর নিয়ে বনে ঘুরে বেড়াত। ঐ বনেই থাকত এক ধূর্ত শিয়াল। একবার এক ভয়ানক দাবানলে তার শরীরের সমস্ত লোম পুড়ে যায় কিন্তু মাথাটি একটি গাছের ফাঁকে থেকে যাওয়ায় সেখানে একগুচ্ছ লোম রয়ে যায়, ফলে ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের মতো মাথায় একটি শিখা তৈরি হয়ে যায়। জল খেতে গিয়ে নিজের ছায়া দেখে শিয়াল ভাবল- এতদিনে আমার জীবন চালানোর কিছু ব্যবস্থা করতে পারব।

এইসময়ই হঠাৎ একদিন সেই শিয়ালের নজর পড়ল সেই ইঁদূররাজ ও তার দলবলের ওপর। শিয়াল ভাবল- এদের বোকা বানিয়ে রোজ ধরে ধরে খাব। এরপরই সে ইঁদুরদের যাওয়া-আসার পথের ধারেই একপায়ে ভর দিয়ে, সূর্যের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে, মুখ দিয়ে বাতাস পান করতে লাগল-যেন কোন বড় সাধু, দয়া করে এখানে এসেছে। ইঁদুররাজও শিয়াল- সাধুকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারল যে, তার নাম- ‘অগ্নি ভরদ্বাজ’, সে প্রত্যেকদিন সূর্য উপাসনা  ও কেবলমাত্র বায়ু পান করে জীবন কাটায়। সে এখানে ইঁদুরদের রক্ষা করতে এসেছে। আবার গুহা থেকে কতগুলি ইঁদুর বেরল আর কতগুলো ফিরে এল তাও সে গণনা করতে পারে। একথা শুনে ইঁদুররাজ শিয়াল- সাধুকে রোজ প্রণাম করার কথাও ভাবল। এরপর থেকে ইঁদুরদের দল যখন গুহা থেকে বেরিয়ে যায় বা ফিরে আসে তখন একেবারে শেষেরটিকে ধরে শিয়াল মজা করে খেয়ে ফেলৎ। 

এদিকে ক্রমশই ইঁদুরদে সংখ্যা কমতে দেখে বিচক্ষণ ইঁদুররাজের শিয়ালের ওপরই সন্দেহ হয়, সে বুঝতে পারে শিয়াল আসলে ভন্ড সাধু। হাতেনাতে ধরার উদ্দেশ্যে রাজা তার দলের একেবারে শেষে  থেকে গুহা থেকে বেরিয়ে এল এবং দেখল শিয়াল সত্যিই তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার চেষ্টা করেছে। তখনি বলবান রাজা আগে থেকেই শিয়ালের গলা লক্ষ্য করে নলিটি ধারালো দাঁত দিয়ে কেটে দিল এবং শিয়াল সঙ্গে সঙ্গেই চোখ উলটে মারা গেল। যারা নিজ স্বার্থের জন্য ধর্মকে আশ্রয় করে, তাদের এই পরিণতিই হয়। এই কাহিনি বুদ্ধ ‘বিড়াল’ জাতকে।

জাতক, ঈশানচন্দ্র ঘোঘ।