সহকারী শিক্ষক
০৫ মে, ২০২১ ০৪:৪৯ অপরাহ্ণ
বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার
ধরন: সাধারণ শিক্ষা
শ্রেণি: পঞ্চম
বিষয়: বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়
অধ্যায়: দ্বিতীয় অধ্যায়
বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর জন্মদিন
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের ৫ মে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের বর্তমান পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানী জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার এবং মাতা প্রতিভাদেবী। ছোট বেলা থেকেই পড়াশুনায় মেধাবী। স্কুল জীবনেই এক আত্মীয় দাদার সংস্পর্শে বিপ্লবের প্রতি, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি প্রবলভাবে আকৃষ্ট হন। এ আগ্রহ হতেই তার সাথে আলাপ হয় বিপ্লবের অগ্নিপুরুষ মাস্টার দা সূর্য সেনের। মাস্টারদার সান্নিধ্য তার জীবন গভীরভাবে পালটে দেয়। তখন সমগ্র ভারতবর্ষ একদিকে মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলন অন্যদিকে বিপ্লবীদের সসস্ত্র সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ভারতের স্বাধীনতা আদায়ের প্রয়াস। প্রীতিলতা যুক্ত হলেন চট্টগ্রামে বিপ্লবী দলের সাথে। তখন বিপ্লবী দলে নারীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিলো।
১৯৩২ সালের মে মাসের গোড়ার দিকের কোন একদিন নির্মল সেন প্রীতিলতাকে ‘পরিবারের প্রতি কেমন টান আছে’ তা জানতে চাইলেন। জবাবে তিনি বলেন, ‘টান আছে। কিন্তু ‘duty to family-কে duty to country- কাছে বলি দিতে পারব।
১৯৩২
সালের ১২ জুন তুমুল ঝড়-বৃষ্টির দিনে মাষ্টারদার পাঠানো এক লোক প্রীতিলতাকে আশ্রমে
নিয়ে আসেন। বাড়িতে প্রীতিলতা তাঁর মাকে সীতাকুন্ড যাবার কথা বলেন। বিপ্লবীদের
আশ্রয়দাতা যোগেশ মজুমদার ক্লাবের ভিতর থেকে রাত আনুমানিক ১০ টা ৪৫ এর দিকে
আক্রমণের নিশানা দেখানোর পরেই ক্লাব আক্রমণ শুরু হয়। সেদিন ছিল শনিবার, প্রায়
চল্লিশজন মানুষ তখন ক্লাবঘরে অবস্থান করছিল। তিনভাগে বিভক্ত হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র
হাতে বিপ্লবীরা ক্লাব আক্রমণ শুরু করেন। পূর্বদিকের গেট দিয়ে ওয়েবলি রিভলবার এবং
বোমা নিয়ে আক্রমণের দায়িত্বে ছিলেন প্রীতিলতা, শান্তি চক্রবর্তী আর কালীকিংকর
দে। ওয়েবলি রিভলবার নিয়ে সুশীল দে আর মহেন্দ্র চৌধুরী ক্লাবের দক্ষিণের দরজা
দিয়ে এবং ৯ ঘড়া পিস্তল নিয়ে বীরেশ্বর রায়, রাইফেল আর হাতবোমা নিয়ে পান্না সেন
আর প্রফুল্ল দাস ক্লাবের উত্তরের জানালা দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছিলেন।
প্রীতিলতা হুইসেল বাজিয়ে আক্রমণ শুরুর
নির্দেশ দেওয়ার পরেই ঘনঘন গুলি আর বোমার আঘাতে পুরো ক্লাব কেঁপে কেঁপে উঠেছিল। যেন
পাহাড়তলীতে কেঁপে উঠেছিলো খোদ ব্রিটিস সাম্রাজ্য। ক্লাবঘরের সব বাতি নিভে যাবার
কারণে সবাই অন্ধকারে ছুটোছুটি করতে লাগলো। ক্লাবে কয়েকজন ইংরেজ অফিসারের কাছে
রিভলবার ছিলো। তারা পাল্টা আক্রমণ করলো। একজন মিলিটারী অফিসারের রিভলবারের গুলিতে
প্রীতিলতার বাঁ-পাশে গুলির আঘাত লাগে। প্রীতিলতার নির্দেশে আক্রমণ শেষ হলে বিপ্লবী
দলটার সাথে তিনি কিছুদূর এগিয়ে আসেন। তারপর পূর্বসিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রীতিলতা
পটাসিয়াম সায়ানাইড মুখে পুরে দেন এবং যারা আহত হয়নি সেসব বিপ্লবীদের দ্রুত
স্থানত্যাগ করার নির্দেশ দেন। পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া
প্রীতিলতাকে বিপ্লবীরা শ্রদ্ধা জানিয়ে সবাই স্থান ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুর দিনটি
ছিলো ২৪শে সেপ্টেম্বর, ১৯৩২ সাল।
আজ ৫ মে ছিল
অগ্নিযুগের এই মহান বিপ্লবীর জন্মদিন। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্যে এসব বিপ্লবীরদের
আমরা শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করি।