Loading..

উদ্ভাবনের গল্প

০৭ মে, ২০২১ ০৪:৫০ অপরাহ্ণ

আলবার্ট আইনস্টাইন জার্মানিতে জন্মগ্রহণকারী একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী।

আলবার্ট আইনস্টাইন 

 

জন্মঃ   ১৪ মারি ১৮৭৯

উল্‌ম, Württemberg, জার্মানি

মৃত্যঃ  ১৮ মারি ১৯৫৫ (aged 76)

প্রিন্সটন, নিউ জার্সি, যুক্তরাষ্ট্র

থানার ফাম-জার্মানি, ইতালি, সুইজারল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

জাতীয়তাঃ জার্মান (১৮৭৯-৯৬, ১৯১৪-৩৩)

সুইজারল্যান্ডীয় (১৯০১-৫৫)

মার্কিন- (১৯৪০-৫৫)

নাঙ ফিতসেতা সাধারণ আপেক্ষিকতা

বিশেষ আপেক্ষিকতা, ব্রাউনীয় গতি

আলোক তড়িৎ ক্রিয়া, ভর-শক্তি সমতুল্যতা

আইনস্টাইনের ক্ষেত্র সমীকরণ, একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্ব

বসু-আইনস্টাইন পরিসংখ্যান, ইপিআর হেঁয়ালি

শিক্ষা-পদার্থবিজ্ঞান

চাকুরী  সুইজারল্যান্ডীয় পেটেন্ট অফিস (বার্ন)

জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়

চার্লস ইউনিভার্সিটি অফ প্রাগ

 

 

প্রুশীয় বিজ্ঞান একাডেমি

কাইজার ভিলহেল্‌ম ইনস্টিটিউট

লিডেন বিশ্ববিদ্যালয়

ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিস

লিচেৎ  ইহুদি

পুরষ্কার [[Image:Nobel prize medal.svg পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার (১৯২১)

কপলি মেডেল (১৯২৫)

ম্যাক্স প্লাংক মেডেল (১৯২৯)

 

১৯০৫ সালের এই দিনে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার তত্ত্ব (থিওরি অব রিলেটিভিটি) প্রকাশ হয়। থিওরি অব রিলেটিভিটিকে বলা হয় পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় আবিষ্কারগুলোর একটি। প্রায় ১০০ বছর আগে এই তত্ত্বটি বিজ্ঞানের জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। আইনস্টাইন রিলেটিভিটিকে ভাগ করেন দুই ভাগে। ১৯০৫ সালে প্রকাশ পায় ‘স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভিটি’ এবং ১৯১৫ সালে প্রকাশ পায় ‘জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি। বিশেষ আপেক্ষিকতার তত্ত্বটি (স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভিটি) আইনস্টাইনের ‘অন দ্য ইলেক্ট্রোডায়নামিক্স অব মুভিং বডিজ’ গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হয়। এটি স্থান-কালের কাঠামো সংক্রান্ত একটি তত্ত্ব। এ তত্ত্ব থেকে দু’টি সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত হয়- এক. পর্যবেক্ষকের গতিবেগ ও বস্তুর গতিবেগ যদি সমান হয় তবে পদার্থবিজ্ঞানের নিমাবলী অভিন্ন (আপেক্ষিকতাবাদের মূলনীতি)। দুই. শূন্য মাধ্যমে আলোর গতিবেগ সমস্ত পর্যবেক্ষকের সাপেক্ষে একই এবং তা আলোর উৎসের ও পর্যবেক্ষকের গতির সঙ্গে নিরপেক্ষ।

আলবার্ট আইনস্টাইন   জার্মানিতে জন্মগ্রহণকারী একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী। ... তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে তার বিশেষ অবদান এবং আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া সম্পর্কিত গবেষণার জন্য তিনি এই পুরস্কার লাভ করেন। আইনস্টাইন জার্মান সাম্রাজ্যে জন্মগ্রহন করেছিলেন।

আলবার্ট আইনস্টাইন (জার্মান ঠারে: Albert Einstein আল্‌বেয়াট্‌ আন্‌শ্‌টান্‌) (মার্চ ১৪১৮৭৯ - এপ্রিল ১৮১৯৫৫জার্মানিত জরম নেসেগা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী আগো। গ্রিকে তার বিখ্যাত আপেক্ষিকতার তত্ত্ব বারো ভর-শক্তি সমতুল্যতার সূত্র লিপিবদ্ধ করিয়াছেন। তা ১৯২১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পাসিল। পুরস্কার পানার কারণহান অইলতা, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে গিরকর বিশেষ অবদান বারো বিশেষত আলোক-তড়িৎ ক্রিয়া সম্পর্কীত গবেষণার কা

আইনস্টাইন গ্রিক পদার্থবিজ্ঞানর নানান ক্ষেত্রত নিয়ম গবেষণা করিয়া নতুন উদ্ভাবন দ্বারা বিশ্বব্যপি  অবদান রেখেছেন। বিখ্যাত আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব বলবিজ্ঞান, তড়িচ্চৌম্বকত্ব,আপেক্ষিকতার সাধারণ তত্ত্ব, অসম গতির ক্ষেত্র আপেক্ষিকতার তত্ত্বউৎঘাটন প্রয়োগ করিয়া নতুন মহাকর্ষ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। তার আর  আপেক্ষিকতাভিত্তিক বিশ্বতত্ত্বকৈশিক ক্রিয়াক্রান্তিক উপলবৎ বর্ণময়তা, পরিসাংখ্যিক বলবিজ্ঞানর সমস্যা কোয়ান্টাম তত্ত্ব উহার প্রয়োগ অণুর ব্রাউনীয় গতির ব্যাখ্যা, আনবিক ক্রান্তিকর সম্ভ্যাব্যতা, এক-আনবিক গ্যাসর কোয়ান্টাম তত্ত্ব, নিম্ন বিকিরণ ঘনত্বে আলোর তাপীয় ধর্ম ( ফোটন তত্ত্বর ভিত্তি), বিকিরণর তত্ত্ব  নিঃসরণর বিষয় একীভূত ক্ষেত্র তত্ত্বের পদার্থবিজ্ঞানের জ্যামিতিকীকরণ।

আলবার্ট আইনস্টাইনের ব্যক্তিগত জীবনের কিছু রহস্য, ট্র্যাজেডি ও সাফল্য

ছেলের মানসিক সমস্যার কারণে খুব কঠিন সম পার করেছেন আইনস্টাইন,"

বলেন জেভ রোজেনক্রান্স, আইনস্টাইন পেপার্স প্রজেক্টের একজন সম্পাদক এবং উপ-পরিচালক।

আলবার্ট আইনস্টাইনের কনিষ্ঠ সন্তানের নাম ছিল এডুয়ার্ড। তাকে আদর করে ডাকা হতো টেট।

শিশু কালেই তার স্বাস্থ্য নিয়ে পরিবারের ভেতরে উদ্বেগ ছিল। তবে তার মানসিক সমস্যার কথা জানা যা আরো অনেক পরে। "তার জীবন ছিল অত্যন্ত করুণ," বলেন রোজেনক্রান্স।

আলবার্ট আইনস্টাইনের প্রথম স্ত্রী এবং পদার্থবিজ্ঞানী মিলেভা মারিচের সংসারে ছিল তিনটি সন্তান। তাদের কন্যা লিসেরেল সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানা যা না, এবং তার জীবন অনেকটাই রহস্যাবৃত।

লিসেরেল ছিল তাদের সবচেয়ে ব সন্তান। মেঝ সন্তান হান্স আলবার্ট তার জীবদ্দশাতেই বিজ্ঞানী হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছিলেন। তবে পিতার মতো বিখ্যাত তিনি কখনোই হতে পারেন নি।

"আমার পিতার ব্যতিক্রমী হয়ে ওঠার পেছনে কারণ হল তিনি খুব সহজে হাল ছাড়তেন না। কিছু কিছু সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে তিনি নিজেকে বিলিয়ে দিতেন। এমন কী কোন ভুল সমাধান হলেও। তিনি বারবার চেষ্টা করতেন। একবার না হলে আবার করতেন," বলেন হান্স আলবার্ট।

"একমাত্র যে সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে তিনি হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন সেটা হচ্ছে আমি। তিনি আমাকে উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু খুব শীঘ্রই তিনি বুঝতে পারেন যে আমি আসলে একজন একরোখা মানুষ এবং আমার পেছনে সম দিলে সেটা হবে অপচয়," বলেন তিনি।

প্রথম সন্তান, লিসেরেল

মিলেভা মারিচ ও আলবার্ট আইনস্টাইন বিবাহবন্ধনে জড়ানোর আগেই ১৯০২ সালে তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম হয়েছিল। এই কন্যা সন্তানের নাম ছিল লিসেরেল।

"দুই বছর বস হওয়ার পর তার কী হয়েছে সেবিষয়ে আমরা আসলেই কিছু জানি না," বলেন রোজেনক্রান্স, "ইতিহাসে তিনি হারিয়ে গেছেন।"

আইনস্টাইন পেপার্স প্রজেক্ট তৈরিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন রোজেনক্রান্স। এই প্রকল্পের আওতা নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানীর শত শত দলিল ও কাগজপত্র সংগ্রহ করে সেগুলো অনুবাদ ও প্রকাশ করা হয়েছে।

ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি এই প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে এবং তাতে সহযোগিতা করছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি এবং হিব্রু ইউনিভার্সিটি অফ জেরুজালেম।

 

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

আলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে তার স্ত্রী মিলেভা মারিচ।

আইনস্টাইনের যেসব চিঠিপত্র এবং দলিলপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে সেগুলো থেকে তার মানবিক দিক সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়।

এসব চিঠিপত্র থেকেই জানা যায় লিসেরেলের কথা।

"তার স্বাস্থ্য কি ভাল? সে কি ঠিকমতো কান্নাকাটি করে? তার চোখগুলো কেমন? আমাদের মধ্যে কার সঙ্গে তার বেশি মিল? কে তাকে দুধ খাওয়ায়? সে কি ক্ষুধার্ত? তার মাথা নিশ্চয়ই পুরোপুরি ন্যাড়া। আমি তাকে এখনও চিনি না কিন্তু এর মধ্যেই তাকে আমি অনেক ভালবাসি," এসব কথাই সুইজারল্যান্ড থেকে আইনস্টাইন লিখেছেন মিলেভাকে, যিনি সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য সার্বিয়াতে চলে গিয়েছিলেন।

কিন্তু শিশু জন্ম দেওয়ার জন্য তিনি কেন সুইজারল্যান্ড ছেড়ে যান?

 

"আইনস্টাইনের মা মিলেভার সঙ্গে তার সম্পর্ককে একেবারেই মেনে নিতে পারেন নি," বলেন হানচ গুটফ্রয়েন্ড, আইনস্টাইনের ওপর সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন তিনি।

গুটফ্রয়েন্ড বলেন, আইনস্টাইনের মা মনে করেছিলেন তার সন্তান ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে ফেলছে। "তিনি এমন হুমকিও দিয়েছিলেন যে মিলেভা যদি অন্তঃসত্ত্বা হন সেটা হবে একটা বিপর্যয়কর ঘটনা। সেসময় বিয়ের আগে সন্তান নেওয়া ছিল অনেক বড় কেলেঙ্কারি।"

 

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

"তোমার জন্য আমার প্রেম"

কিন্তু বাস্তব ঘটনা হচ্ছে এই দুজনের মধ্যে প্রেম ছিল অনেক গভীর, বলেন গুটফ্রয়েন্ড। ধারণা করা হয় আইনস্টাইনের বয়স যখন ১৯ এবং মিলেভার বয়স ২৩ তখন তাদের মধ্যে এই সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল।

এই দুজন পদার্থবিদ জুরিখ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে পড়াশোনা করতেন। সেসময় সেখানে মিলেভা ছিলেন একমাত্র নারী শিক্ষার্থী। এছাড়াও তিনি ছিলেন দ্বিতীয় নারী যিনি গণিত ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেছেন।

ওয়াল্টার আইজাকসন আইনস্টাইনের ওপর একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। নাম আইনস্টাইন: তার জীবন ও মহাবিশ্ব। তিনি বলেন, "আইনস্টাইনের চিঠিপত্র থেকে মিলেভার প্রতি তার প্রেম ভালবাসা সম্পর্কে আমরা জানতে পারি। আমরা এও জানতে পারি যে আইনস্টাইনের মা বউ হিসেবে মিলেভাকে মেনে নিতে পারেন নি।"

একটি চিঠিতে লেখা: "আমার পিতামাতা এমনভাবে কাঁদতেন যেন আমি মারা গেছি। তারা বারবার একই অনুযোগ করতেন যে তোমাকে ভালবেসে আমি নিজের জন্য লজ্জা বয়ে এনেছি। তারা মনে করেন তোমার স্বাস্থ্য ভাল নয়।"

কিন্তু আইনস্টাইন তার হৃদয়ের কথাই শুনেছিলেন। মিলেভা যখন গর্ভধারণ করেছেন তখন তিনি তাকে একটি চিঠিতে লিখে একজন ভাল স্বামী হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

 ৎস,GETTY IMAGES

আলবার্ট আইনস্টাইন তার ছেলে হান্স আলবার্টের সঙ্গে ১৯৩৬ সালে।

আইনস্টাইন লিখেছেন: "আমাদের জন্য যেটা একমাত্র সমস্যা হয়ে থাকবে তা হলো লিসেরেলকে আমাদের সঙ্গে রাখা। আমি তাকে ত্যাগ করতে চাই না।"

আইনস্টাইন জানতেন তার সমাজে একজন "অবৈধ শিশুকে" সঙ্গে রাখা কতখানি কঠিন। এবং তার জন্য তো এটা আরো অনেক কঠিন ছিল কারণ তিনি সমাজে একজন সম্মানিত ব্যক্তিতে পরিণত হচ্ছিলেন।

সন্তানদের জন্য ভায়োলিন বাজাতেন আইনস্টাইন।

 

দীর্ঘ নীরবতা

মনে করা হয় যে আইনস্টাইনের সঙ্গে লিসেরেলের কখনো সাক্ষাৎ হয়নি। মিলেভার যখন সুইজারল্যান্ডে ফিরে আসার সময় হয়, লিসেরেলকে তিনি সার্বিয়াতে তার আত্মীয় স্বজনের কাছে রেখে আসেন।

আইজাকসন ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে মিলেভার একজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবী হয়তো লিসেরেলকে দেখাশোনা করতো কিন্তু এই তথ্যও খুব একটা নিশ্চিত নয়।

"তাদের প্রেমপত্রগুলোতে যা কিছু লেখা হয়েছে সেগুলো থেকেই আমরা তাদের কন্যা সম্পর্কে জানতে পারি," বলেন গুটফ্রয়েন্ড, "কিন্তু একটা সময় পর তার কথা আর কখনো উল্লেখ করা হয়নি।"

"অনেক ইতিহাসবিদ ও সাংবাদিক সার্বিয়াতে গিয়ে তার বিষয়ে জানার চেষ্টা করেছেন, দলিলপত্র, রেকর্ড, আর্কাইভ- সব জায়গাতে তার খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তারা তেমন একটা সফল হননি," বলেন রোজেনক্রান্স।

"তার কথা সবশেষ উল্লেখ করা হয় যখন তার বয়স দুই বছর। সেসময় তার জ্বর হয়েছিল। কিন্তু আমরা জানি না এর পরে সে বেঁচে ছিল কীনা," বলেন তিনি।

এর পর তাকে নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা কল্পনা তৈরি হয়েছে: "হয়তো তাকে দত্তক দেওয়া হয়েছে, অথবা সে হয়তো মারা গেছে। আমরা ঠিক জানি না," বলেন রোজেনক্রান্স।

ধারণা করা হয় যে আইনস্টাইন, যিনি ১৯৫৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন, তিনি তার কন্যা সম্পর্কে কাউকে কখনও কিছু বলেন নি।

আইনস্টাইন পেপার্স প্রজেক্ট জানতে পেরেছে লিসারেল ১৯৮৬ সালেও বেঁচে ছিলেন। এসময় মিলেভার সাথে যেসব যোগাযোগ হয়েছে তার কিছু বিষয়ে এই প্রজেক্টে জানতে পেরেছে।

 

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

নিজের বাড়ি

আইনস্টাইন ১৯০৩ সালে বের্ন শহরে একটি ভাল চাকরি পান, মিলেভা ফিরে আসেন সার্বিয়া থেকে, এবং এর পর তারা বিয়ে করেন।

পরের বছর তাদের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম হয়। এই পুত্র সন্তানের নাম ছিল হান্স আলবার্ট। তাদের তৃতীয় ও শেষ সন্তান ছিল এডুয়ার্ড, তার জন্ম ১৯১০ সালে। পরিবারটি জুরিখে চলে যাওয়ার পর তার জন্ম।

"আমার মা যখন বাড়িতে ব্যস্ত থাকতেন তখন আমার পিতা তার কাজ রেখে দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমাদের দেখাশোনা করতেন। আমাদেরকে তার হাঁটুর ওপর বসিয়ে তিনি দোল খাওয়াতেন। আমার মনে আছে তিনি আমাদের গল্প শোনাতেন এবং প্রায়শই ভায়োলিন বাজিয়ে আমাদের শান্ত রাখতে চেষ্টা করতেন," এভাবেই হান্স আলবার্ট উল্লেখ করেছেন বলে জানান আইজাকসন।

এডুয়ার্ড: শারীরিক ও মানসিক সমস্যা

এডুয়ার্ডের শৈশবের শুরুর দিকে তার স্বাস্থ্য খারাপ ছিল, প্রায়শই সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়তো এবং দীর্ঘ সময় বিছানায় পড়ে থাকতো।

একবার, ১৯১৭ সালে, যখন তার ফুসফুসে সংক্রমণ হয়েছিল, আইনস্টাইন তার এক বন্ধুকে লিখেছিলেন: "আমার ছোট শিশুর অবস্থা আমাকে বেশ বিষণ্ণ করে রাখে।"

এসব সত্ত্বেও "সে একজন দারুণ ছাত্র ছিল। শিল্পকলার ব্যাপারে তার বিশেষ আগ্রহ। সে কবিতা লিখে এবং পিয়ানো বাজায়," আইনস্টাইনের ওপর এক গ্রন্থ 'এন আইনস্টাইন এনসাইক্লোপিডিয়া'তে একথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এডুয়ার্ড তার পিতার সঙ্গে সঙ্গীত ও দর্শন বিষয়ে আলোচনা করতেন এবং আইনস্টাইন একবার বলেছিলেন যে তার "ছেলে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা করছে।"

ভালবাসার সমাপ্তি

আইনস্টাইন যতই তার বৈজ্ঞানিক গবেষণার কাজে ডুবে যেতে লাগলেন ততই মিলেভার সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটতে লাগল। এসময় তার এক কাজিন এলসার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক শুরু হয়।

পরিবারটি ১৯১৪ সাল পর্যন্ত বার্লিনে বসবাস করত। কিন্তু মিলেভার প্রতি আইনস্টাইনের অবজ্ঞামূলক আচরণের কারণে তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে তিক্ততা আরো বৃদ্ধি পায়। এবং এক পর্যায়ে মিলেভা তার সন্তানদের নিয়ে সুইজারল্যান্ডে ফিরে যান।

তাদের বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে ১৯১৯ সালে কিন্তু সন্তানদের কাছ থেকে দূরে থাকা আইনস্টাইনের জন্য খুব কষ্টকর ছিল, বলেন গুটফ্রয়েন্ড, ফলে তিনি তার দুই ছেলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতেন।

"তিনি খুব স্নেহময় পিতা ছিলেন, " বলেন রোজেনক্রান্স।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যখনই পরিস্থিতি তৈরি হতো তিনি সন্তানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন, ছুটিতে বেড়াতে নিয়ে যেতেন এবং "যখন তারা বড় হয়ে গেল, তাদেরকে তিনি বার্লিনে আমন্ত্রণ জানাতেন একসঙ্গে সময় কাটানোর জন্য।"

"তাদের দুজনের সঙ্গেই আইনস্টাইনের ভাল যোগাযোগ ছিল, বিশেষ করে ছোট ছেলের সঙ্গে, তার কিশোর বয়সে।"

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

আইনস্টাইন তার কন্যার কথা গোপন রেখে গেছেন।

তিনি বলেন, এডুয়ার্ডের সঙ্গে তার ঘন ঘন যোগাযোগ হতো এবং সেটা ছিল বুদ্ধিবৃত্তিক পর্যায়ের। এমনকি তারা একে অপরের সমালোচনাও করতেন।

"এডুয়ার্ড আইনস্টাইনকে যা কিছুই পাঠাত সেটা তিনি খুব পছন্দ করতেন," সেটা যে শুধু তার লেখার উপহার সেজন্য নয়, তার চিন্তার গভীরতার কারণেও।

আইনস্টাইন ১৯৩০ সালে তাকে লিখেছিলেন, "জীবন হচ্ছে একটা সাইকেল চালানোর মতো। ভারসাম্য রাখতে হলে সেটাকে চালাতে হবে।"

বড় ছেলে হান্স আলবার্টের সঙ্গে আইনস্টাইনের সম্পর্ক খুব বেশি গভীর ছিল না। হান্স ছিল অনেকটা মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষ, বলেন রোজেনক্রান্স।

"বিজ্ঞানের প্র্যাকটিক্যাল কাজ, উদ্ভাবন, কারিগরি - এসব বিষয়ে তার ঝোঁক ছিল," তার পিতার সঙ্গে খেলাধুলা থেকে এটা বোঝা যায়।

এর কয়েক বছর পর আইনস্টাইন তাকে যেসব চিঠি লিখতেন সেগুলোতে তিনি যে শুধু তার তত্ত্বের কথাই লিখতেন তা নয়, সেগুলো তিনি প্রমাণ করারও চেষ্টা করতেন। একই সঙ্গে কিভাবে একটি চাকরি সংগ্রহ করা যায় সেবিষয়েও তিনি পরামর্শ দিতেন।

রোগ নির্ণয়

এডুয়ার্ড আইনস্টাইন স্বপ্ন দেখতেন যে তিনি একজন মনোবিজ্ঞানী হবেন এবং সিগমুন্ড ফ্রয়েডর তত্ত্বের ব্যাপারে তার প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল।

তিনি যখন মেডিসিন বিষয়ে পড়াশোনা করতেন, ১৯৩২ সালে, তাকে সুইজারল্যান্ডের একটি মানসিক চিকিৎসার ক্লিনিকে ভর্তি করাতে হয়েছিল। ১৯৩৩ সালে, তার বয়স যখন ২২ তখন ধরা পড়ে যে তিনি মানসিক রোগ স্কিটসোফ্রিনিয়াতে আক্রান্ত।

"এতে আইনস্টাইন প্রচণ্ড কষ্ট পান," বলেন গুটফ্রয়েন্ড।

 

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

বার্নে আইনস্টাইন ও মিলেভার বাড়ি। এখন সেটি একটি জাদুঘর।

"আমার দুটো ছেলের মধ্যে সবচেয়ে পরিমার্জিত, যাকে আমার নিজের চরিত্রের মতো বলে মনে হয়, সে অনিরাময়যোগ্য এক মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছে," আইনস্টাইনের লেখা একটি চিঠিতে একথা উল্লেখ করা হয়েছে।

জার্মানিতে নাৎসি বাহিনীর উত্থান ঘটে ১৯৩৩ সালে। তখন তিনি জার্মানি ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যেতে বাধ্য হন।

"জার্মানি ছেড়ে যাওয়ার সামান্য আগে আইনস্টাইন এডুয়ার্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সম্ভবত সেটাই ছিল তাদের শেষ দেখা," একথা উল্লেখ করা হয়েছে এক আইনস্টাইন এনসাইক্লোপিডিয়াতে, "এর পর পিতা ও পুত্রের আর কখনো দেখা হয়নি।"

দুঃখজনক সমাপ্তি

মূলত মিলেভা-ই এডুয়ার্ডকে দেখাশোনা করতেন, কিন্তু যখন তার অবস্থার আরো অবনতি ঘটতে থাকে- অথবা যখন মিলেভা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন- তখন তাকে একটি মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে থাকতে হয়েছিল।

মিলেভা মারা যান ১৯৪৮ সালে। এর পর এডুয়ার্ডকে দেখাশোনা করার জন্য তার একজন আইনগত অভিভাবক নিয়োগ করতে হয়েছিল যার খরচ দিতেন আইনস্টাইন।

"আমার মনে হয় না সেসময় পিতা ও পুত্রের মধ্যে কোনো ধরনের যোগাযোগ হয়েছে," বলেন রোজেনক্রান্স।

আইজাকসনের মতে, এডুয়ার্ডের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের যেতে অনুমতি দেওয়া হয়নি।

জীবনের শেষ দিনগুলো তিনি একটি ক্লিনিকে কাটিয়েছেন এবং সেখানেই তিনি ১৯৬৫ সালে ৫৫ বছর বয়সে মারা যান।

আইনস্টাইনের জীবনে বলা প্রথম কথা ছিল, 'এই স্যুপ এতো গরম কেন?'

জিনিয়াস” শব্দটি উচ্চারণ করলে সবার প্রথমে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের নামটিই আমাদের মাথায় আসে। বিশ্বের সবচেয়ে জিনিয়াস ব্যক্তি হিসেবেও তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এমনকি আইনস্টাইনের জন্মদিন ১৪ মার্চ-কে “জিনিয়াস ডে” হিসেবে উদযাপন করা হয়। 

চলুন জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে জিনিয়াস এই ব্যক্তিটি সম্পর্কে অবাক করার মতো ১০টি অজানা তথ্য। 

১. যে বছর বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি মৃত্যুবরণ করেন, একই বছর স্যার আইজ্যাক নিউটনের জন্ম হয়। আর বিখ্যাত বিজ্ঞানী জেমস ম্যাক্সওয়েল যে বছর মারা যান, সে বছরই পৃথিবীতে আসেন সর্বকালের সেরা বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। 

২. শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে আইনস্টাইন জার্মান ভাষায় কিছু শব্দ বলে গিয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই সময় তার পাশে থাকা ব্যক্তিটি জার্মান ভাষা জানতেন না। এজন্য আইনস্টাইনের শেষ কথা আজ পর্যন্ত রহস্যই রয়ে গেছে। 

৩. আইনস্টাইনের কাছে অনেক তরুণ উপদেশ নেওয়ার জন্য আসতেন। তারা তার বিরাট সব সাফল্যের কারণ সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক ছিলেন। এমনই একজন তার কাছে এসে বললেন, “স্যার গোটা বিশ্বের লোক আপনাকে এক নামে চেনে এবং আপনাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করে। দয়া করে আমাকে বলুন মহান হওয়ার মূলমন্ত্র কী?” উত্তরে আইনস্টাইন মাত্র একটি শব্দ উচ্চারণ করেছিলেন, “সময়”। 

৪. পৃথিবীর সবচেয়ে জিনিয়াস মানুষ হওয়ার পরও আইনস্টাইনের স্মৃতিশক্তি খুব দুর্বল ছিলো। তিনি মানুষের নাম, তারিখ ও টেলিফোন নম্বর মনে রাখতে পারতেন না। এমনকি নিজের টেলিফোন নম্বরটি বহুবার মুখস্ত করার পরেও মনে রাখতে পারতেন না তিনি। একবার আইনস্টাইনের এক সহকর্মী তার কাছে টেলিফোন নম্বর চাইলে তিনি ডাইরেক্টরিতে নিজের নম্বর খুঁজতে শুরু করলেন। সেই সহকর্মী তখন তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, “স্যার আপনি নিজের টেলিফোন নম্বরটাও মনে রাখতে পারেন না?” জবাবে আইনস্টাইন বলেছিলেন, “এমন জিনিস মনে রাখার কি দরকার যা আমি বইয়ে খুঁজলে পেয়ে যাবো?” 

৫. আইনস্টাইন তার “General & Special Theory of Relativity”-এর কারণে বিশ্বজুড়ে সুনাম কুড়িয়েছিলেন। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, ১৯২১ সালে আইনস্টাইনকে “General & Special Theory of Relativity”-এর জন্য নয় বরং ফটোইলেক্ট্রিক ইফেক্ট খুঁজে বের করার জন্যই নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছিলো। 

৬. পৃথিবী বিখ্যাত এই বিজ্ঞানী জীবদ্দশায় কখনো কার চালাননি। কারণ, তিনি কার চালাতে জানতেন না। আর সমুদ্রে ভ্রমণপ্রিয় হওয়া স্বত্ত্বেও সাঁতার জানতেন না তিনি।

৭. বাল্যকালে আইনস্টাইনকে মানসিক প্রতিবন্ধী মনে করা হতো। আইনস্টাইনের স্কুলের এক শিক্ষক তো বলেও দিয়েছিলেন, "এই ছেলে জীবনে কিছুই করতে পারবে না।" তার বাবা-মা ছেলেকে নিয়ে খুব চিন্তিত ছিলেন। কিন্তু এই ছেলেটিই একদিন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হয়েছিলো। 

৮. ছোটোবেলায় আইনস্টাইন পড়াশুনায় খুব একটা সুবিধার ছিলেন না। তবে গণিত ছিলো তার সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। তিনি অন্য সব বিষয় বাদ দিয়ে সারাদিন গণিত নিয়েই পড়ে থাকতেন। ফলে পরীক্ষার খাতায় গণিত ছাড়া অন্য বিষয়গুলোরে খুবই বাজে নাম্বার আসতো। 

৯. জন্মের সময় আইনস্টাইনের মাথা সাধারণ সদ্যজাত শিশুদের তুলনায় অনেকটা বড় ছিলো। চিকিৎসকরা ধরেই নিয়েছিলো যে, শিশুটি বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মেছে। চারবছর বয়স পর্যন্ত আইনস্টাইন কথা বলতে পারতেন না। চারবছর বয়সে আইনস্টাইন খাবার টেবিলে বসে প্রথম কথা বলেছিলেন। তার বলা প্রথম বাক্যটি ছিলো এরকম, “এই স্যুপ এতো গরম কেন?” 

১০. আইনস্টাইন মাত্র পাঁচ বছর বয়স থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। এর পেছনে অবশ্য আরেকটা গল্প আছে। আইনস্টাইনের বাবা সুন্দর করে বৃত্ত আঁকার জন্য তাকে একটি কম্পাস এনে দিয়েছিলেন। কম্পাস পাওয়ার পর আইনস্টাইন সারাদিন ভাবতে থাকলেন, কোন শক্তির ফলে কম্পাসের একটি কাটা স্থির থেকে অন্যটি চারপাশে ঘোরে। ব্যাস, তখন থেকেই বিজ্ঞানের পোকা বনে যান।

আইনস্টাইনের প্রেম ও পরকীয়া

আবদুল গাফফার

আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২: ১৫ 

বিখ্যাত এক সাহিত্যিক প্রায়ই বলেন, প্রেমের বিয়েতেও বিরক্তি আসে। একই ছাদের নিচে থাকতে থাকতে বৈবাহিক জীবনে বিরক্তি আসতে শুরু করে একসময়। আইনস্টাইনেরও বোধ হয় বৈজ্ঞানিক খ্যাতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিলেভার সঙ্গটা একঘেয়ে লাগতে শুরু করেছিল। নইলে পরিবারের অমতে প্রেমিকাকে বিয়ে করার পরও সেই সম্পর্কে ফাটল কেন ধরল? এর পেছনে কি শুধুই একঘেয়েমি কাজ করেছিল, নাকি এর নেপথ্যে ছিল ব্যক্তিত্বের সংঘাত কিংবা পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব?

আইনস্টাইনের প্রেম বা বৈবাহিক জীবন নিয়ে অতটা লুকোছাপা ছিল না। তাই হয়তো সহজেই বলে দেওয়া যায় মিলেভার সঙ্গে তাঁর রসায়নে চিড় ধরার কারণ।

আইনস্টাইন স্কুলজীবনে কিছুটা একগুঁয়ে আর প্রচণ্ড মেধাবী ছিলেন। কিছু কিছু ব্যাপারে তাঁর জ্ঞান ছিল শিক্ষকদের চেয়েও খানিকটা এগিয়ে। এ ধরনের ছেলেমেয়েদের যা হয়, আইনস্টাইনেরও তা–ই হলো। অনেক শিক্ষকের বিরাগভাজন হলেন, তাই ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারলেন না। শেষমেশ জুরিখে একটি কলেজে ভর্তি হলেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় সুইস মেয়ে মিলেভা ম্যারিকের। মিলেভা ভীষণ সুন্দরী নন, কিন্তু মেধাবী। অনেকটা আইনস্টাইনের মতোই। দ্রুতই তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্ব হলো, কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধুত্ব গড়াল প্রেমে। সিদ্ধান্ত নিলেন বিয়ে করবেন। কিন্তু বাদ সাধেন আইনস্টাইনের মা। কারণ, মিলেভা দেখতে তেমন সুন্দরী নন, আইনস্টাইনের চেয়ে তাঁর বয়স সাড়ে তিন বছর বেশি, পায়ে খুঁত আছে, হাঁটেন খুঁড়িয়ে। ‘যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা’মিলেভা সম্পর্কে আইনস্টাইনের মা পলিনের মনোভাব ছিল তেমন। তিনি ভাবতেন, মেয়েটা একটা ডাইনি। জাদুটোনা করে তাঁর ছেলেকে বশ করেছে। অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিয়ে তিনি চিঠি লিখতেন মিলেভার মাকে। কিন্তু অনড় আইনস্টাইন, তাঁর জেদের কাছে ভেঙে পড়ে মায়ের দৃঢ় মনোবল। আইনস্টাইন গোপনে একদিন বিয়ে করেন মিলেভাকে। এই ঘরেই জন্ম হয় ছেলে আলবার্টের, আরও পরে হান্স আইনস্টাইনের।

গল্পটা খুব সাধারণ। গল্পের পেছনেও গল্প থাকে। বিয়ের আগেই আসলে আইনস্টাইনের এক কন্যাসন্তানের মা হয়েছিলেন মিলেভা। সেই শিশুর ভাগ্যে কী ঘটেছিল, তা জানা যায় না। তখনকার ইউরোপ ভীষণ রক্ষণশীল। অবিবাহিত মেয়ের মা হওয়াকে অত্যন্ত খারাপ চোখে দেখা হতো। তাই আইনস্টাইন বা মিলেভা কেউই তাঁদের বিবাহপূর্ব সন্তান সম্পর্কে ইতিহাসকে কিছু জানতে দেননি। কেউ কেউ মনে করেন, তাকে দত্তক দেওয়া হয়েছিল অন্য কারও কাছে। আবার কেউ মনে করেন, চার বছর বয়সেই মৃত্যু হয় আইনস্টাইনের প্রথম কন্যাসন্তানের। তবে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। শিশুটি যেন নীরবে জন্ম নিয়ে একেবারে হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিল।

তারপর আরও দুই সন্তানের জনক-জননী হন আইনস্টাইন-মিলেভা জুটি। মিলেভা অনেক কষ্ট করেছেন। আইনস্টাইনের একটি পিএইচডি ডিগ্রি জোটেনি, চাকরির বাজারেও প্রত্যাখ্যাত। শেষে বন্ধুর সহযোগিতায় সুইজারল্যান্ডের বার্নের পেটেন্ট অফিসে সামান্য একটি চাকরি শুরু করেন।

সেই দুঃসময়ে মিলেভা যক্ষের ধনের মতো আগলে রেখেছেন সংসারের হাল। ওদিকে আইনস্টাইন অফিসের সময় চুরি করে দিস্তার পর দিস্তা সাদা কাগজ ভরিয়ে ফেলছেন গণিতের আঁকিবুঁকিতে। শেষ পর্যন্ত ১৯০৫ সালে এসে ঘুরে যায় আইনস্টাইনের জীবনের মোড়। সফল হয় অফিস থেকে চুরি করা সময়টুকুর পরিশ্রম। একে একে পাঁচ-পাঁচটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন তিনি। এর মধ্যে একটি ছিল পরমাণুবিষয়ক, একটি আলোক তড়িৎক্রিয়ার ব্যাখ্যা এবং তৃতীয়টি বিখ্যাত থিওরি অব রিলেটিভিটি–বিষয়ক প্রবন্ধ। এরপরই নড়েচড়ে বসে বিজ্ঞানবিশ্ব। আইনস্টাইনকেও আর চাকরি নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না। সুইজারল্যান্ডের জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক কাম অধ্যাপকের পদে চাকরি পান। পিএইচডিও জুটে যায় ইতিমধ্যে। তখন আইনস্টাইনের সংসার সোনায় সোহাগা হয়ে ওঠা উচিত ছিল। কিন্তু হলো কিনা উল্টো!

সংসার সুখের হয় রমণীর গুণেকথাটা বোধ হয় ঐতিহাসিক ভুল। শুধু নারী চাইলেই একটা সংসার ধরে রাখা সম্ভব নয়, যদি না তার পুরুষ জীবনসঙ্গী সেটি চায়। মিলেভা সাধ্যমতো সংসার সামলে রাখলে কী হবে, আইনস্টাইনের বুকে তখন বাজছে নতুন প্রেমের সুর। ফিল্মস্টারের মতোই তাঁর তারকাখ্যাতি। যেখানেই যান একঝাঁক ললনার ভিড় লেগে থাকে তাঁকে ঘিরে। আইনস্টাইনও প্রশ্রয় দেন তাঁদের।

১৯১৩ সালে আইনস্টাইন স্ত্রী আর ছেলেমেয়েদের নিয়ে ফিরে আসেন নিজের দেশে। বার্লিনে সদ্য প্রতিষ্ঠিত ম্যাক্স প্ল্যাংক ইনস্টিটিউটের পরিচালক পদে যোগ দেন। এরপরেই বেপরোয়া হয়ে ওঠেন আইনস্টাইন। কারণ, খালাতো বোন এলসার প্রেমে নতুন করে মজেছেন তিনি। নতুন করে। কারণ, কৈশোরেও দুজনের মন দেওয়া–নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এলসা আর আইনস্টাইনের মাঝে ঘটে তৃতীয় একজনের আবির্ভাব। মেরি নামের ভয়াবহ এক সুন্দরীর মোহ আইনস্টাইনকে ভুলিয়ে দেয় এলসার প্রেম। ফলে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয় এলসা ও আইনস্টাইনের প্রেমপর্ব। অনেক দিন পরে, যখন আইনস্টাইনের ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেছে, এলসারও বিবাহযোগ্য দুটো মেয়ে আছে, তখন কিনা ফিরে এলেন আইনস্টাইন!

এলসার তত দিনে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। আইনস্টাইনের খ্যাতিও পৌঁছে গেছে তাঁর কানে। এলসা তখন বার্লিনে বাস করেন। সুতরাং আইনস্টাইনের সঙ্গে তাঁর দেখা হতে থাকে নিয়মিত। পুরোনো প্রেমের রাগিণী বাজে দুজনের অন্তরে। বিষয়টা মিলেভার কান পর্যন্ত গড়াতে সময় লাগেনি। স্বামী-স্ত্রীর যুদ্ধ বেধে যায় সংসারে। কিন্তু মিলেভা তাঁর মহাপরাক্রমশালী স্বামীর সঙ্গে পেরে ওঠেন না। আইনস্টাইন তখন হিটলারের মতো আচরণ শুরু করেছেন বাড়িতে, আরোপ করেছেন নানা বিধিনিষেধ। আইনস্টাইনের জামাকাপড় যেন পরিপাটি থাকে সব সময়, রিডিং রুম যেন সব সময় গোছানো থাকে এবং অন্য কেউ যেন তাঁর ডেস্ক, বই, খাতাপত্র ইত্যাদি স্পর্শ না করে, সেদিকে মিলেভাকে লক্ষ রাখতে হবে। মনে হতে পারে, এ তো সামান্য ব্যাপার, আটপৌরে বাঙালি পরিবারে তো অহরহ এমনটা ঘটে। মনে রাখতে হবে, বিশ শতকের প্রথম ভাগ হলেও ঘটনাটা ঘটছে ইউরোপের সুইজারল্যান্ডে, নারী স্বাধীনতায় সে যুগেও তারা যোজন যোজন এগিয়ে। আরও কড়া শর্ত ছিল আইনস্টাইনের, কখনো মিলেভা নিজে থেকে স্বামীর সঙ্গ চাইবেন না কিংবা নৈকট্য লাভের আশা করবেন না, কথা বলার সময় আইনস্টাইন যখনই চাইবেন মিলেভাকে চুপ করে যেতে হবে, কথার প্রতিবাদ বা তর্ক করা যাবে না। ভেবে দেখুন, এভাবে কি কোনো সম্পর্ক টেকে?

এসবে ক্লান্ত মিলেভা, তার সঙ্গে ছিল বঞ্চনার ব্যথা। শিক্ষাজীবনে ছাত্র হিসেবে আইনস্টাইনের চেয়ে বরং মিলেভাই ভালো ছিলেন। আইনস্টাইনের গবেষণাতেও সহযোগিতা করেছেন। তাঁরও ইচ্ছা ছিল পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা করার। আইনস্টাইনের নাম যখন দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে, মিলেভা তখন রান্নাঘরের হাঁড়ি সামলাচ্ছেন, মুখ বুজে সহ্য করছেন স্বামীর অন্যায় আবদার। ঘরের এই অবস্থায় ‘চাইলে তিনিও পারতেন আইনস্টাইনের মতো বিখ্যাত হতে’এই বিষয়টি মিলেভাকে ঈর্ষাকাতর করে তুলেছিল। দোষ বলতে তাঁর এটুকুই।

দিনে দিনে এলসার সঙ্গে প্রেমটা আরও খোলামেলা হয়ে ওঠে আইনস্টাইনের। মিলেভা এসব সহ্য করতে না পেরে দুই ছেলেকে নিয়ে চলে যান বার্লিন ছেড়ে জুরিখে। সেটা ১৯১৪ সাল। আইনস্টাইনের তখন পোয়াবারো। বাসা নিলেন এলসাদের বাড়ির খুব কাছাকাছি। এতে অবশ্য তাঁর সুবিধাই হলো, খাওয়া ও দেখভালের দায়িত্ব সব তুলে নিলেন এলসা নিজের কাঁধে। তিনি খুব করে চাইছিলেন আইনস্টাইন ও মিলেভার সম্পর্ক যেন বিচ্ছেদের দিকে যায়।

এ সবকিছুর মধ্যেও কিন্তু থেমে নেই আইনস্টাইনের গবেষণা। তিনি তখন মগ্ন জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটির রহস্য সন্ধানে। মগ্ন এলসার প্রেমেও। শুধু কি এলসা? শোনা যায়, আইনস্টাইন নাকি এলসার মেয়ের সঙ্গেও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। এলসার বড় মেয়ে আইলস তখন আইনস্টাইনের সেক্রেটারি। গোপনে তাঁর সঙ্গেও অভিসার চলে আইনস্টাইনের। এ বিষয়টা জানতেন স্বয়ং এলসাও। তিনি মেয়েকে বাধা দেন। সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের জন্মের আগমুহূর্তে মা-মেয়ে-আইনস্টাইন-মিলেভা চতুষ্টয়ে মানব প্রবৃত্তির জটিলতম খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল পৃথিবীতে।

শেষ পর্যন্ত আইলস তাঁর আরেক প্রেমিককে বিয়ে করে ফেলেন। এলসার পথ তখন পরিষ্কার। আইনস্টাইন তখন মিলেভাকে বিচ্ছেদের প্রস্তাব দিলেন। কিন্তু তিনি রাজি নন। কারণ, তাঁর ধারণা, বিচ্ছেদ হয়ে গেলেই আইনস্টাইন তাঁর সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ দেওয়া বন্ধ করে দেবেন। আইনস্টাইন তখন ফেললেন নোবেলের টোপ। আইনস্টাইন জানতেন, আজ হোক, কাল হোক, নোবেল তিনি পাবেনই। নোবেল থেকে পাওয়া সমস্ত অর্থ তিনি দিয়ে দেবেন মিলেভা আর দুই ছেলেকে। নোবেলের বিষয়ে মিলেভা নিশ্চিত ছিলেন। তিনি রাজি হয়ে যান, বিচ্ছেদ হয় তাঁদের। আইনস্টাইন এলসাকে বিয়ে করেন এবং ১৯৩৬ সালে এলসার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একসঙ্গেই ছিলেন তাঁরা।

 

দ্বিতীয় স্ত্রী এসলার সঙ্গে আইনস্টাইন।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

দ্বিতীয় স্ত্রী এসলার সঙ্গে আইনস্টাইন।

হান্স আলবার্ট

আইনস্টাইনের দ্বিতীয় সন্তান হান্স আলবার্ট জুরিখে সুইস ফেডারেল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন।

"আমার আলবার্ট একজন সক্ষম ও দৃঢ় চরিত্রের ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে," ১৯২৪ সালে একথা লিখেছেন গর্বিত আইনস্টাইন।

হান্স আলবার্ট ১৯২৬ সালে স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৯৩৬ সালের মধ্যে তিনি ডক্টর অব টেকনিক্যাল সায়েন্সেস উপাধি অর্জন করেন।

পিতার পরামর্শে ১৯৩৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান এবং সেখানে গিয়ে তার পড়াশোনা চালিয়ে যান।

তার পড়াশোনার বিষয় ছিল নদী এবং সেখানে পলিমাটির চলাচল।

নদীর পানি কিভাবে পলিমাটি এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যাইয় সে বিষয়ে আমরা বর্তমানে যা কিছু জানি তার ভিত্তি তৈরি করেছে এই হান্স আলবার্টের গবেষণা।

তার অবদানের প্রতি স্বীকৃতি জানাতে আমেরিকান সোসাইটি অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স ১৯৮৮ সালে হান্স আলবার্ট আইনস্টাইন পুরষ্কার ঘোষণা করে।

হান্স বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।

"তার মধ্যে কিছু বিষয়ের সমন্বয় ঘটেছিল যা খুবই বিরল। বিজ্ঞানের গবেষণায় তিনি খুব দক্ষ ছিলেন, একই সঙ্গে ছিলেন একজন প্রকৌশলী এবং একজন চমৎকার শিক্ষক।"

আলবার্ট আইনস্টাইন ১৯৫৪ সালে লেখা এক চিঠিতে তার এ ছেলের প্রশংসা করতে গিয়ে বলেছেন, "সে আমার চরিত্রের প্রধান দিকগুলো পেয়েছে: লক্ষ্য অর্জনে সে নিজেকে পুরোপুরি নিয়োগ করতে পারে, একজন মানুষের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব।"

মতবিরোধ

সন্তানদের সঙ্গে আলবার্ট আইনস্টাইনের সম্পর্কে উত্থান পতন চোখে পড়ার মতো: কোন চিঠিতে তিনি খুব স্নেহপ্রবণ আবার কোন চিঠিতে তাকে খুব ঠাণ্ডা এবং জাজমেন্টাল বলে মনে হয়েছে।

"অন্যান্য পরিবারের মতোই, তাদের যেমন কঠিন সময় ছিল তেমনি ছিল ভাল সময়ও," বলেন রোজেনক্রান্স, "হান্স আলবার্টের সঙ্গে তার বেশ কয়েকবার সংঘাত হয়েছিল।"

কিশোর বয়সে হান্স আলবার্ট একবার তার পিতাকে বলেছিলেন যে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কিন্তু আলবার্ট আইনস্টাইন এতে খুশি ছিলেন না।

পরের কয়েক বছরে এই বিরোধ আরো বাড়তে থাকে: "প্রথমত হান্স আলবার্ট যাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন আইনস্টাইন তাকে পছন্দ করেন নি।"

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

এই ঘটনায় মিলেভা আইনস্টাইনের সঙ্গে একমত হয়েছিলেন কিন্তু হান্স আলবার্ট তাদের দুজনের মতামত উপেক্ষা করে ১৯২৭ সালে ভাষাবিজ্ঞানী ফ্রিয়েডা নেষ্টকে বিয়ে করেন।

পরে আইনস্টাইন সন্তানের সিদ্ধান্ত মেনে নেন এবং ফ্রিয়েডাকে পুত্রবধূ হিসেবে গ্রহণ করেন। তাদের ঘরে তিনটি সন্তানের জন্ম হয়।

গুটফ্রয়েন্ডের মতে তারা দুজন একে অপরের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করলেও তারা পৃথক জীবন যাপন করেছেন: হান্স আলবার্ট থাকতেন পশ্চিম উপকূলে আর আইনস্টাইন ছিলেন পশ্চিম উপকূলের প্রিন্সটনে।

"এছাড়াও, আইনস্টাইন এর মধ্যেই তার দ্বিতীয় সংসার শুরু করে দিয়েছেন (তার কাজিন এলসা এবং এলসার আগের ঘরের দুই কন্যাসহ), বলেন তিনি।

ফ্রিয়েডার মৃত্যুর পর হান্স আলবার্ট বায়োকেমিস্ট এলিজাবেথ রবোজকে বিয়ে করেন, যার সঙ্গে তিনি তার বাকি জীবন কাটিয়েছেন। ১৯৭৩ সালে তিনি মারা যান হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে। তার বইয়স হয়েছিল ৬৯।

আইনস্টাইন একবার মিলেভাকে বলেছিলেন "তার জীবনের অন্যতম ভাল একটি দিক হচ্ছে তার দুই সন্তান, যারা তার মৃত্যুর পরেও আইনস্টাইনের জীবন বহন করবে," বলেন আইজাকসন।

কিন্তু বিখ্যাত এবং প্রতিভাবান ব্যক্তির সন্তান হিসেবে তাদের জীবন সহজ ছিল না। এডুয়ার্ড নিজেই লিখেছেন: "কখনও কখনও এরকম একজন গুরুত্বপূর্ণ পিতা থাকার সমস্যা আছে। কারণ তার নিজেকে খুব অগুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়।"

আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ তত্ত্ব প্রকাশিত হওয়ার এক বছর আগে হান্স আলবার্টের জন্ম হয়েছিল।

আলবার্ট আইনস্টাইন তার পরবর্তী জীবনে স্বীকার করেছেন মিলেভা কতো ভালভাবে তার সন্তানদের বড় করেছেন।

আমি মনে করি না যে আইনস্টাইন নিজেকে খুব ভাল একজন স্বামী হিসেবে মনে করতেন। আমার মনে হয় তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে স্বামীর চেয়ে পিতা হিসেবেই তিনি ভাল ভূমিকা পালন করেছেন," বলেন রোজেনক্রান্স।