Loading..

সফলতার গল্প

২৫ জানুয়ারি, ২০২৪ ১২:০৪ অপরাহ্ণ

স্বপ্নের পথে হেঁটে চলা…

স্বপ্নের পথে হেঁটে চলা…

ইঞ্জিনিয়ার বাবার শখ ছিল মেয়ে তার দাদীর মত শিক্ষক হবে, কিন্তু বিধির লিখন যায় না খন্ডন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে মেয়ের বিয়ে দিতে হলে সেই আশায় ভাটা পরে । বিয়ের ৭ বছর পর, দুই সন্তানের স্কুলিং শুরু হওয়ার পর, ব্যাংকার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রাইভেটে ১৯৯৪ সালে এইচ.এস.সি পরীক্ষা দেয়ার মধ্য দিয়ে আবার শুরু হয় সেই স্বপ্নের পথে হেঁটে চলা, একাডেমিক পড়াশুনা, কিন্তু ততদিনে আমার স্কুলের সহপাঠীরা অনেক এগিয়ে গেল। আর আমি, গুটিগুটি পায়ে স্বামী-সন্তান-পরিবারকে সাথে নিয়ে বাবার সেরা উপদেশ বাক্য ‘রাঁধে মেয়ে কি চুল বাঁধে না’  মনে ধারণ করে এগুতে লাগলাম । কিন্তু সাত বছর ব্রেক অফ স্টাডি থাকায়  দেশের অনেক নামি দামী  বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তির দ্বার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বটে স্বপ্নের পথে হেঁটে চলা বন্ধ হয়নি, বরং নতুন নতুন স্বপ্ন রচিত হতে থাকে।

শিক্ষকতায় প্রথম হাতে খড়ি: জামাল খান কুসুম কুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০০৪ সালের শুরুতে শিক্ষকতায় প্রথম হাতে খড়ি ঘটে।  শিক্ষকতার পাশাপাশি মেয়ে শিশুদের জন্য কিছু করার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ নারী প্রগতিসংঘের সাথে যুক্ত হয়ে সেশন কাউন্সিলর হিসেবে কাজ করি তিন বছর এবং তারপর, The Daily Star এর English in School এর সাথেও দু’বছর কাজ করি। এরপর ২০১৬ সালে বাতায়নে সদস্য হয়ে মুক্তপাঠের মাধ্যমের নিজেকে এবং  শিক্ষার্থীদের তৈরি করার চেষ্টা করি। সেবছরই  অনলাইন পরীক্ষার মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে সুযোগ হল Advanced ICT করার,  যেখানে ভালো ফলাফল করায় পরবর্তীতে সরকারিভাবে  থাইল্যান্ডে ইংরেজি বিষয়ে প্রশিক্ষণে যাই ।

গ্লোবাল সিটিজেনঃ শিক্ষার্থীদের গ্লোবাল সিটিজেন করার স্বপ্নে Commonwealth Science Class Competition 2017 এ যুক্ত করি, ৫২ টি দেশের বিভিন্ন স্কুল থেকে শিক্ষার্থীরা  এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় কিন্তু প্রতিযোগিতার সর্বশেষ ধাপে আমার শিক্ষার্থীদের গবেষণা বিশ্বে যুগ্মভাবে ১ম স্থান অর্জন করে এবং আমাকে দেয়া হয় বেস্ট কোঅরডিনেটর প্রাইজ, ‘প্রাইজ ট্রিপ’  সিঙ্গাপুরে ২০১৭ সালের ১৩-১৭ জুন,  যেখানে বিশ্বের বড় বড় বিজ্ঞানীদের সাথে  Commonwealth Science Conference এ অংশগ্রহণ করি, দেশী-বিদেশী পত্রিকায়, গ্লোবাল ব্রিটিশ কাউন্সিল পেইজে এই নিউজ প্রকাশিত হয় যা আমার জীবনের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে থাকবে।   

বৈদেশিক প্রশিক্ষণ: স্বপ্নের পথে হাঁটতে গিয়ে কখন যে বিভিন্ন বৈদেশিক প্রশিক্ষণ সামনে এসে যায় তা প্রথমে টেরও পাইনি। থাইল্যান্ড(১৪ দিন)  ও সিঙ্গাপুরের(৭ দিন)  কথা তো পূর্বেই বললাম।  আমেরিকায় Fullbright Teaching Excellence and Achievement Program(45 days), ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার মেট্রো পলিটন ইউনিভার্সিটিতে Research Assistant হিসাবে(৭ দিন) এবং গতবছর(২০২৩ সালের নভেম্বরে) স্লোভেনিয়ায় AI in Education নিয়ে একমাত্র  বাংলাদেশী স্কুলের অংশগ্রহণকারী এবং প্রজেন্টার হিসেবে ASEF 16th ClassNet প্রোগ্রামে অংশ নিই যা স্বপ্নের চেয়ে বেশি দূর   আমাকে নিয়ে যায়।

ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এডওয়ার্ড ২০১৬-২০১৯ ও ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এডওয়ার্ড ২০২১-২০২৩ নিরবিচ্ছিন্নভাবে: ইংল্যান্ড , আমেরিকা, আর্জেন্টিনা, রুমানিয়া, নাইজেরিয়া, তাইওয়ান , তাঞ্জানিয়া, ঘানা, দক্ষিন কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, আফঘানিস্তানের বিভিন্ন স্কুলের সাথে আমার কোঅরডিনেশনে ২৫ টি প্রজেক্ট করে  জামাল খান কুসুম কুমারী সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পর পর দুই বার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এডওয়ার্ড ২০১৬-২০১৯ ও ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এডওয়ার্ড ২০২১-২০২৩ নিরবিচ্ছিন্নভাবে লাভ করে ।  এছাড়াও আমি ব্রিটিশ কাউন্সিলের স্কুলস অ্যাম্বাসেডর এবং এটুআইতে ICT4E অ্যাম্বাসেডর কাজ করার সুযোগ পাই। পরবর্তীতে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ISA Assessor নির্বাচিত হই, বারে মনে হচ্ছিল স্বপ্ন মানুষকে হাঁটতে শেখায়, আলোর দিশারী হয় ।

কন্টেন্ট কম্পিটিশন-২০১৮, ব্রিটিশ কাউন্সিল WOW,  প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা, The Daily Star Stellar Women, মেয়র বিশেষ শিক্ষক সম্মাননা ও বিশ্ব দিবস-২০২২ : ব্রিটিশ কাউন্সিল Women of the World, প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০১৯  এবং  জনপ্রিয় ইংরেজি পত্রিকা The Daily Star Stellar Women এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪৯ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একমাত্র আমাকে  মাননীয় মেয়র বিশেষ শিক্ষক সম্মাননা প্রদান- আমার কাজের গতি অনেক বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও এটুআই ও মাউশি কর্তৃক আয়োজিত  কন্টেন্ট কম্পিটিশন-২০১৮  এবং ইউনেস্কো, এটুআই ও মাউশি কর্তৃক আয়োজিত  ভিডিও ক্লিপ প্রতিযোগিতায় বিশ্ব দিবস-২০২২ এ ১ম স্থান আমাকে নতুনভাবে আলোড়িত করে, নতুন স্বপ্ন দেখতে শিখায়, বলতে শিখায়, আমি নারী, আমিও কিন্তু পারি।   

মাস্টার ট্রেইনার: Curriculum Dissemination (English)  এর মাস্টার ট্রেইনার হিসেবে কাজ করে(২০১২ সালে)  প্রথম  মাস্টার ট্রেইনার  হিসেবে হাতে খড়ি। সেই থেকে Teachers Curriculum Guide(English) ২০১৮ সালে , BTT Trainer, জেলা মাস্টার ট্রেইনার(ইংরেজি) হিসেবে ৬ষ্ঠ- ৭ম(২০২৩ সালের) এবং ৯ম-১০ম শ্রেণির(২০২৪ সালের), ব্রিটিশ কাউন্সিলের ISA ট্রেইনার হিসেবে কাজ করে গিয়েছি। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক শিক্ষকের সাথে ট্রেনিং সুবাদে কাজ করতে পেরেছি, আলহামদুলিল্লাহ।

উপজাতীয় ভাষায় অনুবাদ করণ:  কভিডকালীন সময়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় অনলাইন স্কুল পরিচালনা, এটুআই এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিয়ে Global Digital Library তে তিন শতাধিক বই অনুবাদ কাজে অংশ নেয়া, ব্রাজিল, তাইওয়ান ও ভারতের স্কুলের সাথে কাজ করলেও উপজাতীয় ভাষা- চাকমা, মারমা, গারো, ককবোরক, সাদ্রী ভাষায় অনুবাদ করণ কাজটিতে অংশগ্রহন আমার জীবনে অন্যতম স্মরণীয় অভিজ্ঞতা, স্বপ্নের পথে বিচরণ  ।

আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি, স্বপ্নের জগতে ঘুরে বেড়াতে আনন্দ পাই, শিক্ষক বাতায়ন, আমার সহকর্মীরা, আমার প্রতিষ্ঠান প্রধান, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন  তথা আমার পরিবার  আমার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে অতন্দ্র প্রহরী রূপে সর্বদাই আমার সাথে কাজ করে গিয়েছে, তাই আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ ।

 

আরো দেখুন