Loading..

সফলতার গল্প

২৬ ফেব্রুয়ারি , ২০২৪ ১১:৩২ অপরাহ্ণ

আমার এটুআই, আমার পরশ পাথর

আমি মো. মাসুদুল হাসান। পরিচিতজনেরা আমাকে মাসুদ হাসান নামেই বেশি চিনেন। শিক্ষকতা আমার জীবনের স্বপ্নের একটি ব্রত, সেই সাথে জীবিকা নির্বাহের প্রধান উপায়ও বটে। সম্ভবত শিক্ষক বাবার সন্তান বলেই  শিক্ষকতা আমার রক্তে মিশে আছে। ২০০৩ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অত্যন্ত সুনামের সাথে ফলাফল করে দেশের সেরা নটরডেম কলেজ সহ অন্যান্য অনেক সেরা কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেও তৎকালীন সময়ে পিতার আর্থিক অবস্থা ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় বিবেচনা করে অবশেষে আমি ভর্তি হই সরকারি বিজ্ঞান কলেজ ঢাকাতে। কলেজে পড়াকালিন সময় থেকেই ছাত্র-ছাত্রী পড়িয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে আমার শিক্ষকতায় হাতেখড়ি হয়। অতঃপর ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি থেকে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর বিএসসি (B.Sc. in ECE) ডিগ্রী সম্পন্ন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট থেকে M.Sc in Computer Science ডিগ্রি অর্জন করি। তার কিছুদিন পরেই সাইবার ক্রাইম নিয়ে পড়াশোনার অভিপ্রায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি ডিপার্টমেন্ট থেকে মাস্টার্স ইন ক্রিমিনোলজি এন্ড  ক্রিমিনাল জাস্টিস  ডিগ্রী সম্পন্ন করি। কর্মজীবনের শুরুতে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সহকারি ব্রডকাস্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করি। একটি সফটওয়্যার ফার্মেও বেশ কিছুদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু যেহেতু রক্তে আমার শিক্ষকতা বিরাজমান তাই কোনভাবেই অন্য পেশায় মন বসাতে পারছিলাম না। বারবার চেষ্টা করছিলাম শিক্ষকতায় ফিরে যেতে।


অবশেষে ২০১৫ সালে মহান আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশের  স্বনামধন্য রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে আইসিটি বিভাগের একজন প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি। যেহেতু আমার মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে যথেষ্ট ভালো ফলাফল থাকার পরেও শুধুমাত্র সঠিক দিক নির্দেশনা  ও প্রস্তুতির অভাবে শুরুতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাই পরবর্তীতে পড়াশোনা করা আমার অনেকটা নেশায় পরিণত হয়। তাইতো পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় অর্থাৎ বুয়েটে পিজিডি আইসিটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট  অফ ইনফরমেশন টেকনোলজিতে পিজিডি আইটিতে ভর্তির সুযোগ মিলে যায়। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই পিজিডি আইটি ডিগ্রি সম্পন্ন করি এবং এখান থেকে তথ্যপ্রযুক্তির নানা বিষয়ে প্রাক্টিক্যাল অভিজ্ঞতা অর্জন করি। ক্রিমিনোলজি ডিপার্টমেন্টের মাস্টার্স কোর্সের একজন টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট (TA) হিসেবে বেশ কিছু সেমিস্টার  শ্রদ্ধেয় প্রফেসরগণের অধীনে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়। এতে করে সাইবার ক্রাইম নিয়ে পড়াশোনা করার আগ্রহ আরো প্রবল হয়। বর্তমানে আমি এই বিভাগের M.Phil. এর একজন ছাত্র। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের IIT এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (IER) থেকে বিভিন্ন বিষয়ের শর্ট কোর্স সার্টিফিকেটও অর্জন করি। কিন্তু সবকিছুর ঊর্ধ্বে আমি নিজেকে একজন তথ্যপ্রযুক্তির শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিতেই সাচ্ছন্দ বোধ করি।


অনলাইন জগতে শিক্ষকতায় আমার যাত্রা:  রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে শিক্ষকতাকালীন ২০১৭ সালের শেষের দিকে এইচএসসি ২০১৮ ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অনলাইনে আইসিটি ক্লাস নেয়ার জন্য তৎকালিন সময়ের সদ্যজাত অনলাইন প্লাটফর্ম রবি টেন মিনিট স্কুল এর CEO আয়মান সাদিক তার স্কুলে লাইভ ক্লাস নেওয়ার জন্য প্রস্তাব পাঠান। আমি মুহূর্তের মধ্যেই তাদের হ্যাঁ বলে দেই ।এরপর ঢাকার কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জনতা টাওয়ারের একটি এক রুমের অফিস কাম ক্লাস রুমে শুধুমাত্র ছোট্ট একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করে একটি ক্লাস নিই, যা ছিল আমার জীবন বদলে দেওয়া ক্লাস। অনলাইনের ক্লাস সারা বাংলাদেশে এত জনপ্রিয়তা অর্জন করবে তা আমি জীবনেও ভাবতে পারিনি। এরপর আর আমাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। নিয়মিতভাবে টেন মিনিট স্কুলের একজন অনলাইন এডুকেটর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছিলাম। আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি যেদিন যেদিন অনলাইনে ক্লাস নিতাম ওই দিনগুলোতে ক্যামেরার পেছনে টেন মিনিট স্কুলের প্রায় সবাই থাকতো। এক একটা ক্লাস শেষ হওয়ার পর আয়মান সাদিক ,সাকিব বিন রশিদ সহ টেন মিনিট স্কুলের প্রায় সবাই মিলে উৎসবমুখর পরিবেশে তা উদযাপন করতাম।এইভাবে চলতে লাগল বেশ কিছুদিন। এরই মাঝে ২০১৯ সালে  ঢাকা সেনানিবাসের নির্ঝর এলাকায় নতুন প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল  স্কুল এন্ড কলেজ (BISC)তে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগে প্রভাষক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করি। উল্লেখ্য আমার প্রতিষ্ঠানে আমি ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির নিয়মিত ক্লাস নিয়ে থাকি। টেন মিনিট স্কুলে পুরাতন সিলেবাসের  ষষ্ঠ, সপ্তম , অষ্টম এবং নবম শ্রেণীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর আমার আইসিটি ফ্রি কোর্স রয়েছে।


সবকিছু বেশ ভালই চলছিল কিন্তু হঠাৎ করে ২০২০ সালে সারা পৃথিবীব্যাপী শুরু হয় করোনার ভয়াল থাবা। ফলে সার্বিকপরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২০ সালের ১৫ই মার্চ থেকে সারা বাংলাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়, শুরু হয় লকডাউন। এতে করে অন্য অনেকের মতো সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে আমাদের প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী। হঠাৎ সৃষ্ট এই প্রেক্ষাপটের সাথে কেউই যেন মানিয়ে নিতে পারছিলেন না । আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা  পড়াশোনা বিহীন বাসায় বসে কিছুতেই অলস সময় অতিবাহিত করতে চাচ্ছিলো না। যদিও লকডাউনের শুরুতে বিভিন্ন স্কুল হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার এবং মেসেঞ্জার গ্রুপ ব্যবহার করে  বিভিন্ন লেসন লিখিত আকারে শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাতে চেষ্টা করছিলেন কিন্তু কেউই আশানুরূপ আশানুরূপ ফলাফল পাচ্ছিলেন না। সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সহ সংশ্লিষ্ট সবাই শিক্ষা ক্ষেত্রের এই ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে নেয়া যায় তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা করেন। সরকার কর্তৃক সিদ্ধান্ত আসে অনলাইন এ ক্লাস নেওয়া হবে। কিন্তু কিভাবে ক্লাস নেওয়া হবে কেউই তার কোন কুল কিনারা করতে পারছিল না। এরই মাঝে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের দৈত্যের মতো সকল সমস্যার সমাধানের উপায় নিয়ে হাজির হয় এটুআই। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নেওয়া হয় সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনকে।


যদিও এরই মাঝে বেসরকারিভাবে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশেষ করে, ফেসবুক লাইভ অপশন ব্যবহার করে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করা শুরু করে দেয় কিন্তু বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে তৎকালিন সময়ে সকল ছাত্র-ছাত্রীর কাছে একটি স্মার্টফোন থাকা একটি অকল্পনীয় ব্যাপার ছিল। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সকলের কাছে শিক্ষা দেওয়া সেবা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব ছিল না। ফলে বেশ কিছু নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক-শিক্ষিকামন্ডলী ও কর্মী নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচার করার জন্য ক্লাস রেকর্ড হতে থাকে। শুরুতে ক্লাস রেকর্ড অর্থ শুটিং করার জন্য  ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের ক্লাস রুম এবং রবি ১০ মিনিট স্কুলের সেট ব্যবহার করা হচ্ছিল। সেই সেটে আমি নিয়মিতভাবে লাইভ ক্লাস নিচ্ছিলাম। সেই সময় এটুআই এর অত্যন্ত পরিচিত একজন কর্মকর্তা আমাকে বিটিভিতে ক্লাস নেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেন, আমি তাতে সাথে সাথে রাজি হযে যাই। অতঃপর মার্চের ২৫ তারিখে  মোহাম্মদপুরে আমার ক্লাস রেকর্ড হয়। সারাদেশে লকডাউন চলছে, চারিদিকে সুন সান নিরবতা। রাস্তায় কোনো গাড়ি নেই , মানুষ নেই।  জনমানবিহীন এমন পরিস্থিতির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিভিন্ন শুটিং সেটে এক কর্মযজ্ঞ চলছিল। সেই সেটের একটিতে গিয়ে পরিচিত হই দেশের সেরা সকল শিক্ষক শিক্ষিকামন্ডলী এবং শিক্ষা নিয়ে অত্যন্ত সুনামের সাথে কাজ করছেন এমন অনেক বড় বড় কর্মকর্তাদের সাথে। মাউশি ও এটুআই এর শ্রদ্ধেয় কর্মকর্তারা দিনরাত এক করে ক্লাস স্যুট মনিটর করছিলেন আর দিচ্ছিলেন নানারকম দিকনির্দেশনা। অবশেষে ২৯ শে মার্চ ২০২০ তারিখ সকালে “আমার ঘরে আমার স্কুল” এর সপ্তম শ্রেণির আইসিটি ক্লাসসহ অন্যান্য ক্লাস দিয়ে রুটি্ন অনুসারে নিয়মিত অনলাইন ক্লাসের শুভ সূচনা হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ টেলিভিশনের আরেকটি চ্যানেল সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হয় । এর ফলে সারা বাংলাদেশের সকল ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকামন্ডলী এবং অভিভাবক মহলে এটি ব্যাপক আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এরই মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষা ও প্রাথমিকের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ওই একই মাধ্যমে সমানতালে ক্লাস চলছিল। সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে মাদ্রাসা শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা ও মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের নিয়মিতভাবে ক্লাস চলছিল ফলে বলা যায় প্রথম থেকে দশম শ্রেণীর সকল ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনার বেশ কিছুটা গতি হল। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়ল ব্যাপক দুশ্চিন্তায় ।আবারও তাদের সামনে ত্রাতা হিসেবে হাজির হলো এটুআই। তারা সিদ্ধান্ত নিল কিশোর বাতায়ন ফেসবুক পেজের মাধ্যমে একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণির লাইভ ক্লাস নেয়া হবে। সারা দেশের একগুচ্ছ  প্রযুক্তিতে দক্ষ ও মেধাবী  শিক্ষক শিক্ষিকামন্ডলীর সমন্বয়ে তৈরি করা হলো শিক্ষক প্যানেল। দেয়া হলো প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা। যদিও লকডাউন পরিস্থিতির কারণে কাউকেই কোনো টিচিং এইড, ম্যাটেরিয়াল বা অন্য কোন সহযোগিতা প্রদান করা সম্ভব হয়নি তার পরেও শুধুমাত্র একান্ত স্বদিচ্ছা ও দেশের জন্য কাজ করার অভিপ্রায় নিয়ে সকলেই যার যতটুকু সামর্থ্য ছিল তার সবটুকু নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। অবশেষে ২০২০ সালের ১০ এপ্রিল তারিখে আমার নেওয়া তথ্যপ্রযুক্তি ও কুষ্টিয়ার আনিস স্যারের পদার্থবিজ্ঞান ক্লাসের মাধ্যমে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির জন্য কিশোর বাতায়ন ফেসবুক পেজে লাইভ ক্লাস শুরু হয়। ঐ পেইজে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিকের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রায় সকল বিষয়ের ক্লাস নিয়মিতভাবে রুটিন অনুসারে শুরু হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীসহ সকল মহলে কিশোর বাতায়ন হয়ে ওঠে পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার একটি ভরসা ও আস্থার জায়গা। পর্যায়ক্রমে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্যও বিভিন্ন বিষয়ের লাইভ ক্লাসও এই পেইজে শুরু হয়। একই সাথে এই পেইজ ব্যবহার করে সারা বাংলাদেশের সকল শিক্ষকের জন্য বিভিন্ন বিষয়ের প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়।  ঐ সময়ে শিক্ষা সংক্রান্ত সব ধরনের দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য এই ফেসবুক পেইজের বিকল্প ছিলনা।


২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাংলা, ইংরেজি, আইসিটি সহ বিজ্ঞান মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের প্রায় সকল বিষয়ের উপর নিয়মিত ক্লাস নেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। ফলে ২০২০ সালের ০৫ অক্টোবর আইসিটি , বাংলা ও ইংরেজি ক্লাসের মাধ্যমে কিশোর বাতায়নে যে ক্লাসগুলো শুরু হয় তা অভিভাবক, ছাত্রছাত্রীসহ সকল মহলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে আর পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিশোর বাতায়ন হয়ে উঠে একমাত্র ভরসার জায়গা। আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব সৌভাগ্যবান এই কারণে যে  ২০২০ সালের ২৯ মার্চ  সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে ,১০ এপ্রিল কিশোর বাতায়নে এবং ৫ই অক্টোবর কিশোর বাতায়নে বিভিন্ন বিভাগের যে ক্লাসগুলো শুরু হয় তার প্রায় সবই আমার নেয়া তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (ICT) র মাধ্যমে শুরু হয় .তাই আমি a2i সহ সংশ্লিষ্টসকলের কাছে  চিরঋণীঅ সেই সাথে  সারা বাংলাদেশের সকল ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক-শিক্ষা মন্ডলী ও অভিভাবক মহল কর্তৃক যে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা আমি পাই তার  কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করলেই নয়। কিশোর বাতায়নে কাজ করার পাশাপাশি আমি বাংলাদেশের শিক্ষকদের সবচেয়ে বড় ওয়েব পোর্টাল শিক্ষক বাতায়নের জেলা অ্যাম্বাসেডর শিক্ষক হিসেবে কাজ করারও সুযোগ পাই।


আমি সবসময় চেষ্টা করেছি অনলাইনে ক্লাসগুলো যেন অফলাইনের মত অংশগ্রহণমূলক এবং প্রাণবন্ত হয় এবং ক্লাসগুলো যেন ছাত্র-ছাত্রীরা করে। ফলে অনলাইনে সর্বপ্রথম শিক্ষক হিসেবে জুম এর পেইড ভার্সন ব্যবহার করে ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে নিয়ে কিশোর বাতায়নে একটি অংশগ্রহণমূলক ইন্টারেক্টিভ লাইভ ক্লাস পরিচালনা করার জন্য মিলে যায় এটুআই কর্তৃক সেরা উদ্ভাবকের তকমা। এতে অনুপ্রাণীত হয়ে পরবর্তীতে ইন্টারেক্টিভ অনলাইন লাইভ ক্লাসে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করে ভিন্ন উপায়ে এমসিকিউ প্রশ্ন সলভ করার একটি ক্লাস পরিচালনা করি যাতে ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণ এবং উত্তর দেয়ার আগ্রহ বেড়ে যায়। মাউশি ও এটুআই প্রাপ্ত পরিচিতির জন্য সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকামন্ডলীর জন্য অসংখ্য অনলাইন প্রশিক্ষন সেশন পরিচালনা এবং প্রশিক্ষণ দেয়ার সৌভাগ্য হয়।


বাংলাদেশে ব্লেন্ডেড লার্নিং এডুকেশন সিস্টেম চালু করুন প্রকল্পের একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করার সুযোগও আমি পাই। এছাড়াও ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস , শেখ রাসেল দিবস সহ অন্যান্য জাতীয় কুইজ প্রতিযোগিতার প্রশ্ন প্রণেতা হিসেবে কাজ করি। শিক্ষক বাতায়ন, মুক্তপাঠ সহ আইসিটি ডিভিশনের দীক্ষা প্রজেক্ট এর একজন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর এবং স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কাজ করছি ।শুধুমাত্র এটুআই এর কারণেই উল্লেখ্য সকল জায়গায় আমার কাজ করার সৌভাগ্য হয়। অবশেষে আমার জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন ২০২৩ সালের নতুন কারিকুলামের  জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক নবম শ্রেণীর জন্য লিখিত  ডিজিটাল প্রযুক্তি বইয়ের অন্যতম একজন লেখক এবং সম্পাদক হিসেবে কাজ করা। আমি আরো ভাগ্যবান এই কারণে যে নতুন কারিকুলামের মাস্টার ট্রেইনারদের একজন প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতে পেরেছি আর পাঠ্যপুস্তক লেখার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আমি ইতিমধ্যে রচনা করেছি আরো একটি বই “মজায় মজায় পাইথন শিখি”। আশা করি  প্রোগ্রামিং শিক্ষায় ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক হলে মহলে এটি বেশ অবদান রাখবে। 


অবশেষে আমি বলতে চাই  আমার সামগ্রিক একাডেমিক পড়াশোনা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নিয়ে এবং বর্তমানে কাজও করছি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে। তবে একজন শিক্ষক হিসেবে আজ পর্যন্ত যতটুকু দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছি তার বেশিরভাগই মাউশি ও এটুআ এর  কল্যাণেই সম্ভব হয়েছে। শিক্ষত বাতায়ন সারা বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজের বন্ধন শক্তিশালী করেছে  এবং ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক সমাজকে এক সুতোয় বাঁধতে পেরেছে।


এই শিক্ষত বাতায়ন একজন সাধারণ শিক্ষককে ঘষামাজা করে অর্থাৎ নানা রকম প্রশিক্ষণ দিয়ে এবং মুক্তভাবে কাজ করার উৎসাহ দিয়ে এক একজন অসাধারণ শিক্ষক তৈরি করেছে। তাই আমি মনেকরি এটুআই  নামক পরশ পাথরের ছোঁয়া না পেলে আমি আজকের এই মাসুদ হাসান কোনভাবেই হতে পারতাম না । তাই এটুআই এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমি ঋণী এবং চিরকৃতজ্ঞতা বন্ধনে আবদ্ধ থাকবো।


লেখক- 

মো. মাসুদুল হাসান


আরো দেখুন