Loading..

সফলতার গল্প

১৪ মার্চ, ২০২৪ ১১:২৪ অপরাহ্ণ

শিক্ষক বাতায়ন ও আমি

আমি শামিমা নাসরিন সনিয়া, সহকারী শিক্ষক, দক্ষিণ গাছুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুলাদী, বরিশাল। ২০১২ সালের ০৫/০৯/২০১২ তারিখে বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার দক্ষিণ গাছুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করি। আমি ২০১৩ সালের জুলাই, ডিপিএড প্রশিক্ষণের জন্য সাগরদি, পিটিআই, বরিশালে যোগদান করি এবং সফলভাবে ৩১/১২/ ২০১৪ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করি।

 

কোভিড- ১৯ এর কারণে আমরা প্রাথমিকের শিক্ষকরা গুগল মিটে ক্লাস শুরু করি। গুগল মিটে ক্লাস করতে যেয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে জানতে পারি শিক্ষক বাতা সম্পর্কে। এটুআই কর্তৃক পরিচালিত বাংলাদেশের শিক্ষকদের সর্ববৃহৎ প্ল্যাটফর্ম শিক্ষক বাতান ওয়েবসাইটে সদস্য হিসেবে নিবন্ধন করি। এরপর শুরু হয়ে যায় আমার বাতায়নের প্রতি ভালোবাসা এবং বিভিন্ন কাজে লেগে থাকা। এরপর এটুআই থেকে বরিশাল জেলার আইসিটি অ্যাম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হই। শুরু হ আমার বাতায়নের আকাশে ভেসে বেড়ানোর স্বপ্ন। কন্টেন্ট তৈরি করতে করতে কখন রাত যায়, কখন দিন হয় বুঝতে পারিনা। চলে আমার রাত জাগা পাখি হয়ে থাকা শুরু করে দেই স্বপ্ন দেখা সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা হবার এবং ছয় মাসের ছোট্ট সন্তানকে কোলে নিয়ে রাতের পর রাত, দিনের পর দিন শেষ হবার পর অবশেষে ২০২৩ সালে ১৯শে মার্চ সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা  

 

বাতায়নের সাথে যুক্ত হওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে যায় একটার পর একটা স্বপ্ন দেখার ভালোবাসার টানে কাজের টানে নতুন স্বপ্ন দেখতেই থাকি। এরপর সেরা উদ্ভাবক হবার স্বপ্ন। আল্লাহর রহমতে আমি ৩১ আগস্ট ২০২৩ এ  সেরা উদ্ভাবক হই

 

"পূর্ববর্তী পড়া নিয়ে নাও, ড়াশোনায়গিয়ে যাও"-  এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আমি "Lesson tracer"  নামক উদ্ভাবনী আইডিয়া নিয়ে কাজ করেছি। আমি প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে পাঁচ দিনে পাঁচটি ফাইল তৈরি করি । প্রতিটি ফাইলে প্রতিটি সপ্তাহের নাম লিখে দিই। আমি ফাইল গুলো যেন হারিয়ে বা নষ্ট না হয় সেজন্য দেয়ালে এঁটে দেই এবং শিক্ষার্থীদের নজরে যেন সবসম থাকে সেজন্য বিভিন্ন রং ব্যবহার করি  এবং ফাইলের নিচে "We missed you" কথাটি লিখে দিই , যাতে শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে যে,  সে বিদ্যালয়ে না আসাতে আমরা তাকে যথেষ্ট রকম অনুভব করেছি। আমরা প্রতি শিক্ষক শ্রেণিপাঠদান শেষে প্রতিদিনের ক্লাসে পড়াটা ফোল্ডিং করে ফাইলে রেখে দেই এরপর আমার অনুপস্থিত শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক বিদ্যালয়ে এসে প্রয়োজনমতো শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে পূর্ববর্তী দিনের পড়াটা খুব সহজে লিখে নিতে পারেন । এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের lesson সমূহ trace করতে পারবে। এই আইডিয়া নিয়ে কাজ করার পর আমি আমার শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বতঃস্ফূর্ততা লক্ষ্য করেছি। এতে তারা তাদের পিছনে পড়াগুলো পড়ে নিতে পেরেছে এবং বিভিন্ন মূল্যায়নে তারা তাদের ভালো নাম্বার অর্জন করতে পেরেছে। 


তাছাড়া, আমি আমার শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি বিষয়ে শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন রঙের রঙিন উপকরণ, আঁকা ছবি এবং ইউনিক উপকরণ ব্যবহার করি যা আমার শিক্ষার্থীরা দেখে অনেক আনন্দিত হয়। শিক্ষার্থীর পছন্দের বা আগ্রহের বিষগুলো পাঠ সংশ্লিষ্ট উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করাতে তাদের পাঠে আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং সেই সাথে পাঠটি দীর্ঘস্থায়ী হয় । এরপর আমি লক্ষ্য করেছি আমার শিক্ষার্থীরা উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে অনেক আনন্দের সাথে পাঠে অংশগ্রহণ করছে।  নতুন নতুন রঙিন উপকরণ পেয়ে আমার প্রিয় শিক্ষার্থীরা অনেক উৎসাহ পেয়েছে যা তাদের পাঠের প্রতি মনোযোগী হতে সাহায্য করেছে। যে সকল শিক্ষার্থী অমনোযোগী ছিল তারাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের পাঠে মনোযোগী হয়েছে। আমি উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠে মনোযোগী করতে পেরেছি । যার ফলে আমার শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট উপকৃত হয়েছে। 

 

১৪ দিনের আইসিটি প্রশিক্ষণসহ জাতী শিক্ষাক্রম ২০২১ (প্রাথমিক স্তর) বিস্তরণ বিষয়ক অনলাইন প্রশিক্ষণ অফলাইনে এবং অনলাইনে, গণিত অলিম্পিয়া, মুক্তপাঠ এবং মাইক্রোসফটের বিভিন্ন  প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছি। বাংলাদেশ কোভিড-১৯ স্কুল সেক্টর রেসপন্স প্রকল্পের অধীনে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট দ্বারা আয়োজিত সমষ্টিগত ও গঠনমূলক মূল্যায়ন এবং প্রতিকারমূলক শিক্ষার বিষয়ে মাস্টার প্রশিক্ষক এবং শিক্ষকদের জন্য তিন দিনের (১২-১১-২০২২ থেকে ১৪-১১-২০২২) আবাসিক প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করেছি।  বাংলাদেশ কোভিড-১৯ স্কুল সেক্টর রেসপন্স (সিএসএসআর) প্রকল্পের অধীনে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (জেইআর), (পিটিআই) দ্বারা আয়োজিত মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার বিষয়ে মাস্টার প্রশিক্ষক এবং শিক্ষকদের জন্য একটি দিনব্যাপী (১৫ নভেম্বর ২০২২) আবাসিক প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (জেইআর) কর্তৃক আয়োজিত বাংলাদেশ কোভিড-১৯ স্কুল সেক্টর। রেসপন্স (সিএসএসআর) প্রকল্পের অধীনে দূর শিক্ষার পরিবেশে দূরশিক্ষণের কৌশল সম্পর্কে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাস্টার প্রশিক্ষক এবং শিক্ষকদের জন্য একটি দিনব্যাপী (১৭ ডিসেম্বর, ২০২২) আবাসিক প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করেছি

 

এছাড়া শিক্ষক বাতায়নের কারণেই আমি ইউটিউব চ্যানেল খুলি এবং "Desire for innovation" নামে ২০২২  সালে একটি পেজ তৈরি করি। এই পেজের মাধ্যমে আমি আমার লাইভ ক্লাসগুলো পোস্ট করেছি। যা এখনো চলমান

 

শিক্ষক বাতান একটি প্ল্যাটফর্মই নয়, এটি একজন শিক্ষকের প্রাণের কেন্দ্রবিন্দু। যার সাথে যুক্ত হয়ে একটার পর একটা স্বপ্ন পূরণের মাধ্যমে, আমি আজকের শামিমা নাসরিন সনিয়া তৈরি হয়েছি। তাই এটুআই এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমি আজীবন ঋণী এবং কৃতজ্ঞ থাকব

 


শামিমা নাসরিন সনিয়া

সহকারী শিক্ষক

দক্ষিণ গাছুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যাল

সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা এবং সেরা উদ্ভাবক

শিক্ষক বাতায়ন  

আরো দেখুন