Loading..

সফলতার গল্প

১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:১৫ অপরাহ্ণ

শিক্ষক বাতায়ন থেকে স্বর্ণময় অধ্যায় ও সাফল্যমন্ডিত শ্রেষ্ঠ শিক্ষক

আমি রিবন রানী দাশ,সহকারী শিক্ষক,ভরপূর্ণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,লাখাই,হবিগঞ্জ। আমি লাখাই উপজেলার হাওড় এলাকার এক দূর্গম এলাকা আমার কর্মস্হল। ২০০৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষায় একজন সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি। ২০১৪ সালে লাখাই উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হই। ২০১৬ সালে সরকারিভাবে আমাদের বিদ্যালয়ে কম্পিউটার ও প্রজেক্টর দেওয়া হয়।আগে থেকেই কম্পিউটার দক্ষতা থাকার কারণে প্রতিদিনই শিক্ষক বাতায়ন থেকে কন্টেন্ট ডাউনলোড করে এবং নিজে নিজের মতো করে কন্টেন্ট তৈরি করে ক্লাস নিতাম এবং mmcd তে ক্লাস সংখ্যা সংরক্ষণ করতাম।বিদ্যালয়ের যাবতীয় ওয়ার্ড ফাইল ও কন্টেন্ট এর কাজ করতাম।পরবর্তীতে ২০১৮ সালে জুন মাসে হবিগন্জ পিটিআই থেকে ১২ দিনের একটি আইসিটি প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি।সেসময় থেকে জীবনের মোড় ঘুরে যায়।সেখান থেকে মূলত শিক্ষক বাতায়ন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি ও শিক্ষক বাতায়নের সদস্য হই।তারপর থেকে শুরু হলো জীবনে সাফল্যের মালা গাঁথা।

শিক্ষক বাতায়নে প্রতিনিয়ত ভিজিট করতে থাকি এবল নিজের তৈরিকৃত ১০৩ টি কন্টেন্ট আপলোড তৈরি করি।২০১৮ সালে হবিগঞ্জ জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হই।২০১৯ সালে সরকারি সফরে ভিয়েতনাম সফর করি দশদিনের জন্য"modern practice in management ".২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে শিক্ষা ও সাফল্য ক্ষেত্রে জয়িতা নির্বাচিত হই।২০২০ সালে শিক্ষক বাতায়নের কার্যক্রম এর উপর ভিত্তি করে এটু আই কর্তৃক আইসিটি ফর ই ডিস্ট্রিক্ট অ্যাম্বাসেডর শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হই।২০২১ সালে শিক্ষকতা জীবনের সেরা অর্জন পাক্ষিকের সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা নির্বাচিত হই।

কোভিড -১৯ চলাকালীন বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ থাকলেও অনলাইনে পাঠদান চালিয়ে রেখেছিলাম শিক্ষক বাতায়ন ও এটুআই কর্তৃক পরিচালিত ঘরে বসে শিখি পেজ সহ,প্রাথমিকে প্রথম অনলাইন স্কুল বাংলাদেশ আলোকিত প্রাথমিক শিক্ষক পেইজবাংলাদেশ অনলাইন প্রইমারি স্কুল,সিলেট ডিভিশনাল অনলাইন স্কুল,হবিগঞ্জ অনলাইন স্কুল, হবিগঞ্জ প্রাইমারি স্কুল,লাখাই অনলাইন স্কুল এগুলোতে সব প্রাথমিক শিক্ষক এর ক্লাস রেকর্ড করে obs এর মাধ্যমে লাইভ স্ট্রিমিং করি এবং নিজে ১৭৬ টি ক্লাস প্রদান করে হবিগঞ্জ জেলায় প্রাথমিক বিভাগে প্রথম স্হান অধিকার করি।জেলা প্রশাসক সম্মাননা পুরস্কার ও করোনাযোদ্ধা সার্টিফিকেট প্রদান করেন।

২০২১ সালে জাতীয় পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবক হিসাবে ষষ্ঠ স্হান অধিকার করি।করোনাকালে সারা বাংলাদেশে ৩৫ টি ইনোভেশন এর মধ্যে আমার দুইটি ইনোভেশন একটি মূল্যবোধ বৃক্ষ অপরটি ভার্চুয়াল বন্ধু  জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি পায়।

করোনাকালে জুম ও গুগলমিট ব্যবহার করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যুক্ত করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ ক্লাস পাঠদান পরিচালনা করি।স্হানীয় অনলাইন ক্যাবল নেটওয়ার্ক এ আমার ক্লাস প্রচার করা হয়।জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কর্তৃক অনলাইন করোনাযোদ্ধা সম্মাননা সনদ লাভ করি।স্কাউট জগতে ওরিয়েন্টেশন, বেসিক,এডভান্সড ও স্কিল কোর্স সমাপ্ত করে উডব্যাজ পদবী গ্রহণে কাগজপত্র সরবরাহ করি।

২০২২ সালে cssr কর্তৃক ফরম্যাটিভ ও সামাটিভ এবংirr কর্তৃক মেন্টাল এডুকেশন এর টট নির্বাচিত হই। ২০২২ সালে শিক্ষক বাতায়ন কর্তৃক জানুয়ারি মাসে সেরা উদ্ভাবক নির্বাচিত হই।আমার  উদ্ভাবনী আইডিয়া  মূল্যবোধ বৃক্ষ সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের ২৬ পৃষ্ঠায় দেওয়া আছে। মুজিব শতবর্ষে প্রাথমিক শিক্ষকদের মধ্যে সর্বোচ্চ সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা ও সেরা উদ্ভাবক এর জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় শ্রেষ্ঠ শিক্ষক সম্মাননা প্রদান করেন। এছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ মেলা ও উদ্ভাবনী মেলাতে জেলা পর্যায়ে স্টলে নিজে স্বয়ংক্রিয়ভাবে করে প্রথম স্হান অধিকার করে প্রাথমিক শিক্ষার সুনাম বয়ে এনে দিয়েছি।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের সাথে,আমার বিদ্যালয়ের কার্যক্রম  ও প্রজেক্ট কালচারাল এক্টিভিটিজ শেয়ারিং প্লাটফর্ম কানেক্টিং ক্লাসরুমের মাধ্যমে সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এওয়ার্ড, যা আমাকে isa co ordinator সম্মাননা দিয়েছে। মাইক্রোসফট থেকে ২০২৩ সালে মাইক্রোসফট ইনোভেটর নির্বাচিত হই। এছাড়া মুক্তপাঠ প্লাটফর্ম থেকে ১০০ টি অনলাইন কোর্স করেছি।

২০২৩ সালের ১৮ জুন আমার ইনোভেশন "রিডিং রেস" সিলেট বিভাগীয় ইনোভেশন শোকেসিং এ শ্রেষ্ঠ স্হান অধিকার করে।

করোনাকালীন সময়ে আমি দৈনিক সময়ের আলো পত্রিকার নারীর পাতায় আমাকে নিয়ে কলাম বের হয়"সাড়া ফেলেছে রিবন রানী দাশের অনলাইন ক্লাস "বর্তমানে"Health Effects of Digital School Teaching and tutoring in Canada and Bangladesh"এর উপর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এর সাথে থিসিসে কাজ করছি।আমি অনেক আত্মবিশ্বাস  ও অনুপ্রেরণা নিয়ে নিজেকে এগিয়ে নিয়েছি শুধুমাত্র শিক্ষক বাতায়নের মাধ্যমে।এখন সবাই আমাকে শিক্ষক বাতায়নের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে চেনাজানা হয়েছে।এটা আমার জন্য বিশাল পাওয়া।শিক্ষক বাতায়ন এখন হাজারো মানুষের প্রাণের বন্ধন সৃষ্টি করেছে।এখনো নিয়মিত ব্লগ, কন্টেন্ট ও ছবি এসব আপলোড করি।আমি স্কাউট আইসিটি ট্রেণিং করেছি। বাংলা মাস্টার ট্রেইনার হিসাবে বর্তমানে ট্রেণিং করাচ্ছি বর্তমানে।

ই গর্ভন্যান্স ও উদ্ভাবক এর উপর তিনবার প্রশিক্ষণ নিয়েছি।বর্তমানে হবিগঞ্জ জেলার উদ্ভাবক TOT প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি দুই দিনব্যাপী।

wsis  জিততে বিভিন্ন ইনহাউজ প্রশিক্ষণ করেছি।শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলায় তিনদিনের জন্য শিক্ষক বাতায়ন রিফ্রেশার্স ট্রেণিং এ প্রশিক্ষক হিসাবে প্রশিক্ষণ দেই।আমার নিজ উপজেলায় ৮০ জন শিক্ষককে শিক্ষক বাতায়নে যুক্ত  করি।

গত পহেলা এপ্রিল ২০২৪ আমি জেলা পর্যায়ে ইনোভেশন শোকেসিং এ আমার ইনোভেশন স্মার্ট রাইটার নিয়ে অংশগ্রহণ করি এবং জেলা পর্যায়ে মান্যবর জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে দ্বিতীয় স্হান অর্জন এর জন্য ক্রেস্ট ও সম্মাননা সনদ গ্রহণ করি। আমি রিবন রানী দাশ শিক্ষক বাতায়নের সাহায্যে আমাকে সবাই চেনে জানে।শিক্ষক বাতায়নের মাধ্যমে এখনো আমার সফলতার ধারা অব্যাহত রয়েছে। সবাই দোয়া ও আশীর্বাদ করবেন।আমার মতো অনেক শিক্ষকের প্রাণের স্পন্দন হলো শিক্ষক বাতায়ন।


রিবন রানী দাশ

সহকারী শিক্ষক

ভরপূর্ণি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়


আরো দেখুন