Loading..

সফলতার গল্প

১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০৪:৩৩ অপরাহ্ণ

প্রিয় শিক্ষক দিলরুবা খাতুন

আমি দিলরুবা খাতুন, প্রধান শিক্ষক, ধাদাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,পুঠিয়া,রাজশাহী।  ২০১০ সালে এই বিদ্যালয়ে যোগদান করি। 

আমার বিদ্যালয়ের নাম ধাদাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পুঠিয়া, রাজশাহী, বাংলাদেশ। ২০১০ সালে আমি এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করি। তখন শিক্ষক সংখ্যা ছিল ২জন। আমি যোগদান করলে হয় ৩জন। ২টি পাকা ভবন এবং একটি টিনসেড ভবন। বসার বেঞ্চের অভাব, শ্রেণিকক্ষে কোন ফ্যান ছিল না, বাথরুম, নলকুপ কিছুই ছিল না। ভীষণরকম অবহেলিত একটা স্কুল। বিদ্যালয়ের পড়াশোনার মান খুব খারাপ ছিল। ক্যাচমেন্ট এলাকার প্রায় ১০ পার্সেন্ট শিশু ভর্তি হত না। শিক্ষার্থীরা ঠিকমত ক্লাস করত না। যারা ক্লাসে আসত তাদের মধ্যেও অধিকাংশ ঠিকঠাক সব কিছুতে অংশগ্রহন করত না। সবাই পরবর্তি ক্লাসে উঠতে পারত না। যারা উঠে যায় তাদের গ্রেডসও ঠিকমত হত না। প্রায় 5% শিশু প্রাথমিক শিক্ষা অতিক্রম করত না। আর স্কুল পালানো শিক্ষার্থীদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। এমন অবস্থা দেখে আমি খুবই মর্মাহত হলাম। আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে সবকিছু ঠিক করবো। তখন আমি ভাবলাম বিদ্যালয়ে এসে যদি শিক্ষার্থীরা আনন্দই না পায় তবে আসবে কেন শিক্ষার্থীরা স্কুলে। সমস্যাগুলোর সমাধান করা ছিল আমাদের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ ।


প্রথমে আমরা বিবর্ণ স্কুল এবং শ্রেণিকক্ষগুলো সুন্দর করে সাজাই। পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ, খেলনা উপকরণ এর ব্যবস্থা করা হয়। ফীরে আসতে শুরু করে শিক্ষার্থী।  করোনা পরবর্তী সময়ে যখন আমরা স্কুলে ফিরে আসি তখন সকল শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসা ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই সময় আমরা ব্লেন্ডেড লার্নিং নিয়ে কাজ করি। তখন অর্থাৎ ২০২২ সালে আমার শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৭টি স্কুলের সাথে  Connecting Classrooms এর আওতায় পার্টনারশীপে কাজ করেছি। 

বর্তমানে স্কুলে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি প্রায় 100 শতাংশ। বিদ্যালয়ের ৯০% শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় A গ্রেড অর্জন করেছে। গ্রামের বহু ছেলে মেয়ে এখন মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ার  ইউনিভার্সিটি এবং দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে।

২০১৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা পদকে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ বিদ্যালয় হওয়ার গৌরব অর্জন করি। স্কুলটি সম্প্রতি ঝরে পড়ার হার উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে সক্ষম হয়েছে এমন বিদ্যালয় ক্যাটাগরিতে প্রাথমিক শিক্ষা পদক ২০২২শে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ স্কুল হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছে। আইপিডিসি প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২২" পদকে ভুষিত হওয়ায় গৌরব অর্জন করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। ২০২২ সালে ধাদাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় British Council কতৃক আয়োজিত International School Award এ Full award অর্জন করেছে।  British Council এর Connecting Classrooms প্রোগ্রামের মাধ্যমে ধাদাশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের কার্যক্রম গুলি  ভারত, পাকিস্তান, নেপালের বিভিন্ন স্কুলের কর্মকাণ্ডের সাথে শেয়ার করে। এখানে আমি International school coordinator হিসেবে কাজ করেছি। যে কারনে আমাদের এই অর্জন। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের একটা জার্নি ছিল।


কৃতজ্ঞতা জানাই পৃথিবীর বৃহত্তম ইনোভেশন ল্যাব, ডিজিটাল বাংলাদেশের অক্সিজেন " a2i" । যদি শিক্ষক বাতায়নের সাথে আমার পরিচয় না হতো তবে আমার জার্নিটা হয়তো চক-ডাস্টারেই আটকে থাকতো। জার্নি হয়তো এত লম্বা এবং সমৃদ্ধ হতো না।  আমি মনে করি, একজন শিক্ষকই পারেন শিক্ষার্থীর মানসিক উৎকর্ষ সাধন করতে, শিক্ষার্থীর আচরণ, মন ও আত্মার উন্নয়ন ঘটাতে। যেটা শিক্ষার্থীর মেজাজ ও দৃষ্টিভঙ্গির উপর সুদূরপ্রসারী পরিবর্তনের প্রভাব ফেলতে পারে। স্কুলকে নির্ভয়, নির্মল আনন্দময় ও শিক্ষার্থীদের ভরসার আশ্রয়স্থলে পরিণত করা প্রয়োজন। শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের উপযোগী পরিচর্যা কেন্দ্রে পরিণত করা প্রয়োজন। স্কুল যেন হয় শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখার উত্তম চর্চা কেন্দ্র। স্কুল কেবল জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রতিযোগিতা কেন্দ্র যেন না হয়,


ধন্যবাদ।


আরো দেখুন