Loading..

সফলতার গল্প

০৮ মে, ২০২৪ ১১:১৭ অপরাহ্ণ

কাজে আনন্দ,কাজেই সফলতা

আমি ২০২১ খ্রি. সনের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করি। ইতিপূর্বে সিলেট জেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলাধীন মোহাম্মদ মকন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজে ১ ডিসেম্বর ১৯৯৪ খ্রি. হইতে ১৮ মার্চ ২০১৫ খ্রি.পর্যন্ত সহকারী শিক্ষক এবং ১৯ মার্চ ২০১৫ খ্রি.হইতে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১খ্রি. পর্যন্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসাবে কর্মরত ছিলাম।


২০১৩ খ্রি. সনের ৪ ফেব্রুয়ারি হইতে ২০২২ খ্রি. সনের জুন পর্যন্ত British Council Schools Ambassador হিসাবে দায়িত্ব পালন করি। আমার তত্ত্বাবধানে মোহাম্মদ মকন উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ ২০১৪ খ্রি. সনে সিলেট বিভাগের মধ্যে সর্বপ্রথম এবং ২০১৮ খ্রি. সনে দ্বিতীয়বারের মত International School Award (ISA) অর্জন করে। British Council Schools Ambassador হিসাবে কাজ করতে গিয়ে দশ বছরে বাংলাদেশের প্রায় অর্ধশত স্কুল আমার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে থেকে International School Award ( ISA) অর্জন করে। প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করার পর আমার নেতৃত্বে সৈয়দ কুতুব জালাল মডেল হাইস্কুলও ২০২২ খ্রি. সনে International School Award (ISA) অর্জন করে। British Council এ কাজ করতে গিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বীকৃত Teacherd Portal " শিক্ষক বাতায়ন " এর সাথে পরিচিত হই। ২০১৪ খ্রি. সনের অক্টোবরে শিক্ষক বাতায়নের সদস্য হয়ে কয়েকটি প্রেজেন্টেশন আপলোড করি।

 

শিক্ষক বাতায়নে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করি ২০১৯ খ্রি. সনের অক্টোবর থেকে। ৬ ডিসেম্বর ২০১৯খ্রি. বাতায়নে “সেরা কন্টেন্ট” নির্মাতা হই। ২০১৯ খ্রি. সনের ২৭ ও ২৮ ডিসেম্বর সিলেটে অনুষ্ঠিত "হাওর পাড়ের শিক্ষক সম্মেলন"। যে সম্মেলন আয়োজনের চিন্তা ভাবনা থেকে সবকিছুই করেছিলেন রাণীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো আব্দুস সামাদ স্যারসহ পাঁচজন স্বপ্নচারী শিক্ষক। আব্দুস সামাদ স্যারের আগ্রহ ও চাপাচাপিতে পিছনে থেকে কাজ করলেও সম্মেলন সফলভাবে বাস্তবায়নে একসময় নেতৃত্ব দিতে সামনে এগিয়ে আসতে হয় আমাকে। এই সম্মেলনে সারা দেশ হইতে প্রায় চার শতাধিক শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ গোলাম ফারুক প্রথম দিনের প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। দ্বিতীয় দিনের প্রথম অধিবেশনে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক সহ দেশ সেরা শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেন। দ্বিতীয় অধিবেশনে খেতাবধারী মুক্তিযুদ্ধারা অংশগ্রহণ করেন। দুই দিনের বিভিন্ন অধিবেশনে এটুআই এর পক্ষ থেকে সঞ্চালনায় ছিলেন জনাব রফিকুল ইসলাম সুজন। এই সম্মেলনে ICT4E অ্যাম্বাসেডর ব্যতীতও সিলেটের বেশ কিছু উদ্যোমী শিক্ষক আমার অনুপ্রেরণায় অংশগ্রহণ করেন। যারা পরবর্তীতে এটুআই কার্যক্রমে সিলেট বিভাগের হাল ধরেন।


২০২০ খ্রি. সনের জানুয়ারিতে আমাকে শিক্ষক বাতায়নে ICT4E জেলা অ্যাম্বাসেডর মনোনীত করা হয়। সেই থেকে এটুআই কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ি। সিলেট বিভাগে এটুআই কার্যক্রম এগিয়ে নিতে আমি নিজে কিছু পরিকল্পনা হাতে নেই। এর মধ্যে এটুআই থেকে WSIS ভোটিং কার্যক্রমে শিক্ষকদের উদ্বুদ্ধ করতে আমাকে সিলেট বিভাগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। WSIS ভোটিং কার্যক্রম বাস্তবায়নে সিলেটসহ হবিগঞ্জেও কর্মশালায় অংশগ্রহণ করি।

 

২০২০ খ্রি. সনের মার্চ মাসের মাঝামাঝিতে করোনার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে বিভিন্ন বিভাগে ফেইসবুকে লাইভ ক্লাস পরিচালনার মাধ্যমে অনলাইন স্কুল কার্যক্রম শুরু হলে পিছিয়ে থাকেনি সিলেট বিভাগও ICT4E জেলা অ্যাম্বাসেডরদের পাশাপাশি বিভাগের উদ্যোমী শিক্ষকদের নিয়ে সিলেট বিভাগে আমরা গড়ে তুলি "Sylhet Divisional Online School "


স্কুলটি পরিচালনায় প্রথম দিন থেকেই এডমিন হিসাবে রুটিন প্রস্তুত,  ক্লাস রেকর্ডে শিক্ষকদের উদ্বুদ্ধ করা ও রুটিনমত ক্লাস লাইভ করা বিষয়গুলো মনিটরিং ও মেন্টরিং এর দায়িত্ব কাধে তুলে নেই। শিক্ষকদের ক্লাস নিতে আগ্রহী করে তুলতে এক সময় নিজেই লাইভ ক্লাস শুরু করি। এই সময়ে আমার প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণায় সিলেট বিভাগের বেশ কিছু শিক্ষক ধাপে ধাপে ICT4E জেলা অ্যাম্বাসেডর মনোনীত হন। আমার বাসার সিটিং রুম একসময় "Sylhet Divisional Online School " অফিস কক্ষে পরিণত হয়। সিলেট বিভাগের চারটি জেলা থেকে ক্লাস সংগ্রহ, রুটিন তৈরি ও সময়মত ক্লাস লাইভ করানো এটা নিত্য দিনের কাজে পরিণত হয়। সেই সময় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন অনলাইন স্কুলের ক্লাস শিক্ষক বাতায়নে অনুমোদনের দায়িত্ব এটুআই থেকে আমাকে দেওয়া হয়। সিলেট বিভাগে সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা ও সেরা অনলাইন পারফর্মার হতে শিক্ষকদের উদ্বুদ্ধ করি। অক্টোবর ২০২০খ্রি. শিক্ষক বাতায়ন কতৃপক্ষ আমাকে "সেরা নেতৃত্ব" নির্বাচন করেন।


সিলেট বিভাগের এই উদ্যোমী শিক্ষকদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্য ২০২২ খ্রি. সনের শেষ দিকে আমরা "Sylhet Divisional Online School" এর উদ্যোগে "অনলাইন পারফর্মার শিক্ষক সম্মেলন " আয়োজন এর সিদ্ধান্ত নেই। নিজস্ব আর্থিক ব্যবস্থাপনা আমাদের এই উদ্যোগকে এটুআই কতৃপক্ষ স্বাগত জানান এবং সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। ২০২৩ খ্রি. সনের ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি সিলেটের "রিজেন্ট পার্ক রিসোর্ট" - এ দুইদিন ব্যাপী এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট বিভাগের তিনশত শিক্ষকের সাথে সারা দেশ আরও প্রায় পঞ্চাশ জন শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। দুই দিনে চার পর্বে বিভক্ত উক্ত অনুষ্ঠানে দীক্ষা প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক জনাব মোহাম্মদ কবির হোসেন, এটুআই থেকে সিফাতুল ইসলাম,  মাউশি সিলেট অঞ্চলের পরিচালক, উপ-পরিচালক, চার জেলার জেলা শিক্ষা অফিসার, সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, সিলেট এর অধ্যক্ষসহ শিক্ষক মন্ডলী, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সিলেট এর চেয়ারম্যান মহোদয়ের প্রতিনিধি হিসাবে কলেজ পরিদর্শক, জেলা পরিষদ সদস্য ও স্থানীয় সংসদ সদস্য অতিথি হিসাবে অংশগ্রহণ করেন। ২৮ জানুয়ারি সকালের অধিবেশনটি ছিল উল্লেখ করার মতো। আমরা আলোচনার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করেছিলাম "নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকের ভুমিকা ও করণীয়"। মাউশি সিলেট অঞ্চলের পরিচালক,  উপ-পরিচালক, চার জেলার জেলা শিক্ষা অফিসার, টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষক, দীক্ষা প্রকল্পের পরিচালক, গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, শিক্ষক মন্ডলী অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন। এনসিটিবি থেকে অনলাইনে যুক্ত হন প্রফেসর মোহাম্মদ মশিউজ্জামান। আমাদের এই উদ্যোগ মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী সহ সকল মহলের প্রশংসা অর্জন করে।


নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের অনলাইন প্রশিক্ষণে সহায়তার জন্য বিভাগের প্রতিনিধি বাছাই এবং সেই সাথে নিজেও দায়িত্ব পালনে এটুআই থেকে মনোনীত হই। নতুন শিক্ষাক্রমে ২০২৩ খ্রি. সনের বার্ষিক সামষ্টিক মূল্যায়নের জন্য "নৈপুণ্য " অ্যাপস চালু হলে সেখানেও এটুআই থেকে সিলেট বিভাগের প্রতিনিধিত্ত্ব করি। "নৈপুণ্য" অ্যাপে বিদ্যালয়গুলোকে সহায়তায় জন্য এটুআই থেকে নৈপুণ্য টীমে আমাকে সিলেট জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়।


আলহামদুলিল্লাহ। সবার সহযোগিতা নিয়ে অদ্যাবধি এই দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি।


আব্দুল মালিক

প্রধান শিক্ষক,

সৈয়দ কুতুব জালাল মডেল হাই স্কুল,

দক্ষিণ সুরমা, সিলেট । 

আরো দেখুন