Loading..

সফলতার গল্প

১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ০৪:৪২ অপরাহ্ণ

অনলাইন এবং অফলাইন মাধ্যমকে ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের পড়ানোর অভিজ্ঞতা

আমি সুবর্না রায় লিপা, সহকারী শিক্ষক, ত্রিপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোয়ালমারী ,ফরিদপুর। ২০১৬ সাল। ১২ দিনের একটি আইসিটি প্রশিক্ষন। একটি প্রশিক্ষন বদলে দিল আমার শিক্ষকতা জীবনের কর্মপ্রবাহের গতিপথ। 


প্রশিক্ষনের শেষ দিনে এটুআই কর্তৃক পরিচালিত বাংলাদেশের শিক্ষকদের সর্ববৃহৎ প্লাটফর্ম শিক্ষক বাতায়ন ওয়েবসাইটে সদস্য হিসাবে নিবন্ধিত হই আমি। এরপর থেকেই প্রাথমিকের বিভিন্ন বিষয়ের ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করতে থাকি এবং শিক্ষক বাতায়ন ওয়েবসাইটে আপলোড করতে থাকি। ২০১৭ সালে শিক্ষক বাতায়নে সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা নির্বাচিত হই। এই স্বীকৃতি ছিল আমার শিক্ষকতা জীবনে অর্জিত প্রথম কোন স্বীকৃতি এবং এই স্বীকৃতিই আমার উদ্দীপনা শতগুন বাড়িয়ে দেয়।করোনাকালীন ২০২০ সালের ১৭ মার্চ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। আমার বিদ্যালয়ের শিশুরা যাতে বই থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে না যায় সেজন্য আমি ২১ মার্চ থেকে প্রথম আমার অনলাইন ক্লাস শুরু করি এবং শিশুদেরকে আমার পাঠের সাথে যুক্ত করার চেষ্টা করি। একটি শিশুও যদি উপকৃত হয়, তাহলেই আমার প্রচেষ্টা সার্থক হবে, এই চিন্তা থেকেই আমার অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। আমার প্রাক্তন শিক্ষার্থীদেরকে প্রত্যেক মাসে ডাটা খরচ প্রদান করতাম। 


আমার অন্যান্য সহকর্মীদেরকেও অনুরোধ করেছি, উৎসাহিত করেছি Helping Team গঠন করতে। তারাও এইভাবে হেলপিং টিম গঠন করে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শ্রেণির বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে ক্লাসে যুক্ত করতে সক্ষম হয়। এভাবেই এগিয়ে চলতে থাকে আমাদের অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম। এছাড়া আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তের ১৩ জন শিক্ষককে নিয়ে “ বাংলাদেশ আলোকিত প্রাথমিক শিক্ষক” নামে একটি পেইজ তৈরি করি। এই পেজের মাধ্যমেই করোনাকালীন সর্বপ্রথম প্রাথমিকের লাইভ ক্লাস শুরু হয়। আমার গুগল মিট ক্লাসেও আমার নিজের বিদ্যালয় ছাড়াও অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হত। বাংলাদেশ আলোকিত প্রাথমিক শিক্ষক পেইজের মাধ্যমে আমরা শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে বিভিন্ন ওয়েবিনার এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। করোনাকালীন এইসব ওয়েবিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে উজ্জীবিত করতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে।


আমার বিদ্যালয়ের শিশুরা গুগল মিট ক্লাসে প্রয়োজন মত মাইক্রোফোন অফ অন করতে পারতো, সাবলীল ভাবে কথা বলতে পারতো, আমার ভীষন ভালো লাগতো তখন! তো, প্রত্যন্ত এলাকার অসচেতন অভিভাবকদের সন্তানদেরকে আমরা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে শিখিয়েছি, অনলাইন ক্লাসে যুক্ত করতে পেরেছি এটাই ছিল আমার উদ্ভাবনী আইডিয়া Helping Team এর সার্থকতা। আমি স্বপ্ন দেখি যে, আমার শিক্ষার্থীরা আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে সগৌরবে সমুজ্জ্বল করবে। আমার স্বপ্ন সার্থক হবে তখনই যখন আমার শিক্ষার্থীরা ভালো মানুষ হিসাবে উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্বুদ্ধ হবে।  


আরো দেখুন