সহকারী শিক্ষক
২০ মার্চ, ২০২১ ০৪:০৮ অপরাহ্ণ
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ ও চর্যাপদ
বাংলা
সাহিত্যের প্রাচীন যুগ ও চর্যাপদ
১। বাংলা সাহিত্যের সময়কালকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়
–
(ক)প্রাচীন যুগ (৬৫০-১২০০ খ্রি., শহীদুল্লাহর মতে) ,
তবে সুনীতিকুমারের মতে, ৯৫০-১২০০খ্রি.।দুটো থাকলে ৬৫০-১২০০খ্রি.।
(খ)মধ্যযুগ (১২০১-১৮০০খ্রি.) ও
(গ)আধুনিক যুগ (১৮০১-বর্তমান পর্যন্ত)
২। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের একমাত্র নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন বা বাংলা
সাহিত্যের ইতিহাসের প্রথম গ্রন্থ বা বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন হল –
চর্যাপদ।
৩। ১৮৮২ সালে রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র তাঁর ‘Sanskrit Buddhist Literature in
Nepal’ গ্রন্থে নেপালে বৌদ্ধতান্ত্রিক সাহিত্যের কথা প্রকাশ করেন।
৪। ১৯০৭ সালে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের রয়েল লাইব্রেরি
থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন।
৫। ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ থেকে চর্যাপদ, ডাকার্ণব ও দোহাকোষ (সরহপাদের
দোহা ও কৃষ্ণপাদের দোহা) -এই তিনটি গ্রন্থ ‘হাজার বছরের পুরাণ বাংলা ভাষায়
বৌদ্ধগান ও দোহা’নামে প্রকাশিত হয়।
৬। ১৯২৬ সালে ড.সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় চর্যাপদকে সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় রচিত
বলে প্রমাণ করেন।
৭। ১৯২৭ সালে ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ সর্বপ্রথম চর্যাপদের ধর্মমত নিয়ে আলোচনা করেন।
তাঁর মতে চর্যাপদের ভাষা বঙ্গকামরূপী এবং এতে বোদ্ধধর্মের সাধনতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা
করা হয়েছে।
অতএব, বলা যায়, চর্যাপদ একটি ধর্মীয় সাহিত্য এবং এতে বৌদ্ধধর্মের কথা ব্যক্ত
হয়েছে।
৮। চর্যাপদের পদসংখ্যা ৫১ টি( সুকুমার সেনের মতে)। কিন্তু শহীদুল্লাহর
মতে,চর্যাপদের পদসংখ্যা ৫০ টি। পরীক্ষার অপশনে দুটো থাকলে ৫১ টি উত্তর করতে হবে।
৯। তবে কয়েকটি পাতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সাড়ে ৪৬ টি পদ আবিষ্কৃত হয়েছে। ২৩ এর অর্ধেক,
২৪,২৫ ও ৪৮ সংখ্যক পদ পাওয়া যায়নি।
১০।চর্যাপদের রচয়িতা হলেন ২৪ জন (সুকুমার সেনের মতে)।কিন্তু শহীদুল্লাহর
মতে,চর্যাপদের রচয়িতা হলেন ২৩ জন।পরীক্ষার অপশনে দুটো থাকলে ২৪ জন উত্তর করতে হবে।
১১ চর্যাপদের ২৪ জন কবি সকলেই বোদ্ধধর্মাবলম্বী। তাই এর আলোচ্য বিষয়ও
বৌদ্ধধর্মের সহজিয়া সাধনতত্ত্ব।
১২। চর্যাপদ মূলত একটি গানের সংকলন।চর্যাপদের এসব গানের মূল বিষয় বোদ্ধধর্ম।
১৩। চর্যাপদের প্রথম পদের রচয়িতা – লুইপা।
বাংলা সাহিত্যের প্রথম গ্রন্থ যেহেতু চর্যাপদ
এবং এই গ্রন্থের ৫১ টি পদের প্রথম পদের রচয়িতা
যেহেতু লুইপা তাই লুইপাকে বাংলা সাহিত্যের আদি কবি
বলা হয়।
তবে শহীদুল্লাহর মতে লুইপার গুরু হলেন – শবরপা।
অর্থাৎ শহীদুল্লাহর মতে, প্রাচীন কবি শবরপা।
১৪। চর্যাপদের সবচেয়ে বেশি পদের রচয়িতা কাহ্নপা।
তিনি ১৩ টি পদ লিখেছেন।
তবে তাঁর রচিত ২৪ সংখ্যক পদটি পাওয়া না যাওয়ায়
তাঁর আবিষ্কৃত পদসংখ্যা হল ১২ টি।
১৫। নিজেকে বাঙালি বলে দাবি করেছেন ভুসুকুপা।
ভুসুকুপা তাঁর রচিত ৪৯সংখ্যক পদের একটি লাইনে বলেছেন – ‘আজি ভুসুকু বঙ্গালী
ভইলী’। তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক(৮ টি ) পদের রচয়িতা।
ভুসুকুপা রচিত ২৩ সংখ্যক পদের অর্ধেক পাওয়া
যায়নি।তাই বলা তাঁর আবিষ্কৃত পদসংখ্যা সাড়ে ৭ টি।
১৬। চর্যাপদের মহিলা কবি হিসেবে অনুমান/ধারণা
করা হয় কুক্কুরীপাকে।
তবে বাংলা সাহিত্যের প্রথম মহিলা কবি
চন্দ্রাবতী। কারণ, কুক্কুরীপা মহিলা কবি ছিলেন তা আমাদের অনুমান কিন্তু নিশ্চিত
করে বলা যায় না।
১৭। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে চর্যাপদের ভাষার নাম
– সন্ধ্যা ভাষা বা আলো- আঁধারি ভাষা।
১৮। বিজয়চন্দ্র মজুমদারের মতে চর্যাপদের
ভাষার নাম – খিচুড়ি ভাষা।
১৯।চর্যাপদের ভাষায় পশ্চিম বাংলার প্রাচীন কথ্য
ভাষার নমুনা পরিলক্ষিত হয়।
২০। চর্যাপদের সংস্কৃত ভাষার টীকা লিখেছেন
মুনিদত্ত।
২১। ১৯৩৮ সালে তিব্বতি ভাষার টীকা আবিষ্কার করেন
প্রবোধচন্দ্র বাগচী।
২২। চর্যাপদ পাল শাসনামলে রচিত হয়েছে।
২৩। চর্যাপদ মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।
২৪। চর্যাপদে ৬ টি প্রবাদ বাক্য পাওয়া যায়।
২৫। চর্যাপদের বয়স আনুমানিক ১০০০ বছর।
২৬। চর্যাপদের রচনাকাল সপ্তম থেকে দ্বাদশ
শতাব্দী।তা না থাকলে দশম থেকে চতুর্দশ শতাব্দী।
২৭। সুনীতিকুমার ১৯২৬ সালে ‘Origin and
Development of the Bengali Language'(ODBL) গ্রন্থ রচনা করে চর্যাপদকে বাংলা
সাহিত্যের বলে প্রমাণ করেন।
২৮। চর্যাপদ ছাড়াও ডাক ও খনার বচনকে বাংলা
সাহিত্যের প্রাচীন যুগের সৃষ্টি বলে বিবেচনা করা হয়। তবে এগুলো যে রূপে সৃষ্টি
হয়েছিল তার কোন লিখিত নিদর্শন নেই এবং তা মুখে মুখে প্রচলিত থাকার ফলে তার ভাষাও
হয়ে পড়েছে আধুনিক যুগের মত।
২৯। ছড়া জাতীয় এসব রচনায় এদেশের আবহাওয়া ও কৃষি
সম্পর্কিত বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতার রূপায়ণ ঘটেছে।
তথ্য সূত্রঃbcscorner.com