প্রাণের বাতায়ন, করলো স্বপ্ন পূরণ
আমি তাহমিনা আফরোজ, আমি একজন শিক্ষক। ২০০৬ সাল থেকে শুরু হয়েছিল আমার শিক্ষকতার পেশা। শিক্ষক হিসেবে প্রথম যোগদান করি সুলতান খান কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, আজও কর্মরত আছি একই বিদ্যালয়ে।
আমি স্বপ্ন দেখি ও স্বপ্ন দেখাতে পছন্দ করি। এ মহান পেশা আমাকে শিখিয়েছে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে। তবে শিক্ষকতা পেশার আগেই পেয়েছি স্বামী-সংসার, হয়েছি মা। সব কিছু সামলিয়ে শিক্ষকতাকে আপন করে নিয়েছি। একজন জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে আমার প্রধান শিক্ষক ও সহকর্মীদের কাছ থেকে পেয়েছি স্নেহ ও ভালোবাসা। বিদ্যালয়ের সকল কাজ সঠিকভাবে পালন করার প্রতি প্রাধান্য দিয়েছি।
শিক্ষকতা পেশায় বড় পরিবর্তন এলো ২০১৫ সালে আইসিটি ইন এডুকেশন প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর। কেননা এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই জানতে পারি শিক্ষকদের সব চেয়ে বড় প্লাটফর্ম শিক্ষক বাতায়ন সম্পর্কে। শিক্ষক বাতায়নের আকাশে সেরা কন্টেন্ট নির্মাতাদের উড়তে দেখে আমার মনে স্বপ্ন তৈরি হল। আমিও কি বাতায়নের আকাশে উড়তে পারবো? যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, জয় আসবেই। তাই বিদ্যালয়ে কোন ল্যাপটপ না থাকলেও স্বপ্ন পূরণের জন্য নিজে একটি ল্যাপটপ কিনে নিলাম।
শুরু হল নির্ঘুম রাত জেগে কন্টেন্ট তৈরি করা ও বাতায়নে নিয়মিত আপলোড করা। মানসম্মত কন্টেন্ট তৈরি করে ২০১৯ সালের ৪ অক্টোবর ‘সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা’ নির্বাচিত হই। আলহামদুলিল্লাহ প্রাণের প্লাটফর্ম বাতায়নের আকাশে উড়তে পারার স্বপ্ন পূরণ হলো।
অত:পর শিক্ষক বাতায়নের নিয়মিত শর্তগুলো পূরণ করে কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ এটুআই কর্তৃক ২০২০ সালে নির্বাচিত হই মাদারীপুর জেলার ‘আইসিটি জেলা এম্বাসেডর শিক্ষক’ হিসেবে।
ওই একই সালে (২০২০ সালে)
শিক্ষক বাতায়ন নতুন একটি ক্যাটাগরি যুক্ত করে, যার নাম সেরা উদ্ভাবক। নতুন নতুন উদ্ভাবনী
ধারণায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান কৌশলগুলো ভিডিও ধারণ করে আপলোড করি বাতায়নে। আলহামদুলিল্লাহ
২০২০ সালের ১ এপ্রিল ‘সেরা উদ্ভাবক’ হওয়ার
গৌরব অর্জন করি।
শিক্ষক বাতায়ন দিয়েছে কাজ করার অনুপ্রেরণা। আমার যত অর্জন সব কিছুর পেছনে শিক্ষক বাতায়নের অবদান রয়েছে। কেননা এ প্লাটফর্মের মাধ্যমেই আমি নিজেকে প্রকাশিত করতে পেরেছি সারা দেশের মেধাবী ও গুণী শিক্ষকদের মাঝে।
ঢাকা বিভাগের আইসিটি ফর এডুকেশন জেলা এম্বাসেডর হিসেবে করোনাকালীন শিখন ঘাটতি দূর করার জন্য অনলাইন প্লাটফর্মে ক্লাস নিতে শুরু করি। প্রথমে নিজের আইডিতে ক্লাস নিতে শুরু করলেও পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন অনলাইন পেইজ সহ ‘ঘরে বসে শিখি’ অনলাইন ফেইচবুক পেইজে নিয়মিত পাঠদান করি। তাই এটুআই ও ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক মহোদয় কর্তৃক ‘শিক্ষা করোনা যোদ্ধা’র সম্মাননা পাই।
পরিশ্রম কখনো বৃথা যায় না । সততা, ন্যায়নিষ্ঠা ও মননশীল চিন্তা-চেতনার বিকাশ একদিন প্রকাশিত হবেই। CSSR, UNICEF এর আওতায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কর্তৃক সারাদেশ থেকে ছেঁকে তুলে বাছাই করা শিক্ষকদের মধ্যে থেকে অন্যান্য মেধাবী শিক্ষকদের মাঝে আমারও সুযোগ হয়েছিল রেডিও টেলিভিশনে স্ক্রিপ্ট লেখা ও পাঠদান করার কাজে। সেই সুবাদে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে বাংলা বিষয়ে ২৪ টি ক্লাস রেকোর্ড করার সুযোগ পেয়েছি।
‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ শীর্ষক কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষা ও চাকুরীক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরীরিতে ‘শ্রেষ্ঠ জয়িতা’ হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করি।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের সাথে , আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম ও প্রজেক্ট কালচারাল এক্টিভিটিজ, শেয়ারিং প্লাটফর্ম কানেকটিং ক্লাশরুমের মাধ্যমে সফলতার স্বীকৃতিস্বরুপ ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে অর্জন করি International School Award (ISA). যা আমাকে ISA co-ordinator এর সম্মাননা দিয়েছে।
আমার লেখা কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। মাদারীপুর জেলার মান্যবর জেলা প্রশাসক মহোদয় কবিতা উৎসবের মাধ্যমে সকল কবিদের সাথে আমাকেও ‘কবি ও সাহিত্যিক’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
একজন শিক্ষক হিসেবে নিজের কাজকে তুলে ধরবার জন্য ২০২৩ সালে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক হওয়ার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করি এবং জেলার ‘শ্রেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক, হওয়ার গৌরব অর্জন করি।
নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে দেখবার জন্য নয়, আমি এ কাজগুলো করেছি নিজের দ্বায়িত্ববোধ থেকে, শিক্ষকতা পেশাকে ভালোবেসে। এ পেশা যেন শ্রদ্ধা ও সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে। শিক্ষকতার মত এ মহান পেশাও একজন মানুষকে খ্যাতির উচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে পারে।
তাই, শিক্ষক বাতায়নের প্রতি
অশেষ কৃতজ্ঞতা। সকল শিক্ষকদের প্রাণের স্পন্দন শিক্ষক বাতায়ন আমাকে কাজ করার পথ দেখিয়েছে,
স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে, স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করেছে। কৃতজ্ঞ আমার পরিবারের
প্রতি, পরিবার আমাকে সর্বদা উৎসাহ ও সাহস দিয়েছে। কৃতজ্ঞ সকল শিক্ষক, সহকর্মী, বন্ধু,
ভাই-বোন ও আমার শুভাকাংক্ষীদের প্রতি, যারা সুন্দর ও গঠনমূলক পরামর্শ দিয়েছেন।
শুকরিয়া মহান আল্লাহতায়াল
উপর, যিনি আমাকে কাজ করবার শক্তি ও সামর্থ্য দান করেছেন।
তাহমিনা আফরোজ
সহকারী শিক্ষক
সুলতান খান কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
শিবচর, মাদারীপুর ।