
আইসিটি প্রতিবন্ধকতা থেকে দেশসেরা অনলাইন পারফর্মার

আমি একজন সাধারণ শিক্ষক। কিন্তু আজ যে অবস্থানে আছি, তার পেছনে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজ, এটুআই-এর উদ্যোগ, শিক্ষক বাতায়ন, মুক্তপাঠ এবং কিশোর বাতায়নের অবিচল অবদান। এসব প্ল্যাটফর্ম আমাকে শুধু শেখার সুযোগই দেয়নি, বরং দেশের সেরা শিক্ষক ও প্রশিক্ষকদের সান্নিধ্যে আসতে পেরেছি। তাদের থেকে পাওয়া জ্ঞান, দক্ষতা আর আত্মবিশ্বাস আমাকে বারবার যাচাই করেছে, পরিণত করেছে এক অনন্য অভিজ্ঞতার শিক্ষক হিসেবে। আমার প্রতিটি পদক্ষেপে পাশে ছিলেন প্রিয় অধ্যক্ষ স্যার, উপাধ্যক্ষ স্যার এবং সহকর্মী ও শিক্ষক বাতায়নের সহকর্মীবৃন্দ। তাদের প্রতিটি উৎসাহ আমাকে সাহস জুগিয়েছে, সঠিক পথে চালিত করেছে এবং নিজের উপর আস্থা রাখতে শিখিয়েছে। আজ আমি গর্বিত যে, আমি তাদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ICT (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি) প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে সেরা অনলাইন পারফর্মার এবং আন্তর্জাতিক ICT সনদ অর্জন করতে পেরেছি।
শিক্ষক বাতায়ন—তোমাকে ধন্যবাদ। তুমি আমার শেখার প্রতিটি ধাপে হাত ধরে পথ দেখিয়েছো। তুমি আমার জন্য অনুপ্রেরণার শাশ্বত উৎস হয়েই থেকেছো। এটু আই—তোমার প্রতিও কৃতজ্ঞতা; তোমার মাধ্যমে আমি নতুনভাবে নিজেকে গড়ে তোলার সুযোগ পেয়েছি। আর কিশোর বাতায়ন—তুমিই আমাকে শিক্ষার্থীদের, অর্থাৎ নতুন প্রজন্মের সাথে সংযুক্ত হওয়ার সেতুবন্ধন দিয়েছো।
আমার জীবনের যাত্রা হলো একজন সাধারণ গ্রামের ছেলে থেকে সফল শিক্ষক, প্রশিক্ষক এবং আন্তর্জাতিক মানের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠার এক অবিশ্বাস্য গল্প। এই অর্জন শুধু আমার জন্য নয়, বরং দেশের অন্যান্য সাধারণ শিক্ষকদের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস।
এক নজরে আমার সাফল্যের মাইলফলক:
শিক্ষকতা পেশায় আগমন: হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শা গ্রামের ছেলে হয়েও শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে আমি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছি। ২০০৩ সালে আমানতছফা বদরুন্নেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করি। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ নৌবাহিনী কলেজ চট্টগ্রামে প্রভাষক হিসাববিজ্ঞান পদে যোগদান করি এবং বর্তমানে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছি।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি: শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, সাপ্তাহিক সেরা কন্টেন্ট নির্মাতা, জেলা অ্যাম্বাসেডর, দেশসেরা অনলাইন পারফর্মারসহ বিভিন্ন পুরস্কার ও স্বীকৃতি অর্জন করেছি।
কোভিড-১৯ মহামারীতে অবদান: মহামারী চলাকালে অনলাইন শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করায় এটু আই কর্তৃক সেরা অনলাইন পারফর্মার মনোনীত হয়েছি।
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ ২০২৪-এ জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক (দ্বিতীয়) নির্বাচিত হয়ে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে আন্তর্জাতিক সনদ অর্জন করেছি।
নতুন প্রজন্মের জন্য কাজ: দীক্ষা দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করেছি, যেখানে মুক্তপাঠে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অনেকেই স্বাবলম্বী হতে পারবেন।
আমার সফলতার পেছনের কারণসমূহ:
অধ্যবসায় ও পরিশ্রম: আমি কখনো হাল ছাড়িনি এবং লক্ষ্যে পৌঁছাতে অক্লান্ত চেষ্টা ও পরিশ্রম করেছি।
জ্ঞান ও দক্ষতার উন্নতি: সবসময় নতুন কিছু শিখতে আগ্রহী ছিলাম, এবং নিজেকে যোগ্য করে তুলতে মুক্তপাঠের বিভিন্ন অনলাইন কোর্স সম্পন্ন করেছি, যার মাধ্যমে প্রায় ১৪০টি সনদ অর্জন করেছি।
অন্যদের প্রতি সহযোগিতা: অন্যদের সাহায্য করতে সদা প্রস্তুত থেকেছি, কারণ আমি বিশ্বাস করি সহযোগিতার মাধ্যমেই আরও বেশি শেখা যায়।
নতুন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ: কখনোই চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পাইনি বরং সেটাই আমাকে আরও শক্তিশালী করেছে।
একজন সাধারণ গ্রামের ছেলের আইসিটি প্রতিবন্ধী থেকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন শুধুমাত্র - দৃঢ় সংকল্প, অধ্যবসায় এবং সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে সকল বাধা অতিক্রম করা সম্ভব । আমার জীবনের এই গল্প প্রমাণ করে, স্বপ্ন দেখা এবং তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করলে সফলতা অবশ্যই আসবে। আমি যেমন অন্যজনকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি, আমি চাই আমার এই গল্পও অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হোক। দেশের জন্য কাজ করা, নিজের মেধা আর পরিশ্রম দিয়ে নিজেকে তৈরি করা এবং সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছানো সম্ভব, শুধু দরকার আত্মবিশ্বাস ও অধ্যবসায়।