
প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে আসা সেই ছেলেটি আজ ‘সেরা শিক্ষক’

আমি অভিজিৎ কুমার মণ্ডল, সহকারী শিক্ষক (বাংলা), বঙ্গবাসী মাধ্যমিক বিদ্যালয়,খালিশপুর, খুলনা। ২০০৩ সালে এস এস সি, ২০০৫ সালে এইচ এস সি, ২০০৯ সালে সরকারি ব্রজলাল কলেজ থেকে বাংলায় (সম্মান), ২০১০ সালে বাংলায় মাস্টার্স পাশ করে ২০১৪ সালে বিএড পাশ করে ২০১৫ সালে মাধ্যমিক স্তরে একজন সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করি।
বিদ্যালয়ে একদিন প্রধান শিক্ষকের মাল্টিমিয়া ক্লাস রুমে ক্লাস দেখে আমি উদ্বুদ্ধ হলাম। কোনদিন কম্পিউটার চালাতে পারবো স্বপ্নেও ভাবিনি! সেই আমি বিদ্যালয় থেকে ১ বছরের লোন নিয়ে ল্যাপটপ কিনে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়ার অভিপ্রায়ে কনটেন্টের সন্ধানে শিক্ষক বাতায়ন এর খবর পাই। ২০১৬ সালে শিক্ষক বাতায়নের সদস্য হই। সেই থেকে আমার যাত্রা শুরু।
এরপর সিলেটে হাওড় পাড়ের শিক্ষক সম্মেলনে হাজারো গুণী শিক্ষকদের সাথে আমিও অংশগ্রহন করি এবং আরও অনুপ্রানীত হই। প্রতিদিন শিক্ষক বাতায়ন থেকে ক্লাস ডাউনলোড করে ছাত্রছাত্রীদের ক্লাসে আনন্দের সাথে পাঠদান করতে থাকি। তখন ১৫ দিন পর পর সেরা কনটেন্ট নির্মাতা নির্বাচিত হতো। আমার মনেও প্রবল ইচ্ছা জাগলো, যদি আমি বাতায়নের আকাশে উড়তে পারতাম! তখন যারা একটু কাজ পারেন, তাদের কাছে ছুটে গেলাম কাজ শেখার জন্য। অনেকে খুব বিরক্তবোধ করতে লাগলো তবুও হাল ছাড়লাম না আমি।
তারপর থেকে আর আমাকে পিছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। নিজে কনটেন্ট তৈরি করতে থাকি, এ্যানিমেশন দিলে যখন লেখা বা ছবি উড়ে যেত তখন নিজের আনন্দের সীমা থাকতো নাহ্ । রাতে কনটেন্ট তৈরি করতে বসলে, কখন যে ভোর হয়ে গেছে নিজেও জানতাম না। তারপর শিক্ষক বাতায়নে প্রতিনিয়ত ভিজিট করে নিজের তৈরিকৃত কনটেন্ট আপলোড করতে থাকি।
৯ অক্টোবর ২০১৯, খুলনা জেলা অ্যাম্বাসেডর শিক্ষক হিসেবে আমার নাম আর্কাইভে দেখতে পাই। শিক্ষক বাতায়নের এই সেই অর্জন আমাকে যথেষ্ট অনুপ্রাণিত হই। ধীরে ধীরে খুলনা জেলাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার শিক্ষকদের সাথে আমার সখ্যতা গড়ে উঠতে লাগলো।
অবশেষে ২০২০ সালের ১ই ডিসেম্বর শিক্ষকতা জীবনে আমার ২য় অর্জন, সপ্তাহের সেরা কন্টেন্ট নির্বাচিত হই। তারপর শিক্ষক বাতায়নের মাধ্যমেই পরিচিত শিক্ষকদের সাথে ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটা ওয়ার্কশপে যোগদান করি এবং এখানেও সফলতা অর্জন করি।অর্জন করি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যাওয়ার্ড।
২০১৯ সালে এটুআই কর্তৃক আয়োজিত হাওড় পাড়ের শিক্ষক সম্মেলনে অংশ নেই । ২০২০ সালে সাইবার বুলিং এর একটি ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করি। কোভিড-১৯ চলাকালে বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ থাকলেও আমি অনলাইনে পাঠদান করি। তখন থেকে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসটা আরও বাড়তে শুরু করলো। করোনাকালে জুম ও গুগল মিট ব্যবহার করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে বিভিন্ন ওয়েবিনার এবং ক্লাস পরিচালনা করি। অনলাইন ক্লাসে বিশেষ অবদানের জন্য বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে পুরষ্কার লাভ করি। জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে ২০২২ ও ২০২৩, ২০২৪ সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষক নির্বাচিত হই।
২০২১ সালে শিক্ষক দিবসে ব্লেন্ডেড লার্নিং বিষয়ের উপর ভিডিও কনটেন্ট প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সারাদেশে ৯ম স্থান অর্জন করে, মাউশি’র ডিজি মহোদয়ের হাত থেকে সম্মাননা পুরস্কার গ্রহণ করেছিলাম। শিক্ষক বাতায়নের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ। শিক্ষক বাতায়নের কল্যাণে প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে এসেছে আমার মত এমন হাজারো শিক্ষক।