Loading..

ব্লগ

রিসেট

৩০ নভেম্বর, ২০২৩ ০৬:৫২ অপরাহ্ণ

রুপান্তর শিক্ষায় নতুন কারিকুলামের সংক্ষিপ্ত ধারণা

রুপান্তর শিক্ষায় নতুন কারিকুলামের সংক্ষিপ্ত ধারণা

রুপান্তর শিক্ষায় নতুন কারিকুলামের সংক্ষিপ্ত ধারণা:

এ পদ্ধতিতে চারটি ধাপ রয়েছে -

১. প্রেক্ষাপট নির্ভর শিখন

২. প্রতিফলনমূলক পর্যবেক্ষণ

৩. বিমূর্ত ধারনায়ন

৪. সক্রিয় পরীক্ষণ

অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিখন প্রক্রিয়াকে Experiencial Learning অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন পদ্ধতি বলে।

১) Concrete Experience-প্রেক্ষাপট নির্ভর অভিজ্ঞতা :

যে বিষয়ে যোগ্যতা অর্জন করানো হবে সে বিষয়ে শিক্ষক একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা (Concrete Experience) এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যাবেন। এটি হতে পারে শিক্ষার্থীর নিজের অর্জিত বাস্তব অভিজ্ঞতা বা চারপাশের প্রত্যক্ষ ঘটনাবলি।  শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে ডিজিটাল কন্টেন্ট বা অভিনয়ের মাধ্যমেও  বাস্তব উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে কোনো একটি অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে যেতে পারেন।

প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কোনো একটা বিষয়  কিছু পূর্বজ্ঞান বা পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকে৷ যদি কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না-ও থাকে তবে কোনো একটি বিষয় দেখার পর সেটি উপলব্ধি ও অনুধাবন করে থাকে৷

যেমন- সপ্তম শ্রেণির  A dream School এ  School সম্পর্কে সকল শিক্ষার্থীরই পূর্বে অভিজ্ঞতা/জ্ঞান থাকে৷ যদি কোনো অভিজ্ঞতাই না থেকে তবে School এর ছবিটি দেখার পরই তাদের মনে স্কুল সম্পর্কে একটা অভিজ্ঞতা/জ্ঞান সঞ্চার হয়৷ এটিকে বলা হয় Concrete Experience.

২. Reflecting Observation (প্রতিফলনমূলক পর্যবেক্ষণ) -পূর্ব অভিজ্ঞতাকে পর্যবেক্ষণ ও প্রতিফলন করে শেখার যে ধাপ সূচনা হয় তা হলো Reflecting Observation.

শিক্ষার্থীকে কিছু সময়ের জন্য অর্জিত অভিজ্ঞতার বিষয়টি নিয়ে ভাবার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।

যেমন- A Dream School এ শিক্ষার্থী School এর ছবিটা দেখার পর তার মনে স্কুলের চিত্র, পরিবেশ ও আনুসাঙ্গিক বিষয়ে তার মনে আরেকটা স্কুলের চিত্র প্রতিফলন হয়৷ সেটি সে শিক্ষার্থীর আরেকটি স্কুলে ছবি ফুটে উঠে৷ কী হতে পারে তার Dream স্কুল তার সে ব্যাপারে ভাবনার সৃষ্টি হয়।

৩. Abstract Concept : বিমূর্ত ধারণায়ন:

এ পর্যায়ে শিক্ষক প্রয়োজনীয় তথ্য ও তত্ত্ব দিয়ে এবং সহায়ক উপকরণের সাহায্যে শিক্ষার্থীর ভাবনাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিবেন।

যেমন-A Dream School সম্পর্কে শিক্ষার্থীর মনে যে চিত্র গেথেঁছিল সেরকম একটি স্কুলের ছবি আকঁতে গিয়ে শিক্ষার্থী তার দেখা পূর্বের ছবির কথা বা পূর্বের অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ে এবং তার ব্রেইন থেকে সে ছবিটি তার চোখে বারবার প্রতিফলিত হয় এবং সে আরেকটি ছবি আঁকার সক্ষমতা লাভে করে৷

৪. Active Experimentation : সক্রিয় পরীক্ষণ: অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন প্রক্রিয়ার সর্বশেষ ধাপে শিক্ষক বাস্তব কাজের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর শিখনকে প্রয়োগ করার সুযোগ তৈরি করে দিবেন।এ পর্যায়ে শিক্ষার্থী তার অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান বাস্তবে প্রতিফলন ঘটিয়ে দেখায়৷

যেমন - সে  একটি ড্রিম স্কুলের চিত্র আঁকতে পারে৷ এখানে ছবিটি আকতে পারা হলো শিক্ষার্থীর Competency. তেমনি সকল শিখনের ক্ষেত্রে Experiencial Learning বাস্তবিক রূপ নেয়।

শুধু মুখস্ত করে জ্ঞানার্জন করে পরীক্ষা দিয়ে নির্দিষ্ট নম্বর অর্জন করে পাশ বা ফেইলের পরিবর্তে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের মধ্য দিয়ে কোন বিষয়ে যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

মূলত, নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিখন (Experiential Learning) প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কোন বিষয়ে যোগ্যতা অর্জন করবে।

অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শিখন চক্রের (Learning Cycle)  মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়। শিক্ষক এখানে কর্তৃত্বের পরিবর্তে সহায়ক (Facilitator) এর ভুমিকায় অবতীর্ণ হবেন।

চলমান চতুর্থ শিল্প বিপ্লব সম্পন্ন হলে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রায় ৬৫% কর্মজীবি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই চলমান শিল্প বিপ্লবে Artificial Intelegence বিকশিত হবে আর এর প্রভাব পড়বে মানুষের কর্মজীবনে তার পেশাগত পরিসরে।

এখন যে সব শিক্ষার্থী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে তাদের ভবিষ্যৎ কর্মক্ষেত্র কেমন হবে?

তাদের পেশা কী হবে? তা আজ অজানা।

তাই নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠদান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবর্তিত ভবিষ্যৎ পৃথিবীর সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য বর্তমান শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা ও অভিযোজন ক্ষমতা বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

আর ফলাফল আশা করা যায় আগামী ১০ বছর পর প্রতিফলিত হবে।

এই শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিযোগিতামূলক নয়,

বরং সহযোগিতামূলক ও মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক তৈরিতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।

শিক্ষার্থীর শিক্ষাটা বিষয়ভিত্তিক হওয়ার সাথে সাথে অভিজ্ঞতাভিত্তিক।

প্রচলিত নম্বর ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা চতুর্দশ শতক থেকে শুরু হয়ে প্রায় আট শতাব্দী ধরে চলে আসছিল।

দীর্ঘ সময় ধরে নম্বরভিত্তিক  শিক্ষাব্যবস্থা চলে আসছিল বলে নতুন শিক্ষাক্রম মেনে নিতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। আর হওয়াটাই স্বাভাবিক।

সবার পজিটিভ মানসিকতা ও আন্তরিকতা থাকলে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব।