সহকারী শিক্ষক
২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ১২:০০ অপরাহ্ণ
ইসলামের দৃষ্টিতে বৃক্ষরোপনের গুরুত্ব
চারদিকে যে তরুলতা, গাছগাছালি,
তৃণভূমি ও নদ-নদী, খালবিল- এগুলো নিয়েই আমাদের
প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশ সুস্থ হলে মানুষের জীবন সুস্থ থাকে। আর অসুস্থ
হলে মানুষের মধ্যে শুরু হয় অসুস্থতা। দেখা দেয় নানাবিধ রোগের প্রাদুর্ভাব।
পৃথিবীকে বসবাসযোগ্য রাখতে আমাদের চারদিকের পরিবেশে পর্যাপ্ত বৃক্ষলতা থাকতে হয়। এ
কারণে পরিবেশ রক্ষায় বনায়নের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। পর্যাপ্ত বনায়ন পরিবেশের
ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ বনায়নেরই গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম।
ইসলাম মানুষের আত্মিক বিপর্যয় ঠেকানোর পাশাপাশি পরিবেশগত বিপর্যয় রোধেও সদা তৎপর।
ইসলাম সর্বদাই মানুষের কল্যাণের চিন্তা করে। প্রাকৃতিক এ পরিবেশ আল্লাহতায়ালা
মানুষের কল্যাণেই সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং এর সংরক্ষণের কাজটা নিজেদের কল্যাণে
নিজেদেরই করতে হবে।
পরিবেশ রক্ষায় আল
কোরআনের নির্দেশনা
এই দুনিয়াতে আল্লাহ
যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, সবই মানুষের উপকারের জন্য। এর অন্যতম সৃষ্টি হলো,
গাছগাছালি, বৃক্ষলতা, তৃণভূমি।
মানুষের প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণ হিসেবে ফলবান বৃক্ষরাজি ও সবুজ-শ্যামল বনভূমি দ্বারা
একে সুশোভিত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছেন। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালায় পরিবেশ ও
প্রকৃতির ভারসাম্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। এই গাছগাছালি সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা বলেন,
‘তিনিই সেই সত্তা, যিনি আসমান থেকে পানি বর্ষণ
করেছেন; যা থেকে তোমাদের পানীয় ব্যবস্থা হয়। আর তা থেকেই
গজায় উদ্ভিদ, যা তোমরা চারণভূমির কাজে ব্যবহার করো।’
(সুরা নাহল : ১০)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘আমি
বিস্তৃত করেছি ভূমিকে এবং তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা। তাতে উৎপন্ন করেছি
চিত্তাকর্ষক সব ধরনের বৃক্ষলতা, গাছগাছালি। আকাশ থেকে আমি
বর্ষণ করি কল্যাণকর বৃষ্টি। এর দ্বারা আমি সৃষ্টি করি উদ্যান, পরিপক্ক শস্যরাজি এবং সমুন্নত খেজুর গাছ। যাতে আমার বান্দাদের
জীবিকাস্বরূপ গুচ্ছ গুচ্ছ খেজুর রয়েছে।’ (সুরা কাফ : ৭-১১)।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য
রক্ষায় বনায়ন
গাছগাছালি ও ঘন বন
বজ্রপাত প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। দেশে বজ্রপাতের আনুমানিক হার বৃদ্ধি
পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো, বনাঞ্চল থেকে বৃক্ষ উজাড় হয়ে বন শূন্য হয়ে যাচ্ছে।
বনায়ন ও বনভূমি বায়ুমণ্ডলের পরিবেশকে স্বাস্থ্যসম্মত রাখে। বৃক্ষলতা সময়মতো
বায়ুমণ্ডলকে পরিশুদ্ধ করে। পরিবেশকে প্রয়োজনে শীতল করে, আবার
উষ্ণও করে। অনুরূপভাবে যেখানে গাছপালা ও বনভূমি বেশি থাকে, সেখানে
বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হয়। ফলে ভূমিতে পানির পরিমাণ বেশি থাকে। সেখানে চাষাবাদ ও
ফল-ফসলের উৎকৃষ্টতা পাওয়া যায়। যে ভূমিতে গাছগাছালি বেশি হয়, সে স্থানের মাটিতে উর্বরতা ও ইউরিয়ার পরিমাণ বেশি থাকে। যা বৃক্ষলতা
গজানোর ক্ষেত্রে বেশ শক্তি সঞ্চার করে। ভূমির ক্ষয় রোধ করে। ঝড়-বৃষ্টি ও বন্যা
প্রতিরোধে সহায়তা করে। আমাদের জীব বৈচিত্র্যও বিপন্ন হবে বনাঞ্চল না থাকলে। তাই
সুস্থ জীবন, নিরাপদ প্রাণী বৈচিত্র্য বাঁচিয়ে রাখতে বনায়নের
বিকল্প নেই।
কোরআনে উল্লিখিত
যেসব গাছের কথা
কোরআনের বিভিন্ন
স্থানে খেজুর ও আঙ্গুর গাছের কথা এসেছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি
তোমাদের জন্য তা দ্বারা খেজুর ও আঙুরের বাগান সৃষ্টি করি।’ (সুরা
মোমিনুন : ১৯)। লাউগাছ বা লতাণ্ডপাতাযুক্ত গাছের আলোচনাও এসেছে কোরআনে কারিমে।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি তার কাছে লতাণ্ডপাতাযুক্ত গাছ উদ্গত
করেছি।’ (সুরা সাফফাত : ১৪৭)।
এভাবে জলপাই গাছ, কুলগাছের
আলোচনাও বিবৃত হয়েছে কোরআনে কারিমে। আল্লাহতায়ালা কৃষকদের সতর্ক করে বলেন,
‘তোমরা জমিতে যা বপন করো, এগুলো কী তোমরা
উদ্গত করো, নাকি আমি করি?’ (সুরা ওয়াকিয়া
: ৬৩-৬৪)।
পরিবেশের ভারসাম্য
রক্ষায় হাদিসের সতর্কবাণী
পরিবেশের ওপর গাছের
প্রভাব থাকায় রাসুল (সা.) গাছ কাটতে নিষেধ করেছেন। মানুষ যেমন গাছ থেকে
জীবনযাত্রার উপায়-উপকরণ খানা-খাদ্য সংগ্রহ করে, তেমনি হাজারো পশুপাখি বনের
ওপর নির্ভর করেই জীবন অতিবাহিত করে। বিনা প্রয়োজনে গাছ কাটাকে রাসুল (সা.)
নিরুৎসাহিত করেছেন। শুধু তাই নয়, যুদ্ধের ময়দানেও অমুসলিম
শত্রুদের গাছ কর্তন করতে নিষেধ করেছেন। মোতার যুদ্ধে সেনাপতিকে লক্ষ্য করে
বলেছিলেন, ‘তোমরা কোনো খেজুর বৃক্ষ জ্বালিয়ে দেবে না এবং
অকারণে কোনো বৃক্ষ কর্তন করবে না।’ অপর এক হাদিসে এসেছে,
তিনি এমন ঘৃণিত কর্ম সম্পাদনকারী সম্পর্কে বলেন, ‘যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে কাঁটাযুক্ত কোনো বৃক্ষ কর্তন করবে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।’ (সুনানে আবি
দাউদ : ৪৬২৬)।
দুর্যোগ ও
প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঠেকাতে বনায়ন
বাংলাদেশ একটি
সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল। এখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতি দুর্যোগপ্রবণ। প্রাকৃতিক
দুর্যোগের অনেক কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো, বনাঞ্চল উজাড় করা।
প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঠেকাতে বনভূমির অবদান অগ্রগামী। গাছগাছালি ছাড়া পরিবেশ দুর্যোগ
থেকে রক্ষা পাওয়া কঠিন। সুতরাং এ দেশের পরিবেশগত বিপর্যয় ঠেকাতে ব্যাপক বনাঞ্চলের
প্রয়োজন। আর বনাঞ্চল সৃষ্টিতে বনায়নের বিকল্প নেই। ইসলাম বনায়নের তাগিদ দিয়েছে।
আনাস ইবনে মালেক (রা.) সূত্রে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেন ‘যদি নিশ্চিতভাবে জানো যে, কেয়ামত এসে গেছে, তখনও তোমার হাতে যদি গাছের একটি
চারা থাকে, যা রোপণ করা যায়, তবে সেই
চারাটি রোপণ করে দেবে। (রোপণ করতে দেরি করবে না)।’ (মুসনাদে
আহমদ : ১২৯৮১)। এই হাদিসের আহ্বান সমাজে ছড়িয়ে সামাজিকভাবে বনায়ন ও কৃষি কর্মসূচি
জোরদার করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পরিবেশ রক্ষার শক্তিশালী উপায় হিসেবে
পর্যাপ্ত বনাঞ্চল সৃষ্টি করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। এখন যদি
ইসলামের এই গুরুত্বকে পাশ কাটিয়ে বনভূমি উজাড় করে নগরায়ন ও রাস্তা তৈরির নামে সারি
সারি গাছ কাটা হয়, তাহলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঠেকানো কঠিন হয়ে
পড়বে।
খাদ্যদ্রব ও ওষুধি
কাঁচামালের জন্য বনায়ন
বৃক্ষ, তরুলতা
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি মানুষের পরম সহায়তাকারী। গাছ পরিবেশের ভারসাম্য
রক্ষার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর বিশুদ্ধ বাতাস, গুরুত্বপূর্ণ
জ্বালানি, ঘরবাড়ি নির্মাণ সামগ্রী ও নানা ধরনের আসবাবপত্র
তৈরিতে কাজে লাগে। এ ছাড়া বিভিন্ন ওষুধ তৈরিতে গাছ কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
শুধু তাই নয়, বিভিন্ন রোগমুক্তিতে গাছের শিকড়, মূল, কাণ্ডের ব্যবহার দেখা যায়। শুধু গাছের ফলমূল ও
রসকষের ওপর নির্ভর করেই স্বতন্ত্র চিকিৎসাশাস্ত্র ‘আয়ুবের্দিক’
গড়ে উঠেছে। নববি যুগেও আয়ুবের্দিক তথা গাছগাছালি থেকে চিকিৎসা
উপাদান গ্রহণ করা হতো। বোখারি শরিফের এক বর্ণনায় আছে, উম্মু
কায়েস বিনতে মিহসান (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে
শুনেছি, ‘তোমরা ভারতীয় কস্টাসের (উদুল হিন্দ) ব্যবহার আবশ্যক
করে নাও। কেননা, এর মধ্যে সাত ধরনের আরোগ্য রয়েছে।
শ্বাসনালীর ব্যথায় এটা নাক দিয়ে (ড্রপ হিসেবে) নেওয়া যায়। নিউমোনিয়া দূর করার
জন্যও তা সেবন করা যায়।’ (বোখারি : ৫৩৬৮)।
ফলবান
বৃক্ষরোপণে ইসলামের নির্দেশনা
কিছু কিছু বৃক্ষ
শুধু পরিবেশগত কারণেই বাঁচিয়ে রাখা হয়, আর কিছু বৃক্ষ আছে যা
মানুষের খানাখাদ্য আহারের যোগান দেয়। এ কারণে ইসলাম ফলবান বৃক্ষরোপণে বেশ
গুরুত্বারোপ করেছেন। ফলদ বৃক্ষরোপণ ও ফসল ফলানোকে ইসলামে প্রবহমান দান তথা সদকায়ে
জারিয়া হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। রাসুল (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘যদি কোনো মুসলমান একটি গাছ রোপণ করে অথবা কোনো শস্য-বীজ অঙ্কুরিত করে এবং
তা থেকে কোনো মানুষ
কিংবা পাখি অথবা
পশু ভক্ষণ করে, তবে তা উৎপাদনকারীর জন্য সদকায়ে জারিয়া তথা
বিরতিহীন সওয়াব হবে।’ (বোখারি : ২১৯৫)
আরো দেখুন
সাইবার বুলিয়িং: সাইবার বুলিয়িং কী এবং এটি কীভাবে প্রতিরোধ করা যায় -ইউনিসেফ
সেরা কনটেন্ট নির্মাতা ক্যাটাগরিতে সংস্কার ও নীতিগত পরিবর্তন
শিক্ষক সহায়িকা মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড এবং ব্যবহার নির্দেশিকা
নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন, কোভিড-১৯ এর ফলে সৃষ্ট শিখন ঘাটতি পূরণ ও শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা।