Loading..

ব্লগ

রিসেট

২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০২:০৬ অপরাহ্ণ

স্মার্ট নাগরিক তৈরিতে নতুন কারিকুলাম

পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে মানুষ নিয়মিত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারণে বিশ্বব্যাপী মানুষের জীবন পদ্ধতি, সামাজিক কাঠামো, ব্যবসা-বানিজ্য, প্রচলিত পেশা ও মনোসামাজিক জগতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। এছাড়া প্রযুক্তিতে ও উৎপাদন পদ্ধতিতে স্বয়ংক্রিয়করণ, কর্মক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এ আই) প্রযুক্তিগুলো ব্যবহারের ফলে মানুষের প্রচলিত পেশা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে ও বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পদার্পনের লক্ষমাত্রা অর্জনে প্রয়োজন শিক্ষিত, দক্ষ, কর্মকুশল ও স্মার্ট সুনাগরিক তৈরি করা। আর স্মার্ট নাগরিক তৈরিতে প্রয়োজন একটি যুগোপযোগী, প্রযুক্তিভিত্তিক, বিজ্ঞান সম্মত ও সুপরিকল্পিত শিক্ষা ব্যবস্থা।

জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১ এর ভিত্তিতে প্রনীত জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ এমন একটি কারিকুলাম যা, দেশপ্রেমিক, দক্ষ, উৎপাদনমুখী, বিজ্ঞানমনস্ক, অভিযোজনে সক্ষম ও সচেতন সুনাগরিক তৈরিতে ভুমিকা রাখবে। এই কারিকুলামের বৈশিষ্ট্য হলো- এটি শিক্ষার্থী কেন্দ্রিক। বিষয় ও পাঠ্যপুস্তকের চাপ কম থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা হবে আনন্দময়। এটি মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে কার্যক্রম ভিত্তিক শিখনে গুরুত্ব প্রদান করে যার ফলে শিক্ষার্থী না বোঝে কোন কিছু মুখস্থ করার পরিবর্তে নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে যোগ্যতা বা পারদর্শিতা অর্জন করে যা তাকে একজন কর্মক্ষম নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সহযোগিতা করে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ এর আলোকে একজন শিক্ষার্থী প্রেক্ষাপটনির্ভর অভিজ্ঞতা তথা পূর্বে অর্জিত জ্ঞান, হাতে কলমে শিখন, প্রকল্প এবং সমস্যাভিত্তিক শিখন, পারস্পরিক সহযোগিতামূলক শিখন ও অনুসন্ধানভিত্তিক শিখন ইত্যাদির ধাপ সমূহ অতিক্রম করে প্রতিফলনমূলক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিমূর্ত ধারণায়ন তথা পঠিত বিষয়ে পর্যাপ্ত ধারনা লাভ করবে বা কাক্সিক্ষত দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে যে তাত্তি¡ক দিকগুলো রয়েছে সে বিষয়ে তার ধারনা বা ভাবনাকে পরিস্কার করবে। বিমূর্ত ধারণায়ন তথা তাত্তি¡ক জ্ঞান অর্জন করে সক্রিয় পরিক্ষণ তথা বাস্তব সমস্যার সমাধান করার যোগ্যতা অর্জনের মাধ্যমে শিখন-শিক্ষণ কার্যক্রমের চারটি ধাপ সমাপ্ত করবে। এই শিখন প্রক্রিয়ায় একজন শিক্ষক সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করবেন এবং সহযোগিতামূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ ও উদ্দিপন সৃষ্টিকারী ও গণতান্ত্রিক শিখন পরিবেশ নিশ্চিত করবেন।

নতুন শিক্ষাক্রমে একজন শিক্ষার্থী দুই ধরনের যোগ্যতা অর্জন করবে। প্রথম একজন শিক্ষার্থী তার পঠিত বিষয় সমূহে প্রত্যেক বিষয়ে আলাদা আলাদা যোগ্যতা অর্জন করবে। যেমন ষষ্ঠ শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী ইংরেজি বিষয়ে চারটি যোগ্যতা আবার বাংলা বিষয়ে আটটি যোগ্যতা অর্জন করবে। দ্বিতীয়ত একজন শিক্ষার্থী জ্ঞান তথা বিষয়ভিত্তিক ও আন্তঃবিষয়ক জ্ঞান; দক্ষতা তথা সুক্ষèচিন্তা, সমস্যা সমাধান, স্ব-ব্যস্থাপনা, মৌলিক ও ডিজিটাল স্বাক্ষরতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ইত্যাদি; দৃষ্টিভঙ্গি তথা নিজ সম্পর্কে ধারণা, ইতিবাচক সামাজিক রীতি সম্পর্কিত বিশ্বাস, আত্মবিশ্বাস ইত্যাদি ও মূল্যবোধ তথা শুদ্ধাচার, দেশপ্রেম, সংহতি, শ্রদ্ধা ইত্যাদির সমন¦য়ে সামষ্টিক যোগ্যতা অর্জন করবে।

নতুন কারিকুলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এতে বিষয়ভিত্তিক পারদর্শিতা মূল্যায়নের পাশাপাশি আচরণিক বিষয়সমূহও মূল্যায়নে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে শিক্ষিত, সুদক্ষ, কর্মকুশল, বিজ্ঞানমনস্ক ও বৈশ্বিক নাগরিক তৈরির পাশাপশি দেশপ্রেমিক, পরমতসহিষ্ণু, অন্যান্ন ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও স্মার্ট সুনাগরিক বিনির্মানে এই কারিকুলাম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে বলে প্রত্যাশা করছি।


সাঈদ আহাম্মেদ,

মাস্টার ট্রেইনার ও সহকারী শিক্ষক, আচারগাঁও ফাজিল মাদ্রসা, নান্দাইল, ময়মনসিংহ।